শিল্পের অনুবেদন নিয়ত অনুরণন তোলে, পারিপার্শ্বিকতার সহসা উপস্থিতি ব্যক্তিকে উদ্বেলিত করে। কবিতার ধ্বনি সূক্ষ্মতম অনুভূতির সঞ্চার ঘটাতে সক্ষম, কবিতা শব্দটি যত সহজ বৈপরীত্যে ততটাই দুরূহ- কবিতা যতটা সস্তায় মিলে যায়, ক্ষরণে ততটাই মূল্যবান হয়ে ওঠে। অরবিন্দ চক্রবর্তী কবি, একক সূচকেই কবি- ধ্বনিব্রহ্মর এক প্রতিরূপ তাঁর কবিতা। তাঁর কবিতার শব্দগুলো নিরন্তর যে ছক কষে কিংবা যে আনুভূমিক দ্বৈরথ নির্মাণ করে সেগুলো পাঠকের জারণ-বিজারণে শব্দপথের নতুন দিক সঞ্চারণ তো ঘটায়ই সমান্তরালে বহুবিধ অচেনা-অজানা পথে চোরাগলি আবিষ্কারসহ সুড়ঙ্গও আবিষ্কার করে, বলা ভালো আত্মজৈবনিক অভিক্ষেপের সরলরেখা অরবিন্দ চক্রবর্তীর কবিতায় অনুপস্থিত- যা প্রতিপাশ কাব্যধারায় সতত নজরে আসে। অরবিন্দ চক্রবর্তীর কবিতার এ পথ তাই একক ও নিঃসঙ্গ বোধের সন্ধান দেয়, যদি দিনশেষে আলো-আঁধারের দ্বৈরথ যুদ্ধ ঘোষণা আসে সেখানেও আবিষ্কৃত হয় আত্মবিম্ব। অরবিন্দর কবিতাসংগ্রহ নামকরণে ব্লেডচেরা ধ্বনিসমষ্টি কিংবা নিরন্তর শব্দমালার সুদক্ষ উত্তরাধিকারের এক উজ্জয়নপুর অথবা মোহমুগ্ধ ভুলের বিপরীতে ঘৃণার প্রতিপাশ কিংবা একার্থে একটা বহুবিচ্ছিন্ন সূত্রে গড়ে ওঠা জ্যামিতিক বিন্যাস যেখানের উপরিতলের ছায়াবৃত্ত শুধুই ধোঁয়াশা তৈরি করে এবং ছায়াবৃত্তের অভ্যন্তরে যে চৌকৌণিক বর্গক্ষেত্র সেটায় বোধের সঞ্চারণ ঘটে অথবা যোগসূত্রে বর্গক্ষেত্রের অভ্যন্তরে নতুন এক মূলবৃত্ত ধ্বনির শিল্পপ্রকৌশল ছড়ি ঘোরায় এবং অবশেষে কেন্দ্রবিন্দুতে আছড়ে ফেলে সজোরে অতঃপর কামতৃপ্ত-বিমোক্ষণ ও নিস্তেজ এক ঘোড়া নতুন উদ্যোমে অভিযাত্রার আয়োজন করে। অরবিন্দ চক্রবর্তীর কবিতা আদতে এমনই গাণিতিক, কখনো কখনো জ্যামিতিক, কখনো কখনো বোধের আয়না, কখনো বিপ্লবের অপেক্ষায় বসে থাকা তপ্ত তারুণ্য, সুতরাং পাঠের সাথে মিলিয়ে নেওয়ার নিহিতার্থ জারি থাক পাঠ আহ্বানে। - রাহেল রাজিব, কবি