এই বইয়ের প্রবন্ধগুলোর অধিকাংশই লেখা হয়েছিল ১৯৯২ সালে, যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটেছে, এবং সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নেই বলে ধারণা প্রবল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। মূল প্রবন্ধটির নাম, 'লেনিন কেন জরুরী'। অন্য প্রবন্ধগুলোতেও পুঁজিবাদের দৌরাত্ম্যের কথাই বলা হয়েছে। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে; পাঁচটি নতুন লেখা যুক্ত করে দ্বিতীয় বর্ধিত সংস্করণটি প্রকাশিত হলো এমন এক সময়ে যখন লেনিনের কাজের প্রাসঙ্গিকতা ও আবশ্যকতা দু'টোই আগের চেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রবন্ধগুলোর মূল বক্তব্যটি হচ্ছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক, অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক, ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা। পুঁজিবাদ যে আজ চরম অবস্থায় পৌঁছে ফ্যাসিবাদী রূপ পরিগ্রহ করেছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই; এবং বিশ্বব্যাপী এই সচেতনতা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে ঘটনা যেদিকে চলছে সেদিকে চলতে দিলে মানুষের মনুষ্যত্বই কেবল নয়, তার বেঁচে থাকাটাই হুমকির মুখে পড়বে। সমাধান সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা বটে, তবে সেটা আপনা আপনি ঘটবে না; তার জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। এসব বক্তব্য লেখকের অন্যান্য বইতেও রয়েছে, বিশেষ ভাবেই পাওয়া যাবে বর্তমান প্রকাশনাটিতে। বক্তব্য তাত্ত্বিক ঠিকই, কিন্তু উপস্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন প্রসঙ্গের বিবেচনার মধ্য দিয়ে এবং হৃদয়গ্রাহী রূপে। লেখকের উদ্দেশ্য সমস্যা নিয়ে কেবল ভাবিত করা নয়, সমাধানে আগ্রহ বৃদ্ধি করাও বটে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জন্ম. ১৯৩৬) পেশায় সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অঙ্গীকারে লেখক। এই দুই সত্তার ভেতর হয়তো একটা দ্বন্দ্বও রয়েছে, তবে সেটা অবৈরী, মোটেই বৈরী স্বভাবের নয়। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, অবসরগ্রহণের পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রফেসর এমেরিটাস হিসাবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি শিক্ষা লাভ করেছেন রাজশাহী, কলকাতা, ঢাকা এবং ইংল্যান্ডের লীডস ও লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখার কাজের পাশাপাশি তিনি ‘নতুন দিগন্ত’ নামে সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। তার গ্ৰন্থসংখ্যা আশির কাছাকাছি। তার অকালপ্রয়াত স্ত্রী ড. নাজমা জেসমিন চৌধুরীও লিখতেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।