স্পার্কলিং সায়ানাইড: লন্ডনের এক আলো ঝলমলে নাইটক্লাবে পালন করা হচ্ছে রোজমেরি বার্টনের জন্মদিন। কিন্তু শ্যাম্পেন পান করতে গিয়ে ঘটল বিপত্তি। গ্লাসে মেশানো ছিল সায়ানাইড। জন্মদিনেই মৃত্যু হলো সুন্দরী রোজমেরির। করোনারের দৃষ্টিতে ঘটনাটা নিছক আত্মহত্যা। কিন্তু বেনামি চিঠি বলছে অন্য কথা—খুন করা হয়েছে মেয়েটিকে। সন্দেহভাজনের তালিকায় নাম এলো তিনজনের—স্বামী, বোন আর এমন এক প্রেমিকের, যে চাইত রোজমেরির সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে। কে করেছে খুনটা? এন্ডলেস নাইট: আমার যে শেষেই শুরু—কথাটার অর্থ আসলে কী? কোনো বিশেষ মুহূর্ত কী এমন আছে, যেটা দেখিয়ে বলা যেতে পারে—অমুক দিনের অমুক সময়ের অমুক জায়গার অমুক ঘটনাটা থেকেই সব কিছুর শুরু? আমার এ কাহিনির শুরুও বড়ো অদ্ভুত। সম্ভবত যেদিন আমি ‘দ্য টাওয়ার্স’-এর বিজ্ঞাপন দেখলাম, সেদিনই। বারবার সাবধান করে দেয়া হয়েছিল আমাকে, বলা হয়েছিল বেদের মাঠ থেকে যেন দূরে থাকি। অচিরেই জানতে পারলাম, শেষের মাঝেই কীভাবে লুকিয়ে রয়েছে আমার শুরু! পেরিল অ্যাট এন্ড হাউস: কর্নিশ উপকূলের পাহাড়চূড়ায় সাগরঘেঁষা এক প্রাচীন প্রাসাদ। এই কর্নিশ উপকূলেই অবকাশযাপনের জন্য হাজির হয়েছেন দুঁদে গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারো আর তার বন্ধু ক্যাপটেন হেস্টিংস। কিংবদন্তির গোয়েন্দার সাথে এখানে পরিচয় হলো এন্ড হাউসের মালকিন নিক বাকলির। উজ্জ্বল, উচ্ছল আর বেপরোয়া এক তরুণী। ইতিমধ্যেই তিন-তিনবার খুনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে এই তরুণীর ওপর। অনুসন্ধানে নামলেন পোয়ারো। তার উপস্থিতিতেই আরও দুবার হামলা হলো নিক বাকলির ওপর। মাথার ঘায়ে কুত্তাপাগল দশা বেলজিয়ান গোয়েন্দার। নামলেন এন্ড হাউজের তত্ত্ব তালাশে। শেষ পর্যন্ত লৌহ যবনিকার অন্তরাল থেকে যা বেরোল, হতচকিত হয়ে পড়ল সবাই। প্রিয় সুধী, আপনিও স্তম্ভিত হবেন এরকুল পোয়ারো সিরিজের অষ্টম উপন্যাস ‘পেরিল অ্যাট এন্ড হাউস’-এর যবনিকাপাত দেখে।
'দ্য কুইন অব ক্রাইম' ও 'দ্য কুইন অব মিস্ট্রি' নামে পরিচিত আগাথা ক্রিস্টি অপরাধ বিষয়ক বা রহস্য উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর পুরো নাম আগাথা মেরি ক্ল্যারিসা ক্রিস্টি৷ বিখ্যাত এই ইংরেজ লেখিকা সকল গোয়েন্দাগল্প ও রহস্যকাহিনী পাঠকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তাঁর অসাধারণ লেখনীর মাধ্যমে। তিনি বেশ বিখ্যাত কিছু চরিত্রের স্রষ্টা, যাদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারো এবং মিস মার্পল, যাদের নাম শোনা যায় গোয়েন্দাকাহিনী পাঠকদের মুখে মুখে। 'ম্যারি ওয়েস্টমাকট' ছদ্মনাম ব্যবহারকারী এই প্রখ্যাত লেখিকা ১৮৯০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের ডেভন এ জন্মগ্রহণ করেন। আগাথা ক্রিস্টি এর বই সমূহ মূলত রোমাঞ্চ, হত্যারহস্য, অপরাধ ও গোয়েন্দাকাহিনী এবং রোমান্টিক ঘরানার। 'গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী আগাথা ক্রিস্টির বই বিশ্বের ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রিত বই এবং এক্ষেত্রে তাঁর সমকক্ষ হিসেবে শুধু আরেক কিংবদন্তী সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্সপিয়ারকেই ধরা যায়। আগাথা ক্রিস্টি এর বই সমগ্র এর সংখ্যা প্রায় আশিটি। আগাথা ক্রিস্টি রচনাসমগ্র এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দ্য মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার এট স্টাইলস, দ্য মার্ডার অফ রজার অ্যাকর্ড, দ্য বিগ ফোর, দ্য মিস্ট্রি অফ দ্য ব্লু ট্রেন, পেরিল এট এন্ড হাউস, মার্ডার ইন মেসোপটেমিয়া, ডেথ অন দ্য নাইল, অ্যাপয়েন্টমেন্ট উইথ ডেথ, এরকুল পোয়ারোজ ক্রিসমাস, স্যাড সাইপ্রাস, দ্য মার্ডার অ্যাট দ্য ভিকারেজ, দ্য বডি ইন দ্য লাইব্রেরি, দ্য মুভিং ফিংগার, এ মার্ডার ইজ এনাউন্সড, দে ডু ইট উইথ মিররস, এ পকেট ফুল অফ রাই, ৪:৫০ ফ্রম প্যাডিংটন, নেমেসিস ইত্যাদি। আগাথা ক্রিস্টি সমগ্র এর মধ্যে আরো রয়েছে বিখ্যাত সব নাটক, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা দৈর্ঘ্যের নাটক 'দ্য মাউজট্র্যাপ'। আগাথা ক্রিস্টি অনুবাদ বই এর সংখ্যাও অনেক, এমনকি ইউনেস্কোর বিবৃতি অনুযায়ী তাঁর বইগুলো সবচেয়ে বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর বাংলা ভাষায় অনূদিত বইয়ের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। অনূদিত আগাথা ক্রিস্টি বাংলা বই এর মধ্যে 'সিরিয়াল কিলার', 'গেম ওভার', 'পোয়েটিক জাস্টিস', 'খুনের তদন্ত', 'মার্ডার ইন মেসোপোটেমিয়া', 'থ্রি ব্লাইন্ড মাইস', 'এ বি সি মার্ডার' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য৷ সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭১ সালে তিনি 'ডেম' উপস্থিতিতে ভূষিত হন। ১৯৭৬ সালের ১২ জানুয়ারি আগাথা ক্রিস্টি ৮৫ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ারে মৃত্যুবরণ করেন।