বাংলা সাহিত্যের পটভূমিকা নিয়ে অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধই লেখা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাহিত্যের পটভূমিকা নিয়ে তেমন কিছু কি লেখা হয়েছে? অবশ্য সাহিত্য যার ভেতর দিয়ে কিনা একটি জনগোষ্ঠীর ভূখণ্ডগত পরিচয় ফুটে ওঠে, তা, সাধারণভাবে, একটি নির্দিষ্ট দেশের হয় কি না, তা নিয়েও রয়েছে কূটাভাষ। তবে আলোচনা- সমালোচনা যাই থাক, নিঃসংশয়েই বলা যায়, যে রাজনৈতিক পরিক্রমার মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানের প্রায়উপনিবেশিক ভূখণ্ড পূর্ববাংলা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বাংলাদেশ নামে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে, সেই রাজনৈতিক পথরেখার কারণেই এই জনপদে চর্চিত বাংলা সাহিত্য আলাদা এক মাত্রা পেয়েছে। এই বইয়ে সাহিত্যিক-শিক্ষাবিদ জুলফিকার মতিন লিখেছেন, কীভাবে বাংলা সাহিত্য পূর্ব বাংলায় প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রাণতা পেয়েছে, বিকশিত হয়েছে এবং পুরাতনকে আত্তীকৃত করে নতুন এক মহাস্রোত সৃষ্টির দিকে এগিয়ে গেছে। অধিকাংশ সাহিত্যিক এবং পাঠকই সাহিত্যকে যাপন করে থাকেন সাহিত্যের ধারাবাহিকতার মধ্যে। এভাবে তারা সেই ধারাবাহিকতা বয়ে নিয়ে যাওয়ার মধ্যদিয়ে সৃষ্টি করেন সাহিত্যের ক্ষেত্রে রক্ষণশীলতা। বাংলাদেশের সাহিত্যে সেই রক্ষণশীলতা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে, কীভাবেই বা আবার তাতে ফাটল ধরেছে, জুলফিকার মতিন তা অবলোকন করেছেন নিমগ্ন চোখে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের প্রত্যেক কৌতূহলী পাঠকের জন্যেই অপরিহার্য এই গ্রন্থ।
জুলফিকার মতিন-এর জন্ম ২৪ জুলাই, ১৯৪৬ পাবনার মৈত্রবাঁধায়। কচিকাঁচার আসর, দৈনিক ইত্তেফাক-এ তাঁর প্রথম কবিতা আমরা প্রকাশ পায় ১৯৫৬ সালে । প্রথম কাব্যগ্রন্থ স্বৈরিণী স্বদেশ তুই অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ কোন লক্ষ্যে হে নিষাদ, তাই তাে সংবাদ নেই, বৈশাখে ঝড়জল। রােদের কবিতা, নীলিমাকে চাদ দেব বলে, ঘামের ওজন কত ভারী, দুঃখ ভােলার দীর্ঘশ্বাস, এই সংবাদ এই একুশে, কার চরণচিহ্ন ধরে, জলের সংসার ইত্যাদি। উপন্যাস সাদা কুয়াশার পাখি, রৌদ্রছায়া ভালবাসা, বাড়ীর নাম পান্থশালা, মানব মানবী ও গল্পগ্রন্থ রাখ তােমার উদ্যত বাহু, পাগল হবার রূপকথা, আকাশ বাসর, অন্যরকম, টেলিমেকাস, অন্ধকারের জন্তুরা এবং মুষল পর্ব। ১৯৭১ সালে কৃষকগঞ্জ বাজার, সলপ-এ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে তাঁর শিক্ষকতা জীবনের শুরু । অবসর গ্রহণের পর এখন রাজশাহীতেই বাস করেন।