নাদিয়া ঢাকা ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী। থাকে রোকেয়া হলে। টিউশনি করে জোগাড় করে পড়াশুনার খরচ। কিন্তু হঠাৎ ছাত্রের পরিবার ঢাকার বাইরে চলে যাওয়ায় হাতছাড়া হয়ে যায় টিউশনিটি। মহাসংকটে পড়ে সে। শেষে সিদ্ধান্ত নেয়, খরচ চালাতে বাবার রেখে যাওযা প্রাইভেট গাড়িটা উবারে চালাবে। কিন্তু পদে পদে যে বিপত্তি! হঠাৎই নাদিয়ার কাছে একটা খাম আসে। সাথে একটা এক লক্ষ টাকার চেক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি এক অসহায় রোগীকে চেকের টাকা পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করা হয় চিঠিতে। টাকা পৌঁছে দেয়ার পর আসে আর একটা চেক, এবারে তিন লক্ষ টাকা। এবারও দরিদ্র এক রোগীকে অর্থ পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ থাকে চিঠিতে। কে টাকা পাঠাচ্ছে, কেন তাকে পাঠাচ্ছে, এই রহস্যের বেড়াজাল উন্মোচন করতে গিয়ে ‘ফাগুন বসন্তে’ নামক অদ্ভুত একটা নাম খুঁজে পায়। ফাগুন বসন্তের পিছনে কে বা কারা কাজ করছে তা অনুসন্ধানে বুঝতে পারে অজানা এক রহস্যে জড়িয়ে যাচ্ছে সে। এর মধ্যে নাদিয়া লক্ষ করে তাকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে কালো রঙের দুটো মোটরসাইকেল। সে যেখানেই যাচ্ছে সেখানেই থাকছে মোটরসাইকেল দুটো। অনুমান করে, মোটারসাইকেল আরোহীদের উদ্দেশ্য ভালো না। তারা হয়তো সুযোগ খুঁজছে ভয়ানক কোনো অঘটন ঘটানোর। নিজে সতর্ক হয়ে উঠে সে, কমিয়ে দেয় বাইরে যাওয়া। কিন্তু ততক্ষণে যে অনেক দেরি হয়ে গেছে! হঠাৎই সে বন্দি হয়ে পড়ে ভয়ানক এক চক্রের জালে। মুহূর্তের মধ্যে আলো থেকে অন্ধকারে হারিয়ে যেতে থাকে সে। এখন চাইলেও আর নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না। কারণ সে যে বন্দি, কেউ যে নেই তাকে উদ্ধার কিংবা রক্ষা করার। শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল নাদিয়ার জীবনে? আর ফাগুন বসন্তের রহস্যই বা কী? কেন ফাগুন বসন্তের লাখ লাখ টাকার চেক আসত নাদিয়ার কাছে? সত্যি মানব সেবার জন্য, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে?
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।