ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাতি লাভ করলেও শাহীন আখতার একজন ব্যতিক্রমী ছোটোগল্পকার। তাঁর গল্পের জমিন যেমন স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল, তেমনি বিষয় আর চরিত্র। চয়নেও তিনি বৈচিত্র্যবিলাসী। শাহীন আখতার ক্রমাগত বৃত্ত ভাঙেন- সে ভৌগোলিক সীমার, সময়ের, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের। কখনোবা এসবের খোঁজাখুঁজি চলে তাঁর গল্পের শরীর জুড়ে। ছোটোগল্প রচনার মধ্য দিয়েই সাহিত্যজগতে তাঁর যাত্রা শুরু। প্রায় তিন দশক ধরে উপন্যাসের পাশাপাশি গল্প লিখছেন। সেখান থেকে বাছাইকৃত ২০টি গল্প নিয়ে গল্পগ্রন্থ: নির্বাচিত ২০। এ সুদীর্ঘ পরিভ্রমণে তাঁর গল্পে দেখা মেলে দলচ্যুত হিজড়া, মৃত বেশ্যা, সাপ, স্বপ্নচারী সমকামী নারী, মাদকসেবী যুবক ইত্যাদি পরস্পর বিচ্ছিন্ন কিছু মানুষের। যাদের মধ্যে মিলের চেয়ে গরমিলই বেশি। আর আছে বর্তমান সময়ের জ্বলন্ত বিষয় বাস্তুচ্যুতি নিয়ে কয়েকটি মর্মস্পর্শী গল্প। যেমন বাস্তচ্যুত পাহাড়ি ও বিহারি শরণার্থী। এখন গাজায় যা হচ্ছে একে যুদ্ধ বা ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতকরণ বললে সঠিক বলা হবে না, এটি এথনিক ক্লিনজিং, জেনোসাইড। রোহিঙ্গাদের ওপরও তাই চলেছে বিগত দশক জুড়ে। এ গ্রন্থের 'অলৌকিক ছড়ি' গল্পে ফুটে উঠেছে সেই চিহ্ন বা নিশান।
শাহীন আখতার জন্ম কুমিল্লা জেলার চান্দিনায় পড়াশােনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, অর্থনীতিতে প্রায় দুই দশক ধরে গল্প-উপন্যাস লিখছেন। - দ্বিতীয় উপন্যাস তালাশ-এর জন্য। প্রথম আলাে বর্ষসেরা বই ১৪১০ পুরস্কার পান। বইটির ইংরেজি তরজমা দ্য সার্চ নামে দিল্লির প্রকাশনা হাউস জুবান প্রকাশ করেছে ২০১১ সালে। তালা-এর ৩ কোরিয়ান ভাষার সংস্করণ আর সখী রঙ্গমালা উপন্যাসের ইংরেজি সংস্করণ বিলাভেট রঙ্গমালা প্রকাশের কাজ চলছে। প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ময়ুর সিংহাসন উপন্যাসের জন্য তিনি পেয়েছেন। বাংলার পাঠশালা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস না কথাসাহিত্য পুরস্কার ২০১৫ এবং আইএফআইসি ব্যাংক পুরস্কার। তিনি ভারতের আনন্দবাজার গ্রুপের টিভি চ্যানেল। এবিপি আনন্দ কর্তৃক সাহিত্যে সেরা। - বাঙালি’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ২০১৪ সালে। অতি সম্প্রতি তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন।