আশির যখন জাপানে গিয়েছিল, ও তখন ছাত্র। পুরো আলাদা একটা সংস্কৃতি থেকে সেখানে গিয়ে সে দেশের নানা কিছু দেখে ও স্বাভাবিকভাবেই অবাক হয়েছে। বিচিত্র বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগত ঢঙে লেখা এই বইয়ের ছোট ছোট রচনাগুলো ওর সেই অবাক হওয়ার গল্প। জাপানি জীবনের নানা ব্যাপার দেখে ও শুধু একাই অবাক হয়েছে তা নয়, ওর স্বাদু চিত্তাকর্ষক আর আমেজি লেখার মৌতাতে পাঠক হিসেবে আমরাও যেমন কিছুটা অবাক হয়েছি। লেখাগুলো ছোট, মজাদার, বুদ্ধিদীপ্ত ও গতিশীল। বিচিত্র তথ্যে ভরা। লেখার এই প্রসাদগুণ দিয়ে আশির ছোট ছোট বেশ কিছু মানবিক গল্পের পাশাপাশি জাপানি জীবনের নানা পরিচয় ওখানকার মানুষের আত্মহত্যা, তাদের ভ‚তে ফিউনারেলের পরিপাটি ব্যবস্থা, শ্মশান, কাস্ট সমস্যা, কুসংস্কার, সামাজিক শিক্ষা, ভাষা, মিডিয়া, এমনি হরেক বিষয়কে রমণীয় করে তুলেছে। দেশটিকে ও ট্যুরিস্টদের মতো বাইরে থেকে দেখেনি, দেখেছে একজন বিদেশি হিসেবে, যে বহুদিন সে দেশে থাকতে থাকতে নানা বাস্তব ও মানবিক অভিজ্ঞতায় ভরে উঠেছে। এ বই তারই উষ্ণ-সজীব বিবরণ। এ জন্য বইটিতে জাপানের অন্তর্জীবনের খবর মেলে। ২০০৫ সালে জাপানে বেড়াতে গিয়ে আমি ও দেশের ওপর একটা ভালো বই নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু বইটি পড়ে জাপান সম্বন্ধে আমি যতটুকু জেনেছিলাম, আশিরের ‘জাপান কাহিনি’ পড়ে জাপানকে যেন জেনেছি তার চেয়ে বেশি। এর কারণ, এ গল্প জাপানের একেবারে ভেতরের গল্প। লেখকের ব্যক্তিগত রসবোধ, চাহনি, বর্ণনাভঙ্গি একে প্রাণবন্ত করেছে। বইটি আমাকে জাপানের বাসিন্দা করে তুলেছে। পড়ার সময় মনে হয়েছে আমি নিজেই দেশটিতে আছি। সব পাঠকের হয়তো তা-ই মনে হবে।
আশির আহমেদ জাপানের কিয়ুশু। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক । গবেষণা করছেন তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে । গবেষণাগার খুলেছেন বাংলাদেশে। সামাজিক সমস্যা সমাধানের গবেষণাগার গ্রামীণ কমিউনিকেসান্স এর গ্লোবাল কমিউনিকেশন সেন্টার এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। জন্ম সিলেটে হলেও শৈশব আর প্রাইমারি স্কুল কেটেছে মতলব থানার এখলাছপুর গ্রামে । তারপর কুমিল্লা জিলা স্কুল আর ঢাকা কলেজ। বুয়েটে অল্প কিছুদিন ক্লাস করার পর ১৯৮৮ সালের অক্টোবরে জাপান শিক্ষামন্ত্রণালয়ের বৃত্তি নিয়ে আন্ডারগ্রাজুয়েট কলেজ অব টেকনোলজি গ্রুপের প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে জাপানে আসেন । জাপানের ৪৭ টি প্রিফেকচারের ৪৭টিই চষে বেড়িয়েছেন, বানিয়েছেন হাজারো জাপানি বন্ধু। দীর্ঘ ২৮ বছরের জাপানের অভিজ্ঞতা বাংলাভাষীদের জন্য লিখে যাচ্ছেন আশির-ঢঙের জাপানকাহিনি ।