রাজনীতি হলো এমন বিশেষ কিছু নিয়ম-নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে বৈরিতার অবসান এবং পরস্পরবিরোধী স্বার্থ ও মূল্যবোধের সমন্বয় ঘটিয়ে সম্মিলিত স্বার্থে সমঝোতার দ্বার উন্মোচিত হয়। বস্তুত রাজনীতির লক্ষ্য হলো বিশেষ পদ্ধতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ব্যবহার করে আলাপ-আলোচনা, সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে আদর্শের ভিন্নতা, মতপ্রার্থক্য ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন এবং ‘পাবলিক পলিসি’ বা নীতি-কাঠামো প্রণয়ন। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, বিশেষত ক্ষমতাধর প্রতিপক্ষের মধ্যে একধরনের ‘রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার ফলে সকলের, অন্তত বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। দুর্ভাগ্যবশত, স্বাধীনতা-পরবর্তীকাল থেকেই বাংলাদেশে রাজনীতি নিতান্তই একটি ‘কন্টাক্ট স্পোর্টসে’ বা দ্বন্দ্বাত্মক প্রতিযোগিতায় এবং অনেক ক্ষেত্রে ‘ব্লাড স্পোর্টে’ পরিণত হয়েছে। যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ব্যবহার করে আলাপ-আলোচনা, সংলাপ ও কম্প্রোমাইজ বা ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এবং সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে রাজনৈতিক শক্তিগুলো রাজপথে শক্তি প্রদর্শনে এবং দ্বন্দ্ব-হানাহানিতে লিপ্ত হয়েছে। মস্তিষ্ক ও কৌশলনির্ভর ভদ্র মানুষের কর্মকাণ্ডের পরিবর্তে আমাদের রাজনীতি এখন অর্থ ও পেশির মালিকদের করায়ত্ত হয়ে পড়েছে, যাদের কাছে নিয়ম-নীতি, পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠান কোনো গুরুত্বই বহন করে না। বস্তুত রাজনীতি এখন নিতান্তই একধরনের ‘খেলায়’- পেশিশক্তি নির্ভর হয়েছে। এমনই একটি অসহনশীল, আইন-কানুনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল, উচ্ছৃঙ্খল এবং অর্থ ও পেশিশক্তি নির্ভর রাজনৈতিক সংস্কৃতি - বস্তুত অপসংস্কৃতি- বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য এক অশনিসংকেত। বর্তমান গ্রন্থে সন্নিবেশিত লেখনীগুলোতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংকটের এমন বিষয়াদিই আলোচিত হয়েছে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার একজন অর্থনীতিবিদ, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এবং একজন উন্নয়নকর্মী । বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের বর্তমান পর্যায়ে ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট'-এর গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর। এছাড়া তিনি নাগরিক সংগঠন 'সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত ও অর্থবহ করার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন। একইসঙ্গে তিনি জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভােকেসি ফোরাম’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ড. বদিউল আলম মজুমদার ১৯৪৬ সালে কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত থেকে তিনি ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬'র ছয় দফা ও ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৯-৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে স্কলারশিপ নিয়ে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। ড. বদিউল আলম মজুমদার 'ক্ল্যারমন্ট গ্র্যাজুয়েট স্কুল থেকে মাস্টার্স এবং কেইস। ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটোল ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ও ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন । এছাড়া তিনি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা'-তেও দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৯১ সালে ড. বদিউল আলম মজুমদার দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুধামুক্ত, আত্মনির্ভরশীল। বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’ ও ‘সুজন’-এর সাথে যুক্ত থেকে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশের বহুল পরিচিত একটি নাম । তিনি জাতীয় দৈনিকগুলােতে নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন, টেলিভিশন টক শাে’-তে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং সম-সাময়িক বিষয়ে গণমাধ্যমে মতামত প্রকাশ। করেন। ইতিমধ্যে ড. বদিউল আলম মজুমদারের নয়টি গ্রন্থ এবং তাঁর সম্পাদনায় আরও চারটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ।