বুদ্ধিজীবী হত্যা ছিল পাকিস্তানি শাসকদের অত্যন্ত দূরদর্শী ও ভয়ংকর পরিকল্পনার অংশ। কেননা তারা জানত, একটি জাতির বিবেকী ও বৃদ্ধিবৃত্তিক শ্রেণি ধ্বংস করে দেওয়া মানে রাষ্ট্র হিসেবে তাদের পঙ্গুত্বের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা। ফলে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় অবশ্যম্ভাবী জেনে তারা ১৪ ডিসেম্বর এদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুড়িজন বুদ্ধিজীবী শহিদ হন। তাঁরা ছিলেন আলোকসামান্য প্রতিভার অধিকারী। ২৬৬ দিনব্যাপী চলমান মুক্তিযুদ্ধে বর্বর সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশেীয় দোসররা প্রবল আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ে বুদ্ধিজীবীদের ওপর। এই হত্যাকাণ্ডের সময় তারা লক্ষ্যবস্তু করে স্বনামধন্য ও প্রগতিশীল শিক্ষক বুদ্ধিজীবীদের। শহিদ বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অত্যন্ত স্মরণীয় ইতিহাস। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, নতুন প্রজন্মের অনেকেই তাঁদের সম্যক পরিচয় জানে না । এই ব্যর্থতা জাতি হিসেবে সবার। কেননা, একটি দেশ স্বাধীন হয়ে উঠবার পিছনে যাঁদের রক্ত ও জীবনদানের মর্মন্তুদ ত্যাগ মিশে আছে তা যদি আমরা বিস্মৃত হই তা হলে স্বাধীনতার মূল্যবোধ ভূলুণ্ঠিত হবে। আমরা আমাদের অজ্ঞাতসারেই এই দেশ ও জাতির সমস্ত অর্জন বিসর্জন দিতে থাকব। মিল্টন কুমার দেব আমাদের সেই দায় থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত করার প্রয়াস নিয়েছেন। ইতিহাস বিষয়ের এই গ্রন্থলেখক উল্লিখিত বুদ্ধিজীবী কবে, কোথায়, কার দ্বারা, কীভাবে শহিদ হয়েছেন, সেই তথ্যসমূহ যথাযথ তুলে আনতে সচেষ্ট থেকেছেন। ফলে বইটি হয়ে উঠেছে ইতিহাসের একখানা অনন্য স্মারক ।