যখন ভাবলাম তাকে নিয়ে লিখবাে। সে আর কেউ নয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী। যার হৃদয়ের প্রতিটি রক্তকণা আর নিঃশ্বাসে জড়িয়ে আছে বাঙলা শব্দটি। কি এক নিবিড় ভালবাসায় তাঁর আষ্টেপৃষ্ঠে, আর গভীর যতনে তার হৃদয়ে মন্দিরে বাঙলাকে তিনি ধারণ করে আছেন। বাঙলার মানুষের কথা ভেবে যিনি কাঁদতেন সরল আঁখি জলে। যিনি হাসতেন হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ঢেলে। বাঙলার দুর্দশা দেখে আবার দু’চোখে বিদ্রোহের আগুন জ্বেলে নিতেন অকুষ্ঠিত। আমি আমার ক্ষুদ্র লিখনিতে আর অপক্ক অক্ষরে কি লিখবাে হিমালয়ের মতাে এই মানুষটির সম্বন্ধে, তাই ভেবে সংকুচিত হতে লাগলাম বার-বার। কেন যেন সাহস হচ্ছিল না। হৃদয়ের উর্ধ্বশ্বাস আর সঞ্চলিত রক্তের উদ্দামতায় বার-বার যখন কুষ্ঠিত আমি। ঠিক তখন মনে হলাে, যে মানুষটি আপনার চেয়েও আপন হয়ে রয়েছে আমাদের হৃদয়ের মাঝে, তাকে নিয় কিছু না লিখলেই যেন নয়। যদি ভুল হয়, যদি তার সঠিক মূল্য, ভাব ফুটিয়ে তুলতে না পারি তাহলে ক্ষমা পাবাে নিশ্চয়ই। কারণ ঈশ্বর জানেন আমার অন্তরের অন্তিমটুকুও। সেই বিশ্বাসেই লিখতে বসলাম। জানিনা কতটুকু পারবাে। যদি বিধাতা বাঁচিয়ে রাখেন তাহলে সারা জীবনই হয়তাে লিখে যাবাে কবিতা, উপন্যাস, নাটক, গান। কিন্তু তাকে নিয়ে কিছু না লিখলে যেন বৃথাই যাবে এ জীবন।
নিগূঢ় বোধ সমৃদ্ধ কথাসাহিত্যিক কাজী সাইফুল ইসলামের শিল্প চর্চার পরিমণ্ডলে গল্প, উপন্যাস, কবিতাই প্রধান উপজীব্য হয়ে ধরা দিয়েছে। কেবল এ তিন শাখাতেই বিচরণ করে স্থবির হন নি তাঁর সাহিত্য পিয়াসি মন- মনের আবেদন পূরণে প্রবন্ধ এবং গবেষণাধর্মী কাজে নিমজ্জিত হয়েছেন তিনি আর চলমান বাংলা সাহিত্যে রেখেছেন উল্লেখযোগ্য অবদান। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশ ভাগের সময়কাল সহ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বেশ নিখাদ ভাবেই চিত্রায়িত হয়েছে তাঁর উপন্যাসে। লেখনীর ভেতরে গল্পের চাদর মুড়িয়ে বাঙালী জাতির ইতিহাস বিধৃত করার যে শৈল্পিকতা তিনি উন্মোচিত করেছেন, তা চিরায়ত ধারা থেকে বেশ খানিকটা আলাদা বলেই বিবেচিত। কাজী সাইফুল ইসলাম বিশ্বাস করেন- "সাহিত্য কেবলমাত্র বিনোদনের উৎসই নয়- সাহিত্য এমন এক মহামানব যার আলোয় ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে জীবন ও সভ্যতা।"