তাহেরকে নিয়ে লেখার তাগিদ আমার তাহেরের মৃত্যুলগ্ন থেকেই। ’৭৫—‘৭৬ বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাহের ছিলেন একমাত্র আলোচ্য ব্যক্তিত্ব। সে সময় তাহেরই ছিলেন শাষক—শোষকগোষ্ঠীর একমাত্র ত্রাসের নাম। বামপন্থী তকমাধারী কোন সংগঠন বা ‘কমরেড’ নামধারী কোন বাম—ব্যপারি নয়, ’৭৫—এর ৭ই নভেম্বর সিপাহী—জনতার বিপ্লবী অভ্যুত্থান সংঘটনের মাধ্যমে কর্নেল তাহের এবং জাসদ—গণবাহিনীই সর্বহারা শ্রেণীর পদযাত্রায় গতি এনে দিয়েছিল। এই গতিকে তীব্রতর করে মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটনের দায়িত্ব ছিল এদেশের বামপন্থী সংগঠনগুলোর। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশে সত্যিকার কোন শ্রমিক শ্রেণীর পার্টি গড়ে না ওঠায় কথিত বামপন্থীরা পরিস্থিতির অপব্যখ্যা করে নিজেদের ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীস্বার্থে সাম্রাজ্যবাদের নির্লজ্জ পদলেহনে মেতে ওঠে। তাহের ও তাঁর সহযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নিরন্তর ষড়যন্ত্র চক্রান্তের জাল বিস্তার করে চলে। ফলে ৭ই নভেম্বর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট সর্বহারা বিপ্লবের শেষ সম্ভাবনাটুকুও বিদূরিত হয়ে যায়। তাহেরের মৃত্যু হয়েছে আজ সাড়ে তিন বছর। অথচ এই দীর্ঘদিনে এই বিপ্লবী বীরের সন্ধান দেশবাসী বিস্তারিত জানতে পারেনি। তাহের কে ছিলেন, কি তিনি চেয়েছিলেন করেছিলেন, ৭ই নভেম্বর কেন সংঘটিত হলো, এই বিপ্লবের সঙ্গে তাহের কতটুকু সম্পৃক্ত ছিলেন, কেন তাঁকে ফাঁসি দেয়া হলো, কিভাবে তিনি হাসিমুখে প্রাণ দিয়ে গেলেন, কোন উজ্জীবনী মন্ত্রে তাহের দীক্ষিত হয়েছিলেন— এসব জানার কৌতূহল দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকেরই। এতদিন দেশে সামরিক শাসন ছিল, আজ বেসামরিক সরকার ক্ষমতায়। গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। কাজেই, সেদিন যা বলা যায়নি কিছুটা হলেও আজ তা যায়। আজ পূর্ণাঙ্গ আলোচনার একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।