মানুষকে আমরা বাইরে থেকে যা দেখি, তা আসল মানুষটি নয়। মানুষটি যখন একা থাকে, তখন সে যা করে, যা ভাবে, সে আসলে তাই। প্রকৃত মানুষটিকে জানা যায় তার একান্ত গোপনীয় বিষয়গুলির মাধ্যমে। গোপনীয় বিষয়গুলির উৎপত্তি কোথায়? শিশু থেকে বড় হতে হতে সে সমাজের চাপে বা পারিবারিক চাপে যে সমস্ত আবেগগুলিকে অবদমন করতে বাধ্য হয়, সেই আবেগগুলি তার ভিতরে আবদ্ধ থেকে যায়। আবেগ হল শক্তি। স্বাভাবিক শক্তি আবদ্ধ হতে হতে রূপান্তরিত হয় অপশক্তিতে। এই অপশক্তিকে আমি বলেছি অন্ধবিন্দু। কেননা, এই অপশক্তি যখন নিজেকে প্রকাশ করে, তখন সে ভাল বা মন্দ দেখে না। দেখার চোখ নেই তার। এই অন্ধবিন্দুর কাছে অসহায় মানুষটি হয়ে উঠে বিকৃত মানসিকতার। একজন মানুষের ভিতরে এরকম অনেকগুলো অন্ধবিন্দু থেকে যেতে পারে। বড় হয়ে বা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যখন মানুষটি যা কিছু করার সামর্থ্য অর্জন করে, তখন সে অন্ধবিন্দুগুলির আকাঙ্ক্ষা পুরন করে এবং বিকৃত আনন্দ ভোগ করে। সমাজের দৃষ্টিতে এই ভোগ বৈধ নয় বিধায় সে এসব করে গোপনে। আমি যদি চিত্রকর হতাম, তাহলে একটি মুখ আঁকতাম। যে মুখ হত বাংলাদেশের সকল মানুষের সাধারণ মুখ। সেই চিত্রটির নাম দিতাম ‘চোরের মুখ’। আমি আঁকতে পারি না। তাই গল্প লিখে চেষ্টা করেছি একটি চোরের মুখ দেখাতে। গোপনে কোন বস্তু হাতিয়ে নেয়াই চুরি করা নয় বরং প্রকৃত চুরি করা হল অন্ধবিন্দুগুলির দ্বারা পরিচালিত হওয়া। আর আমাদের সমাজে কে আছে এমন যার ভিতরে অন্ধবিন্দু নেই? এই উপন্যাসে আমি চেষ্টা করেছি মানুষের অন্ধবিন্দুগুলিকে উন্মোচন করে দেখাতে। সেই চেষ্টা কতোটুকু সফল হল আর উপন্যাস হিসেবে এটা কতোটুকু শিল্প হয়ে উঠল, তা বিচার করবেন পাঠক।