মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা, একটি জাতির অহংকার। অহংকারের চেতনা যদি না থাকে তাহলে স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়ে। স্বাধীনতা কেউ দেয় না, তাকে ছিনিয়ে নিতে হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়, একটি নির্দিষ্ট কাল বা সময়ের মধ্যে আবদ্ধ নয়। এর প্রেক্ষাপট অনেক বিস্তৃত। আছে একটি ইতিহাস। যে ইতিহাস বারবার রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচনের ফলাফলকে যারা অস্ত্র দিয়ে ঠেকাতে চেয়েছিল, যারা অস্ত্রের ভাষায় জবাব দিতে গিয়ে রাজপথ বারবার রক্ত ঝরিয়েছিল, তারাই ১৯৭১-এর পঁচিশে মার্চের রাত্রিতে জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা করেছিল। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধের যে ডাক দিয়েছিলেন, তাতে সাড়া দিয়ে সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্য এবং সর্বস্তরের বেসামরিক জনগণ অস্ত্র হাতে প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করেছিলেন, যা ন'মাসের মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় দিয়ে একটি রক্তাক্ত অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হয়। স্বাধীনতা সূর্যের ভোর আনা শহীদ এবং জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছেন। দেশের প্রতি ভালোবাসা আর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা বাংলাদেশের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়ে গিয়েছেন, তাঁরা ফিরে আসেন নি। কিন্তু যারা ফিরে এসেছেন, তাঁদের দিয়ে বলে পাঠিয়েছেন আত্মউৎসর্গের সেই চিরায়ত আপ্ত বাক্য, 'যখন তোমরা বাড়ি যাবে, তাদের আমাদের কথা বলবে, তোমাদের আগামীকালের জন্য আমরা আজকের দিনটি দিয়ে দিয়েছি'। একটি দেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আসে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সৌভাগ্য এক প্রজন্মের জন্যই আসে। ওই প্রজন্মের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, চাকরিজীবী, অপামর জনতা আর ছাত্ররা স্বাধিকার আন্দোলনকে স্বাধীনতার দিকে, মুক্তিযুদ্ধের দিকে নিয়ে গেছেন। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, অনেকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন