মূল গীতের পূর্বে গৌরচন্দ্রিকা আর প্রকাশনা শিল্পের মলাট-বন্দনার ফারাক খানিকটা গদ্য-পদ্য’র মতনই। শিকারজীবী মানবসমাজ ফসলজীবী হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ গৃহনীড় রচনা করেছে; আর যার যার ভাষাভিত্তিক সাহিত্যরচনার কালপর্বটিও শুরু হয়েছে। হাজার-কয়েক বছর পেরিয়ে গদ্যই সাহিত্যের মূলস্রোতধারা হয়ে উঠেছে। এখন শিল্পবিপ্লবের মধ্য দিয়ে শ্রমদাস-শিকারের তুঙ্গস্পর্শী শিল্পব্যবস্থার যুগে শুরু হয়েছে জাংক ফুডের চলনসই প্রজন্মের যুগ। উন্নত প্রযুক্তিধারী শ্রমদাস-শিকারী রাষ্ট্রগুলির জনবিচ্ছিন্ন নেতৃত্বের পরিচালনায় ‘কড়ি থেকে কাগুজে মুদ্রা’ হয়ে সাইবার কারেন্সির পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এই জীবজৈবসুখবিলাসী সমাজব্যবস্থার ধারক মানুষগুলি হারিয়ে ফেলেছে চিরাচরিত কালের সন্তান-বাৎসল্যবোধ, দাম্পত্যবোধ, জীবনযাপনবোধ। পুঁজিপাট্টার বোচকা বগলে লুকিয়ে নিরাপদ রাষ্ট্রে ডেরা বাঁধার লক্ষ্যই তাদের জীবনদর্শন। বিশ্বসাহিত্যে কমই চিত্রিত হয়েছে নবতর এ জীবনদর্শন। বাংলাসাহিত্যের এক অগ্রগামী লেখক ইমতিয়ার শামীম। তেমন এক পিছিয়ে থাকা রুগ্ন রাষ্ট্রের সুবিধাভোগী মানুষের জীবনের চৌম্বক চিত্রায়ণ ঘটেছে তাঁর এই গ্রন্থভুক্ত ছোটগল্পগুলোতে। ‘স্যাম্পল জেনারেশন’ থেকে শুরু করে ‘হলুদের গাঢ় সমাচার’-এই গল্পগ্রন্থের প্রতিটি গল্পই নতুনের নিশানা দেখায়।
জন্ম : ১৩৭১ বঙ্গাব্দ, ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ ; সিরাজগঞ্জের সলপ জনপদের রামগাঁতী গ্রামে। মা : হামিদা সুলতানা। বাবা : চৌধুরী ওসমান। পেশা : সাংবাদিকতা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা : এমএসএস [সমাজ বিজ্ঞান]; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ : ডানাকাটা হিমের ভেতর (উপন্যাস, ১৯৯৬)। অন্যান্য উপন্যাস : আমরা হেঁটেছি যারা, চরসংবেগ, অন্ধ মেয়েটি জ্যোৎস্না দেখার পর, মোল্লাপ্রজাতন্ত্রী পবনকুটির, তা হলে বৃষ্টিদিন তা হলে ১৪ জুলাই, আমাদের চিঠিযুগ কুউউ ঝিকঝিক, মৃত্যুগন্ধী বিকেলে সুশীল সঙ্গীতানুষ্ঠান, নীল কৃষ্ণচূড়ার জন্মদিনে, শাদা আগুনের চিতা, অন্তর্গত কুয়াশায়, যারা স্বপ্ন দেখেছিল। স্বীকৃতি : ‘মৃত্যুগন্ধী বিকেলে সুশীল সংগীতানুষ্ঠান’ গ্রন্থের জন্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্য পুরস্কার (২০১২), লোক সাহিত্য পুরস্কার (২০১৩), জীবনানন্দ সাহিত্য পুরস্কার (২০১৪), ‘শীতের জ্যোৎস্নাজাবলা বৃষ্টিরাতে’ গ্রন্থের জন্যে প্রথম আলো বর্ষসেরা সৃজনশীল গ্রন্থ পুরস্কার (১৪২১), কিশোর উপন্যাস ‘পাতার বাঁশি বাজে’র জন্যে শিশু একাডেমি পুরস্কার (১৪২১) এবং কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০২০)।