'ডিটেকটিভ স্টোরি' হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার নাম উল্লেখ না করা এক একনায়কতান্ত্রিক সরকারের গোয়েন্দা পুলিশের নিচু সারির সদস্য আন্তনিও মার্তেন্সের উত্তম পুরুষে বর্ণনা। উপন্যাসের শুরুতেই দেখা যাবে সেই একনায়কতান্ত্রিক সরকারের পতন হয়েছে এবং অনেক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্ত মার্ভেন্স মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছে। পাঠক সাধারণত মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার কোনো ভুক্তভোগীর দুর্দশার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধ এবং তাদের ওপর অবিচারের কাহিনি পড়ে অভ্যস্ত। কিন্তু 'ডিটেকটিভ স্টোরি'তে ইমরে কার্তেজ ঠিক তার উল্টো কাজটি করেছেন। পাঠকদের তিনি ছেড়ে দিয়েছেন এক দানবের মনের ভেতর। নোবেলজয়ী এই হাঙ্গেরীয় ঔপন্যাসিক পাঠকদের নিমগ্ন রেখেছেন এমন জঘন্য এক কাহিনিতে, যে কাহিনি বর্ণনা করছে নৈতিকতার বাইরে বাস করা মার্তেন্স। আন্তনিও মার্ভেন্স সদ্য উৎখাত হওয়া একনায়কতান্ত্রিক সরকারের গোয়েন্দা পুলিশের একজন নির্যাতনকারী ছিল। আবেদন করায় তাকে তার কারাকক্ষে লেখার জন্য কাগজ-কলম দেয়া হয়েছিল এবং সে তার স্মৃতিকথায় যা কিছু লিখেছিল তা হচ্ছে সন্দেহভাজন লোকদের ওপর তাদের কড়া নজরদারি, নির্যাতন এবং দেশের বিখ্যাত পিতা-পুত্র ফেডেরিগো ও এনরিকে সেলিনাসকে হত্যার কাহিনি, একনায়কতান্ত্রিক সরকারের প্রতি যাদের নীতিগত, কিন্তু নিষ্ক্রিয় বিরোধিতা গোয়েন্দা পুলিশকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল। উদ্দেশ্যহীন তরুণ এনরিকেকে একজন নাশকতাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে গোয়েন্দা পুলিশ তার ওপর চড়াও হয়। আর এর পরে তারা তার বাবাকে নিশানা করে। পরিকল্পনামতো তারা কাজে নামামাত্রই গোটা উদারনৈতিক শ্রেণিকে ধ্বংস করে দেয়া একনায়ততান্ত্রিক সরকারের জন্য যৌক্তিক হয়ে যায়। মার্তেন্সের মনের ভেতরে ঢুকে আমরা খারাপ জগতের যৌক্তিকতায় ঠাঁই নিই এবং সঙ্কটের সময় জড়তার সহজাত অন্তর্নিহিত বিপদ আঁচ করতে পারি। নৃশংসতার বিস্ফোরক উপন্যাস 'ডিটেকটিভ স্টোরি' এ সময়ের গুমরে ওঠা এক কান্না, যা আমাদের মনের ভেতর এক সতর্কঘণ্টা বাজিয়ে দেয়।