তুমি রয়েছো ঘুমিয়ে ধরো এটি রাত নয়, জোনাকিরা রয়েছে ঘুমিয়ে, আঁধারে জোছনা নেই, নেই পাখির কিচিরমিচির; ধরো, বাতাসের ঝিরিঝিরি নৃত্যের ছন্দে ঝরছে না সাবুদানার মতো মিহি শিশির! ধরো, ছাদবাগানের একটি টবেও ফোটেনি কোনো লাল-গোলাপি গোলাপ! ধরো, শুধু রজনীগন্ধারা গলা উঁচিয়ে গাইছে নিঃশব্দ নিশুতির মোহিনী প্রেমের প্রলাপ! ধরো রাত নয়, সাঁঝবাতির সলতে সবে নিভু নিভু, খানিক পরেই মানুষগুলো পড়বে ঘুমে ঢলে; ধরো ঘুম নয় সেটি; শুধু চোখ বুজে থাকবে শুয়ে সাময়িক মৃত্যুর কোলে! ধরো, সাময়িক মৃত্যুতে ঘুমাচ্ছন্ন এই নগর, ধরো, কোথাও নেই কোনো নিশুতি পাখির ডাক; ধরো, সমাজের চোখে ছিটিয়ে দিলাম ধুলো শুধু প্রাপ্তিই থাক বাকিটুকু যায় চুলোয় যাক! ধরো, জোছনার আলোয় পড়েনি তোমার ছায়া, শুধু আমার ছায়া কাঁপছে থরথর; ধরো, তোমার ছায়া মিশে গিয়ে একসাথে আমাদের ছায়াটি হলো আরেকটু বড়! ধরো এটি রাত নয়, কেউ নেই কাছে! দাঁড়িয়েছি আমরা একটি বিভাজিত দেয়ালে; ধরো, ধরে আছি আমরা হৃদয়ে কিছু স্মৃতি সবার অলক্ষে একান্তে আমাদের জীবনের আড়ালে! ধরো একটি রাত, তুমি রয়েছো আয়েশে ঘুমিয়ে, তোমার সুডৌল হাত-পা-চুলগুলো এলোমেলো; শুধু আমিই আছি পাশে রাতভর একা দাঁড়িয়ে! অন্তঃসারশূন্য প্রেম আমি একটি আকাশ হতে চেয়েছিলাম! একটি গাঙচিলের পিঠে ভর করে, আমি বহুদিন গিয়েছি দীক্ষা নিতে সাদা মেঘমালার কাছে; কোনো শিক্ষা কাজে আসেনি! আমি পিঁপড়ের মতো গুটিগুটি পায়ে হেঁটেছি বন্ধুর পথ! হতে চেয়েছি প্রাগৈতিহাসিক তেলাপোকা, শুধু অসম প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে; আমার ঔদার্য হয়েছে উপেক্ষিত! আমি টিকটিকির মতো আড়াআড়ি হয়ে লেগে থেকেছি তোমার দেহের দেয়ালে, আমি উন্মুখ ছিলাম পেনসিলে আঁকা ছবির মতো সুবাসিত শরীরের মনোমুগ্ধকর সুগন্ধের ঘ্রাণ নিতে; কেউ অলক্ষে আমার অক্সিজেন গ্রহণের নাকটি নিয়েছে কেটে! আমি একজন চিত্রশিল্পী হতে চেয়ে চারুকলার ঘাসে থেকেছি বসে ভরদুপুরে! একটি দেহের ক্যানভাসে লেগেছে কতদিন আমার কম্পিত আঙুলের আবেগীয় ঊষ্ণ স্পর্শ! তোমায় ছোঁয়ার আনন্দে কাগুজে ছবিতে মন টিকেনি আর! আমি একটি অন্তঃসারশূন্য প্রেম হয়ে কলাভবনে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রমনার বটমূলে পড়ে থেকেছি বহুকাল শিশির ভেজা ঘাসের উপরে! হৃদয়হীন শকুনেরা বৃত্তাকারে ঘুরঘুর করেছে শরীর ঘিরে! আমি একটি আকাশ হতে চেয়েছিলাম; আমার ঔদার্য হয়েছে উপেক্ষিত! কেউ নিশ্বাস গ্রহণের নাকটি খেয়েছে কামড়ে! তোমায় ছোঁয়ার আনন্দে সেই ছবিতে মন টিকেনি আর! অবশেষে সুযোগ বুঝে একটি হৃদয়হীন শকুন গড়েছে ঘর আমার সোনালি শরীর খুঁড়ে! এভাবেই কাটছে আমার দিন, পৃথিবীতে বেঁচে আছি আমি আজও না মরে! কিছু কষ্ট হবে? একটি ছবি হবে? দাও তবে, রাখব কাছে; দেখব তখন যখন স্নিগ্ধ সকাল, অলস দুপুর, ক্লান্ত বিকেল! একটি দৃষ্টি হবে? আবেগ মাখা-হৃদয় নিঃসৃত চাহনি! রাখব কাছে, দেখব তখন যখন স্নিগ্ধ সকাল, অলস দুপুর, ক্লান্ত বিকেল! একটি কথা হবে? সংক্ষিপ্ত কিন্তু অনন্য দ্যোতনার; রাখব কাছে, ভাবব তখন যখন স্নিগ্ধ সকাল, অলস দুপুর, ক্লান্ত বিকেল! একটি হাসি হবে? অবিরাম ঝর্নার মতো শরীর দোলানো নির্মল হাসি রাখব কাছে, দেখব তখন যখন স্নিগ্ধ সকাল ,অলস দুপুর, ক্লান্ত বিকেল! একটি টিপ হবে? টুকটুকে লাল, রাখব কাছে, দেখব তখন যখন স্নিগ্ধ সকাল, অলস দুপুর, ক্লান্ত বিকেল! কিছু কষ্ট হবে? পারমাণবিক বোমার মতো বিধ্বংসী কষ্ট! রাখব কাছে, প্রয়োগ করব একটি একটি করে; যখন স্নিগ্ধ সকাল, অলস দুপুর অথবা একটি ক্লান্ত বিকেলে যখন তোমায় মনে পড়ে! কিছু ক্রোধ হবে? প্রথম প্রেমের মতো, ছটফটে, ভয়ংকর, রক্তের মতো! রাখব কাছে! ক্রোধগুলো উপভোগ করব অবশিষ্ট জীবনের প্রতিটি স্নিগ্ধ সকালে, একটি অলস দুপুর অথবা ক্লান্ত বিকেলে, যখন কোনো কারণ ছাড়াই বেখেয়ালে তোমায় খু-উ-ব মনে পড়ে! কিছু দুঃখ হবে? না হলে থাক, মনে হয় যা আছে, এতে আরও কয়েকটি শতাব্দী কেটে যাবে অনায়াসে! এক জীবনে আর ক’টি বা স্নিগ্ধ সকাল, অলস দুপুর অথবা ক্লান্ত বিকেল আসে! যদি এভাবেই থাকে সে জানালার পাশে এলোকেশি বেশে তাকে দেখে আমি আচমকা দাঁড়ালাম তার মায়াবী চোখে পড়ল চোখ আমার; তাকে মনে হলো আজ অতি আপনার! মনে হলো, আমার অতৃপ্ত হৃদয়ের ক্ষুধা নিবারণে, অনলে পোড়া বিদগ্ধ দৃষ্টির দুঃখ প্রশমনে, ঠিক তার মতো একজন কমনীয় রমণীর মোহনীয় উপস্থিতি একান্ত দরকার! যদি এভাবেই থাকে সে দাঁড়িয়ে দুয়ারে অনন্তকাল! কিংবা খোলা জানালার ধারে, একটি খড়ের ছাউনির ভাঙা নীড়ে! কোনো সর্বগ্রাসী উত্তাল সমুদ্রের তীরে লক্ষ কোটি মানুষের ভিড়ে; অথবা থাকে আমার প্রাসাদপ্রতিম শূন্য হৃদয়ের গভীরে! তবে একদিন একান্তে তাকে বলব ডেকে, তার মতো অবিকলÑ একজন কমনীয় রমণীর মোহনীয় উপস্থিতি আমার খুউব দরকার! যদি এভাবেই থাকে সে বসে ঝুল বারান্দায়, পরম আয়েশে একটি আরাম কেদারায়! মিষ্টি হেসে তার পাশে ডাকে সে আমায় ইশারায়... সর্বভুক-দুরন্ত-বজ্জাত-মাতাল যুবক হয়ে আদিম পুরুষের মতো বল্লম হাতে নিয়ে ছুটে আসব আমি সেদিন ঘর্মাক্ত গায়ে! গলা ফাটিয়ে বুনো কণ্ঠে বলতে চাই যাচ্ছে আমার বড্ড অসময় আমি ক্লান্ত কর্মহীন আমার বড্ড আকাল! ঠিক তার মতো একজন কমনীয় রমণী খুঁজে মরছি আমি গাঁয়ে-নগরে-বন্দরে বহুকাল... শুনে একবার তার পাথর মন গললে গলুক! প্রেমে-মায়ায় অথবা ভালোবাসায় সে আমার আরও কাছে এলে আসুক! গা ঘেঁষে বসুক! ক্ষীণ কণ্ঠে একবার বলুক ‘কেন এভাবে তাকাও নির্লজ্জের মতো মুখপানে বারবার?’ এরপর... দিনভর কথা চলুক...ফুল ফুটুক... বৃষ্টি ঝরুক সুযোগ খুঁজে, মনের গতিবিধি বুঝে তার কানে মুখ গুঁজে বলবই বলব আমি একবার, যদি এভাবেই থাকে সে পাশে আমার, থাকুক... তার সার্বক্ষণিক উপস্থিতি আমার খুউব দরকার!
জন্ম : ১৯৮২। জন্মস্থান : নওগাঁ। লেখালেখির যাত্রা নাটকীয়ভাবে! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয়বর্ষে পড়ার সময় আমার অত্যন্ত প্রিয় এক রমণীকে একুশের বইমেলায় চমকে দিতে মাত্র ২১ দিনে লিখেছিলাম প্রথম উপন্যাস ‘মহামুক্তি’! সেটি একুশে বইমেলা ২০০৪ এ প্রকাশিত হওয়ার পর শুধু প্রিয় রমণীই খুশি হননি! লেখাটি সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যক্রমে আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় মেন্টর মহোদয়ের হাতে পড়ে। তিনি আমাকে ডেকে লেখাটির শব্দের গাঁথুনি, লেখার স্বতন্ত্র স্বরূপ এবং অন্যান্য বহুবিধ বিষয় নিয়ে দিয়েছিলেন কিছু মূল্যবান উপদেশ! তাঁর উপদেশ মেনে বিষয়গুলোকে আত্বস্থ করতে আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় ২০ বছর। এ সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঙ্গনের কবি-সাহিত্যিকের লেখা পাঠ করেছি। একই সাথে এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত থাকার সুবাদে আমার বিশ্বের বহু দেশ-বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে। লেখাগুলোতে সেই অভিজ্ঞতালব্দ বিষয়াবলির সন্নিবেশ ঘটানোর একটি প্রচেষ্টা ছিল ! একুশে বইমেলায় ২০২৪-এ প্রকাশনা সংস্থা বাবুই থেকে কাব্যগ্রন্থ ‘একটা ফুঁ দিয়ে দাও’ এবং প্রতিবিম্ব প্রকাশনী থেকে ‘কবিতা নয়, কথামালা’ আলোর মুখ দেখছে! আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র! জীবনকে সাহিত্যের চোখে দেখে কলমের আঁচড়ে পাঠকের পাঠ-উপযোগী করার জন্য যে পরিমাণ মেধা বা জ্ঞানের প্রয়োজন তা এখনো অর্জিত হয়নি! চল্লিশ পেরুনোর পর শেখার তাড়না থেকেই যা লিখছি সেগুলোর খসড়া খাতায় লিপিবদ্ধ করার জন্যই মূলত এই ক্ষুদ্র প্রয়াস!