জীবনানন্দ বাদে রবীন্দ্র পরবর্তী বাংলা কবিতায় উল্লেখ্য করার মতো তেমন কোনো বিশেষ পরিবর্তন আসেনি; না ছন্দে, না ভাষায়, না ভাবের গভীরতায়। এটা হতে পারে অগ্রজদের অক্ষমতা বা উদাসীনতার কারণে। হাতে-গোনা কয়েকজন মাত্র রবীন্দ্র প্রভাব কাটিয়ে ওঠা বা উৎরানোর চেষ্টা করলেও তাঁদেরকে পুরোপুরি সফল বলা যায় না। কেননা এই উৎরানোর তাগিদে তাঁদেরকে কখনো কখনো দ্বারস্থ হতে হয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা বা অন্যান্য বিদেশি সাহিত্যের কাছে। এটা হতে পারে নিজেদের হীনমন্যতার কারণে বা নিজেদের প্রতি বিশ্বস্ততার অভাবের কারণে। বাংলা কবিতার এই দ্বীর্ঘ মন্দা সময় পার করার পর কবি দ্রাবিড় সৈকত এর ‘কুত্রাপি’ ছন্দ একটা আশার প্র্রদীপ জ্বালিয়েছে। না, এই ‘কুত্রাপি’ ছন্দের জন্য তাঁকে কারো কাছে দ্বারস্থ হতে হয়নি। সম্পূর্ণ নিজস্ব একটা স্টাইল, ছন্দের নিজস্ব গতিময়তা, অব্যবহৃত-পরিত্যক্ত-অপ্রচলিত শব্দের ব্যবহার,শতভাগ বাঙালিয়ানা, নতুন শব্দ ও শব্দবন্ধের প্রয়োগ এবং উপমা-অলঙ্কারের স্বতঃস্ফূর্ততা এ-সবকিছু মিলিয়ে ‘কুত্রাপি’ ছন্দকে আমাদের বাংলা কবিতার মৌলিক একটা ছন্দশৈলী বলা যেতে পারে। কুত্রাপির বৈশিষ্ট্যে তিনি বলেছেন, “অন্তমিল, আদ্যমিল, মধ্যমিল, ভাবগত মিল, অনুপ্রাস, যমক, উৎপ্রেক্ষার ভেতর দিয়ে ছন্দহীনতায় গা ভাসিয়ে আবার শৃঙ্খলায় ফিরে আসা। ছন্দের নিয়মহীনতার এই নবতর নিয়মকেই কুত্রাপি হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।” কবি দ্রাবিড় সৈকত এর ‘কুত্রাপি’ ছন্দের এই প্রস্তাবনা বা আখ্যায়ন বাংলা কবিতার পরিক্রমায় নিঃস্বন্দেহে সফল এবং নতুন এই ছন্দের অব্যাহত ধারা বাংলা কবিতার অন্যতম ধারক হবে বলে আমার ধারণা। ‘কুত্রাপি’ ছন্দের কবিতাগুলো ৯ থেকে ১১ লাইনের হয়ে থাকে। এটা ‘কুত্রাপি’ ছন্দের একটা বৈশিষ্ট্য, কারণ এর থেকে বেশি বা কম হলে এ-ছন্দের মূল স্বাদ বা মজাটা থাকে না। তাই ‘কুত্রাপি’ ছন্দের এই স্বাদটা ধরে রাখার জন্য কবি এ-ছন্দে রচিত কবিতাগুলিকে ৯ থেকে ১১ লাইনে রাখার গঠনগত প্রস্তাবনা করেছেন। আশাকরি ‘যমুনা এক্সপ্র্রেস’-এর এই কুত্রাপি সংখ্যার কুত্রাপিগুলো পাঠককে কবিতার নতুন স্বাদ ও সম্ভাবনার সাথে পরিচয় ঘটাবে। বাংলা কবিতার জয় হোক, জয় হোক কুত্রাপির। আদিত্য আনাম মুক্তারপাড়া, সিরাজগঞ্জ।