“ক্যাম্পে বন্দি থাকা বীরাঙ্গনাদের দিনগুলো’’ বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য, অনিবার্য ও বস্তুনিষ্ঠ বিষয়বস্তুতে পরিপূর্ণ। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল প্রকৃতই একটি রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধ। বৃহৎ পরিসরে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক-বিভিন্ন অবস্থায় নারীর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙালি নারীদেরকে অবর্ণনীয়, অকল্পনীয়, নারকীয় পৈশাচিক নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁরা সমাজ, সংসার, পাড়া-প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন, এমনকি আপনজন থেকে শুরু করে প্রায় সকলের নিকট থেকে লাঞ্চিত-নিগৃহীত হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। আর যাদের ঠাঁই মিলেছিল সংসারে, তাঁদের রাখা হতো অন্ধকারে। প্রতিনিয়ত তাদেরকে সহ্য করতে হতো সকলের কু কথা, থাকতে হতো মাথা নত করে। বাড়ির বাহিরে যেতে পারতেন না। যদিও-বা কখনও কোনো কাজে যেতেন তখন পাড়ার লোকেরা আঙ্গুল উঁচিয়ে বিশ্রি ভাষায় তাঁদের উদ্দেশ্যে খারাপ ইঙ্গিত দিত, তাঁদেরকে দেখলে বিশ্রিভাবে হাসতো। এমনভাবে কথা বলত, যেন তারা মানুষ না, এই পৃথিবীতে এমন কোনো প্রাণী তারা আগে দেখেনি। তারা দল বেঁধে তাঁদেরকে দেখতে আসতো। সংসারে কোনো সিদ্ধান্ত দিবে দূরের কথা, মাথা উঁচু করে জোরে শব্দ করে কথা বলা ছিল তাঁদের বারণ। তাঁদের নেওয়া হতো না কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে। কোনো বিয়েতে তাঁদের দাওয়াত দিত না। গ্রামের মানুষের ধারণা ছিল, যদি কোনো শুভ কাজে তাঁরা যান, তবে সেই অনুষ্ঠান অশুভ হয়ে যাবে। কোনো বিয়েতে গেলে সেই বিয়ের পাত্র-পাত্রীর সংসার জীবনে অমঙ্গল হবে। সমাজ, দেশ, জাতি তাঁদেরকে ঠেলে সমাজের আড়ালে রেখে দিয়েছিল। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সামাজিকভাবে নিগৃহীত এসব নারীদের যথাযথ মূল্যায়ন এবং পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছিলেন। সেইসব মহিয়সী নারীর চরম আত্বত্যাগের অবদানকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চিরস্মরণীয় করে রাখার প্রত্যয়ে ইতিহাসের প্রয়োজনে এ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে এমনসব তথ্য, যা এড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিনির্মাণ সম্ভব নয়।
সুরমা জাহিদ ছােটবেলা থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। শুরু হয় কবিতা দিয়ে। সাহিত্যের প্রায় সকল আঙ্গিনায় বিচরণ করছেন যা প্রকাশ পায় তাঁর কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অন্যরকম চাওয়া’, অপর সৃষ্টি পাঠকপ্রেমীর নিকট সমাদৃত উপন্যাস ‘খণ্ডক’ । পরবর্তী প্রকাশ সহজ-সরল, প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত উপন্যাস আজ বসন্তের দিন। আরাে প্রকাশিত হয় ছােটগল্প ‘না আর যাবাে না', গল্প ‘সােনার। পালঙ্কে আমি একা, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে। নির্যাতিত নারীদের নিয়ে গবেষণাধর্মী আলােড়িত প্রকাশনা 'বীরাঙ্গনাদের কথা। স্কুল জীবন থেকেই বাংলাদেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে জড়িত থেকে সক্রিয় ভূমিকা রেখে। চলেছেন। বাংলাদেশের নারীদের বিভিন্ন সংকট, সংখ্যাতিময় অবস্থার প্রেক্ষাপটে লেখনীর দ্বারা হয়েছেন তিনি সােচ্চার। ইতােমধ্যে তিনি কুমারখালী সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, দক্ষিণ বাংলা সাহিত্য সাংস্কৃতিক পদক এবং কবি সুফিয়া কামাল সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন। সুরমা জাহিদের জন্ম ১৯৭০ সাল। জন্মস্থান : রাজাবাড়ি, রায়পুরা, নরসিংদী। বাবা : মরহুম আলফাজ উদ্দিন আহমেদ, মাতা : আম্বিয়া আক্তার। স্বামী : মােঃ জাহিদ হােসেন। ছেলে : মােঃ নাদির হােসেন লুই ও মেয়ে : নুর-এ-জান্নাত জুই। শিক্ষাজীবন শুরু করেন রায়পুরা উপজেলার জিরাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। তারপর মরজাল কাজী মােঃ বশির উচ্চ বিদ্যালয়, লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার গডিডমারী উচ্চ বিদ্যালয় শেষ করেন কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে।