“ইন্দিরা গান্ধী" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী। নামের শেষে প্রিয়দর্শিনী শব্দটি যুক্ত করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নামের সঙ্গে এ শব্দটির প্রয়ােগ যে নিরর্থক নয়, তা ইন্দিরার যেকোনও বয়সের ছবিতেই সুষ্পষ্ট। ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনীর জন্ম ১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর, এলাহাবাদ শহরে । পিতা জওহরলাল নেহরু এবং দাদা মতিলাল নেহরু। সময়টা ১৯৭২-এর শরঙ্কাল। শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়ােজন চলছে সারা ভারতে। তবে মণ্ডপে দুর্গা-প্রতিমার আদলটা কখন যেন পাল্টে গেছে ইন্দিরা গান্ধীর মতাে। সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, উন্নত নাশা, বুদ্ধিদীপ্ত অবয়ব। বর্তমান কংগ্রেস সভানেত্রী এবং ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ সােনিয়া গান্ধী-প্রয়াত নেত্রীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে বলেন, “বিশ্বে এমন কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ করেন, যারা মৃত্যুর পরও শুভ কাজে আমাদের বিরামহীনভাবে অনুপ্রাণিত করে চলেন, ইন্দিরা গান্ধী তাদেরই একজন।” ইন্দিরার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে সােনিয়া বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রসঙ্গটিও স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে তার ভূমিকাই তার দূরদর্শিতা, মানুষের প্রতি তার সুগভীর মমত্ব ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের পরিচয় বহন করে। নেহরু পরিবারের সন্তান হিসেবে শৈশব থেকেই বাবা ও দাদার রাজনৈতিক মতাদর্শ তাকে প্রভাবিত করতে থাকে। ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে তার বাবা ও দাদাকে মাঝে মাঝেই যেতে হতাে কারাগারে। একারণে, শৈশব কৈশাের অনেকটা একাকীত্বে। কাটে তার। একমাত্র সঙ্গী মা কমলা নেহরুও মারা যান ১৯৩৬ সালে। আরও বেশি একা হয়ে পড়েন ইন্দিরা। ইংল্যান্ডে পড়াশােনা করার সময়ই সুদর্শন ও বুদ্ধিদীপ্ত পারসিক যুবক ফিরােজ গান্ধীর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এই পরিচয় থেকে প্রণয় এবং ১৯৪২ সালে পরিণয়। ১৯৩৮ সালে ইন্দিরা যােগ দেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তার পিতা জওহরলাল নেহরু প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর সরকারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ইন্দিরা। ১৯৬৬ সালে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি ভারতে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে তিনি সমালােচিত হন এবং ১৯৭৭ সালে নির্বাচনে পরাজিত হন। ১৯৮০ সালে চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। সব মিলিয়ে তি ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। ইন্দিরার রাজনৈতিক জীবনকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করে থাকেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম পর্যন্ত সময়টা তার রাজনৈতিক জীবনের উত্থানের পর্যায়। কংগ্রেসের প্রবীণ ও চতুর নেতৃবৃন্দ ইন্দিরাকে পুতুল হিসেবে ক্ষমতায় বসিয়ে কলকাঠি নিজেদের হাতে রাখার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, ইন্দিরা তা উড়িয়ে দিয়ে জাতীয় মানসে 'ভারত মাতা হয়ে ওঠেন। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারির পরবর্তী পর্যায়টি তার জীবনে কালাে অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত। ১৯৮০ সালের নির্বাচনে তার পুনরায় ক্ষমতায় আরােহণ পরবর্তী সময়টা তার জীবনে অনিশ্চয়তা ও সংশয়ে আচ্ছন্ন। পর্যায় বলে মনে করা হয়ে থাকে। সমালােচনা ও সাফল্য-সব মিলিয়ে ইন্দিরা ভারতীয়দের মানসে যে আসন অর্জন করেছিলেন, তা যেকোনও রাজনীতিকের জন্য ঈর্ষণীয়।