২৮ মার্চ সকাল থেকে পাবনা শহর ও এর আশে পাশের সর্বস্থরের ছাত্র জনতা বন্দুক এবং নানা ধরণের দেশীয় অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি সেনাদের টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ক্যাম্পের উপর আক্রমণ শুরু করে। রাইফেল ক্লাবের সদস্য হিসাবে সাইদ আকতারের টেলিস্কোপ লাগানো টুটু বোর রাইফেল ছিল। তার হাতের নিশানাও ছিল অসাধারণ। তিনি তার টুটু বোর রাইফেল নিয়ে বাণী সিনেমা হলের ছাদে অবস্থান করে দেখতে পান শত্রুসেনারা এক্সচেঞ্জ ভবনের দোতলার বারান্দার উত্তর ও দক্ষিণ কোণে দুটি এলএমজি পোস্ট স্থাপন করে সাধারণ জনতার দিকে গুলি বর্ষণ করছে। তিনি তার টেলিস্কোপের সাহায্যে বারান্দার উত্তর পাশের এলএমজি ম্যানকে টার্গেট করে সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকেন। এক সময় সুযোগও এসে যায়। প্রথম গুলিতে উত্তর পাশের এলএমজি ম্যানের মাথায় গুলি লেগে এলিয়ে পড়ে। এরই মধ্যে ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম বকুল বারান্দার দক্ষিণ পাশে স্থাপন করা এলএমজির ব্যারেল ধরে টেনে নিচে নামিয়ে আনে। ২টি এলএমজি হারানোর পর শত্রুসেনারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে এক্সচেঞ্জের পিছন থেকে আরেক দল যুবক শত্রুদের ক্যাম্পের ভেতরে অবিরামভাবে পেট্রোল বোমা ছুড়তে শুরু করে। এই বোমার আগুনে তাদের ক্যাম্পে আগুন লেগে গেলে ভীত সন্ত্রস্ত্র শত্রুসেনারা জনতার কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। আর এইভাবেই পাবনা শহর শত্রুমুক্ত হয়।
কৃষ্টি আর কুষ্টি’র (পাট) জন্য বিখ্যাত কুষ্টিয়ার সন্তান জিয়াউল হক। জন্ম ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০। তৎকালীন পাকিস্থান নৌবাহিনীতে কর্মরত পিতার কর্মস্থল করাচিতেই কেটেছে শৈশব-কৈশোর ও তারুণ্যের দিনগুলো। ১৯৭৪-এ বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুরের ফিলিপনগর প্রত্যাবর্তন। মেন্টাল হেলথ্ নার্সিং, মেন্টাল হেলথ, সাইকিয়াট্রিক রিহাবিলিটেশন-এ পড়াশোনা করেছেন তিনি। সর্বশেষ ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি থেকে মেন্টাল হেলথ, ইএমআই ও ডিমেনশিয়া ম্যানেজমেন্ট কোর্স শেষ করে ইংল্যান্ডেরই একটি বেসরকারি মেন্টাল হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজার ও ক্লিনিকাল লিড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এখন লেখালিখিতেই ব্যস্ত। নাবিকের নোঙ্গর হয় ঘাটে ঘাটে। শৈশবেই খেলাচ্ছলে কলম হাতে নিয়ে লিখতে বসা, একজন নাবিক পিতার সন্তান জনাব জিয়াউল হকও জীবনের তিন-চতুর্থাংশ সময়ই দেশের বাইরে কাটিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পেরিয়ে চাকরির সুবাদে ইংল্যান্ডে স্থায়ীভাবে অবস্থান করলেও নিয়মিত লেখালেখি করছেন। এ পর্যন্ত তাঁর তিরিশটি গ্রন্থ ও গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে ‘বই খাতা কলম’, ‘মানব সম্পদ উন্নয়নে আল কুরআন’, ‘ব্রিটেনে মুসলিম শাসক’, ‘বাংলাদেশের শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা’, ‘ইসলাম : সভ্যতার শেষ ঠিকানা’, ‘ইসলামি শাসন ব্যবস্থা : মৌলিক দর্শন ও শর্তাবলি’, ‘ধরণীর পথে পথে’, ‘অন্তর মম বিকশিত করো’, ‘একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ ও যুব মানস’, ‘তেইশ : দ্য টাইম টু রাইজ আপ’, ‘মন ও মানসিক স্বাস্থ্য’ ও ‘মুসলমান : এ নেশন অব দ্য বুক, আলোর ফেরিওয়ালা’ এগুলো অন্যতম। ধর্ম, সমাজ, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সমসাময়িক বিষয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তিন শতাধিক ফিচার, প্রবন্ধ ও কলাম লিখেছেন। লন্ডন ভিত্তিক বাংলা-ইংরেজি দ্বি-ভাষিক সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ইউরোবাংলা’র তিনি একজন নিয়মিত কলামিষ্ট ছিলেন।