আমার কাছে উপন্যাস হচ্ছে একটি বটবৃক্ষ। যেখানে ঝড়, বৃষ্টি, রোদ, শীত, তাপ, কুয়াশা, শিশির, পাখি আর পিপিলিকার বসতি। আবার বৃক্ষের সাথে দুষ্ট লোকের অবিচার এসব মিলিয়েই গড়ে ওঠে উপন্যাস। এ উপন্যাসের জন্য লেখকের বুকের ভেতর জন্ম নেয় অসামান্য মায়া। ভালোবাসা। আমি যখন লিখতে শুরু করি তখন থেকেই স্বদেশী আন্দোলন, দেশভাগ, দাঙ্গা, ভাষাআন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি গভীর টান বোধ করি। সব থেকে বড় কথা স্বাধীনতার চেয়ে মূল্যবান আমার কাছে আর কিছুই মনে হয় না। প্রবাসে (পরাধীন) থেকে আরও বেশি অনুভব করেছি স্বাধীনতাকে। এর আগেও আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করেছি। ভাষা আন্দোলন নিয়েও কাজ আছে আমার। যে ভ‚মিতে স্বপ্নেরা বাঁচে বইটি একেবারেই অন্যরকম। এখানে অত ইতিহাসের চাপাচাপি নেই, নেই দিন ক্ষণের বাড়াবাড়ি। আমি সরল ভাবে বলতে চেয়েছি রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের কথা। কোনরকম আস্তর, রংচং ছাড়াই বলে গেছি কতটা কষ্ট করে যোদ্ধারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছে। যুদ্ধকালীন সময় একটি চিঠির জন্য জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে। দিনের পর দিন আমাকে এ সব যোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার নিতে হয়েছে। এদেশ থেকে ভারতের বিলোনিয়া বর্ডার পার হয়ে, ভারতের নানা জায়গা বন পরিষ্কার করে তাবু খাটিয়ে (পরে ক্যাম্পে করে) ট্রেনিং নিয়ে আবার দেশে ফিরে এসে খলিলুর রহমান খান কিভাবে তাদের একশ পঁয়ষট্টি জনের দল নিয়ে একটি স্থায়ী ক্যাম্প করেছিল, সে কথা বলতে চেয়েছি। আবার এখান থেকে কেউ-কেউ চলে গেছে নৌ-কমান্ডোতে। অপারেশন জ্যাকপটে অংশ নিয়েছে তারা।
নিগূঢ় বোধ সমৃদ্ধ কথাসাহিত্যিক কাজী সাইফুল ইসলামের শিল্প চর্চার পরিমণ্ডলে গল্প, উপন্যাস, কবিতাই প্রধান উপজীব্য হয়ে ধরা দিয়েছে। কেবল এ তিন শাখাতেই বিচরণ করে স্থবির হন নি তাঁর সাহিত্য পিয়াসি মন- মনের আবেদন পূরণে প্রবন্ধ এবং গবেষণাধর্মী কাজে নিমজ্জিত হয়েছেন তিনি আর চলমান বাংলা সাহিত্যে রেখেছেন উল্লেখযোগ্য অবদান। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশ ভাগের সময়কাল সহ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বেশ নিখাদ ভাবেই চিত্রায়িত হয়েছে তাঁর উপন্যাসে। লেখনীর ভেতরে গল্পের চাদর মুড়িয়ে বাঙালী জাতির ইতিহাস বিধৃত করার যে শৈল্পিকতা তিনি উন্মোচিত করেছেন, তা চিরায়ত ধারা থেকে বেশ খানিকটা আলাদা বলেই বিবেচিত। কাজী সাইফুল ইসলাম বিশ্বাস করেন- "সাহিত্য কেবলমাত্র বিনোদনের উৎসই নয়- সাহিত্য এমন এক মহামানব যার আলোয় ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে জীবন ও সভ্যতা।"