‘জীবন মহাশিল্পী । সে যুগে যুগে দেশে দেশান্তরে মানুষকে নানা বৈচিত্র্যে মূর্তিমান করে তুলছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের চেহারা আজ বিস্মৃতির অন্ধকারে অদৃশ্য, তবুও বহুশত আছে যা প্রত্যক্ষ, ইতিহাসে যা উজ্জ্বল। জীবনের এই সৃষ্টিকার্য যদি সাহিত্যে যথোচিত নৈপুণ্যের সঙ্গে আশ্রয় লাভ করতে পারে তবেই তা অক্ষয় হয়ে থাকে ।’ ‘চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ' উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে মনে হল জীবনের এই আনন্দ-যাত্রায় কিছু কিছু সৃষ্টি হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশ প্রজ্ঞা আর প্রাচুর্যে ভরিয়ে দেয় । এই উপন্যাস যে ভাষাভঙ্গি, যে প্রেক্ষাপট, যে জীবন-দর্শনকে অবলম্বন করে দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে নতমুখী না হয়ে উপায় থাকে না । ঘাটুছেরা নিয়ে দুই প্রভাবশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই, ক্ষুধার সাথে যুদ্ধ তবু ঘেটুগানের মাধ্যমে জীবনের আদিম চাহিদার উন্মুক্ত মঞ্চায়ন যেন বারবার মনে করিয়ে দেয়, ক্ষমতা এক রহস্যময় শক্তি যা মুহূর্তেই কিনে অথবা কেড়ে নিতে চায় সবটুকু। আর তাই তো ক্ষমতাশালী মানু মিয়ার দাম্ভিকতা আর আইয়ুব খানের শোষণনীতি একই সমান্তরালে খুঁজে পাওয়া যায়। অথচ তার বিপরীতে ‘খেলাভাই’ যেন এক প্রতিবাদ । এক ফুসে ওঠা অমোচনীয় অবয়ব। শেখ লুৎফরের এই অসামান্য উপন্যাসটি প্রকাশ করতে পেরে জলধি আনন্দিত। উপন্যাসটি মননশীল পাঠকের মনোযোগের বিশেষ দাবীদার। মহাকালের স্লেটে অন্তত কিছু দাগ জমিয়ে যাক এই উপন্যাসটি। নাহিদা আশরাফী লেখক ও সম্পাদক