যেই মানুষটির সাথে ৪০ বছর রাজনীতি করেছেন তাঁকে হত্যা করেছেন দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করে। হত্যার পর রেডিওতে যখন ভাষন দিতে যান এবং আগত বাকিদের জন্য রাখা ছিলো সে ভাষনের কপি। শফিউল্লাহ ভাষনের কিছু শব্দ নিয়ে প্রশ্ন উঠাতেই বলে ফেললেন তিন মাস ধরে কাজ করছি এই ভাষন নিয়ে। শফিউল্লাহ তাঁর গ্রন্থেই জানান সে কথা বঙ্গবন্ধুর বড় পূত্রের বিয়েতে ছিলেন উকিল বাবা, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে ডাকতেন ভাবী। বঙ্গবন্ধুকে ডাকতেন বটবৃক্ষ। উপহারও দিয়েছিলেন একটি বটবৃক্ষের অবয়ব। কিন্তু একইসাথে খুন করবার পরিকল্পনাও এঁটেছেন ওই একই সময়ে। মিত্র বাহিনীর কাছে পাকিস্তানী বাহিনীর আত্নসমপর্ণের অনুষ্ঠানকে বলেছিলেন ‘কুৎসিত’ মুক্তিযুদ্ধেও করতে চেয়েছিলেন ষড়যন্ত্র। যুদ্ধ বন্ধ করে পাকিস্তানের সাথে করতে চেয়েছিলেন একটি কনফেডারেশন। হয়ে থাকতে চেয়েছিলেন একজন পাকিস্তানী। নিজেকেও সাজিয়েছেন সেভাবে। মাথায় জিন্নাহ টুপীর একই কায়দায় চোখা কালো টুপি, গায়ে কালো আচকান। জয়প্রকাশ যথার্থই বলেছিলেন যে তার অবয়বে বাঙালী মনে হতো না। মনে হতো একটু বেশীই মুসলমান। পুরো জীবনটার চাষাবাদ করে গেলেন ইসলাম ধর্মের সাচ্চা বান্দা সেজে কিন্তু সারাটি জীবন যা করেছেন তা সবই ছিলো পবিত্র কোরান ও হাদীসের বিপরীত। দেখাতে চেয়েছেন ইসলামের সেবক কিন্তু ভেতরে ভেতরে থেকে গেছেন এক ভয়ানক মৌলবাদী কেননা এই ইসলামকে তিনি নিজের মত করে তৈরী করে নিয়েছিলেন। যাকে আমরা বলি কাস্টমাইজড ইসলাম। নিজের মত করে ব্যবহার করা, নিজের আখের গোটাবার জন্য ঠিক যতদূর প্রয়োজন। সাক্ষাৎকারে কুম্ভীরাশ্রু ফেলে বলেছিলেন তিনি খুনের কথা জানলে মুজিবকে বলতেন কিন্তু সে সাক্ষাৎকারেই আবার খুনীদের ‘সূর্য সন্তান’ বলতে এতটুকু ভুল করেননি তিনি। ধার্মিক সেজে হয়েছেন পশ্চিমাদের গোলাম করেছেন মার্কিনিদের তাঁবেদারী অথচ গোপন নথিতে দেখা যায় মার্কিনিরা বিশ্বাস করতে পারতেন না মোশতাককে। প্রকাশ্যে সেজেছিলেন ভারত বিরাগী কিন্তু অনুকম্পার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ভারতের দিকেই। এই ছিলো মোশতাক। বিচিত্র এক বিভ্রান্তিকর জীবন কাটিয়ে গিয়েছেন তিনি মোশতাকের মনের যতটুকু দেখতে পাওয়া যায় ততটুকু জুড়েই বিভ্রান্তি আর মিথ্যে। সাংবাদিক আবু আল সাঈদ তাঁর গ্রন্থে লিখেছিলেন আরেক সাংবাদিককে উদ্বৃত করে, এবং তা ছিলো খন্দকার মোশতাকের জইন্য এক যথার্থ বাক্য। ‘তার (মোশতাকের) জীর্ণদেহটির সর্বত্র সময়ের দাগ দেখলে মনে হবে বাংলাদেশের তাবত কলংকের ইতিহাস ওতে লেখা রয়েছে।