ভ্রমণকাহিনি নিয়ে লেখা কোনো বইয়ের পাতা উল্টাতে আজকাল আমার ইচ্ছে করে না। ইচ্ছে করবেই-বা কেন! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দূরকে করেছে নিকট, অজানাকে নিয়ে এসেছে নাকের ডগায়, বইকে দিয়েছে দূরে ঠেলে। যে- কোনো বিষয়ে গুগলে অনুসন্ধান দিয়ে দরকারি দুচার লাইন পড়ে ফেলা যায়, লাইব্রেরিতে গিয়ে রেফারেন্স ঘাঁটতে হয় না, কোনো মাসুল দিতে হয় না। পালতোলা জাহাজের সওদাগর, সিন্দাবাদের রূপকথার গল্পের দিন শেষ হয়ে গেছে। হাওয়াই জাহাজে চড়ে অর্ধ দিবসে মানুষ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। আকাশেও যানজট লেগে আছে। পৃথিবী নামক গ্রহটি সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেছে। মামার কাছে মাসির গল্প বলার দিনও শেষ। নিজেও অনেক ভ্রমণ করেছি। লোকে বলত, আমার পায়ের নিচে নাকি শর্ষেরদানা আছে। এক জায়গায় বেশিদিন স্থির থাকে না। প্রচুর আজেবাজে মালমসলা স্মৃতিতে স্তূপ হয়ে থাকলেও ভ্রমণ নিয়ে কিছু লিখতে সাহস তখনো ছিল না, এখনো নাই। আমার ভয়, পাছে লোকে বলে বসে, 'তিল দেখে এসে, ইন্টারনেটে ঘেঁটে তালের গল্প পরিবেশন করছে।' এখনকার যুগের সচেতন পাঠক ভ্রমণকাহিনিকে অন্ধের হাতি দেখার গল্প মনে করেন। অন্ধের মতো ঘরের কোণে বসে কাহিনি নাড়াচাড়া করার দরকার কী, উড়ে গিয়ে চোখ খুলে একবার দেখে এলেই তো হয়!