কবিতা কখন কীভাবে লিখি, মনের ভাবকে কবিতা করে তুলতে কোন কৌশল অবলম্বন করি, শব্দবিন্যাসের কারণে কীভাবে কবিতায় গতিময়তা যোগ হয়, কেন কবিতা পড়তে গিয়ে পাঠককে হোঁচট খেতে হয়, কবিতায় কেন উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্প-জমজ-অলঙ্কার ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে, ‘গদ্য’ আর ‘কবিতা’ নির্মিতিতে পার্থক্য কোথায়, কবিতায় ছন্দের আবশ্যিকতা কেন; এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এবং নিজের অর্ধশতাব্দী কালের কাব্যচর্চার আদ্যোপান্ত উদ্ধার করতে গিয়ে, নিজেকেই প্রশ্ন করেছি বারবার, নিজের উত্তরেই সাজিয়েছি ‘কবিতার মায়াবন: শব্দ-শিল্প-ছন্দ-প্রকরণ’। আর এটিকে ‘আত্মানুসন্ধান’ নামে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেছি রন্ধুদের কাছে। আত্মানুসন্ধানে অবশ্যই আমি নিজে, আমার স্বজন-সগন-বন্ধুদের এবং বন্ধুর ছদ্মাবরণে যদি কোনো শত্রু অথবা দুর্জন থাকেন, সবার উপর আলো ফেলতে চেয়েছি; সবাই যেন আত্মানুসন্ধানের আলোয় নিজের মুখ আয়নায় দেখে নিতে পারেন; যেমন আমি নিজেও নিতে চেয়েছি। হাল আমলে ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, সন্দেহ নেই। এই মাধ্যমটি সমাজ-সংস্কৃতির বিভিন্ন আঙিনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে; শিল্প-সাহিত্য ক্ষেত্রেও সন্দেহাতীতভাবে অবদান রাখার পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে ফেসবুক। ফেসবুকের কল্যাণেই আজ বঙ্গ-জনপদে লক্ষ কবির প্রাদুর্ভাব দেখতে পাচ্ছি; অবশ্য আমরা যারা এটিকে ব্যবহার করছি, তারা সঠিক ব্যবহার করতে পারছি কি-না সেটা ভেবে দেখা গুরুত্বপূর্ণ। ফেসবুকের এই উচ্চ ফলনশীল কাব্যাবাদই প্রথমত আমায় আত্মানুসন্ধানে ব্রতী করেছে; সুতরাং গোড়াতেই আমি এ রচনার জন্য প্রযুক্তির কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাখতে চাই। অনধিকারচর্চায় আমি কখনোই আগ্রহী নই, সঙ্গত কারণেই আমার এ ‘আত্মানুসন্ধান’ আয়োজন, কবি এবং কবিতা বিষয়েই সীমাবদ্ধ রাখতে সচেষ্ট থেকেছি। আমাদের পাঠ-অনীহা আর ধৈর্য-ঘাটতির কথা বিবেচনায় রেখে সংক্ষিপ্ত পরিসরে চুম্বক কথাগুলো দিয়ে বলতে চেষ্টা করেছি। আমার সে আয়োজনে অনেকেই যুক্ত হয়েছেন; আমার বিশ্বাস আত্মানুসন্ধানের এ আয়োজন যত বিস্তৃত হবে, কবি এবং কবিতার অসুস্থতা ততই কমবে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সময়ে আত্মানুসন্ধানের মাধ্যমে কাব্যাঙ্গনে পাঠ-অনীহাসহ অজ্ঞতা-কূপমণ্ডূকতা-অনাচার-চৌর্যবৃত্তি-দুরাচর-ভ্রষ্টাচার-প্রকরণহীনতা-ধান্দাবাজির মতো ভাইরাসগুলো হয়তো তাড়াতে পারিনি, কিন্তু সংক্রমণরোধে উদ্যোগ নিয়েছি সবাই মিলে; এই প্রতীতি বুকে নিয়ে ‘কবিতার কলা-কৌশল’-এর জটিল এবং সহজতর পাঠ গ্রন্থাকারে প্রকাশের উদ্যোগ। রচনাকালে যাঁরা সাথে ছিলেন, যাঁরা বইটির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন; যাঁরা বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়েছেন এবং শেষপর্যন্ত প্রতিবিম্ব প্রকাশের পক্ষে সাংবাদিক-কলামিস্ট Abul Khair বইটি প্রকাশে আগ্রহ প্রকাশ করায় কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কবিতা বিষয়ে আগ্রহী পাঠক যদি তৃপ্তি পান, এবং কবিবন্ধুরা যদি সামান্যও উপকৃত হ’ন, তাহলেই আমার শ্রম সফল হয়েছে মনে করবো। ফরিদ আহমদ দুলাল
ফরিদ আহমদ দুলাল ; জন্ম ১৮ মে ১৯৫৬, ময়মনসিংহে। বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর ফরিদ আহমদ দুলাল-এর বেড়ে উঠা ময়মনসিংহের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। সময়ের সকল সংকট মাড়িয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের অনিবার্য একজন। চার দশকের অধিককাল ধরে লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত থেকে গড়ে তুলেছেন নিজেকে; সম্পন্ন করে গড়েও নিয়েছেন; নিজেকে অতিক্রমও করেছেন বারবার | সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় লিখেছেন নিষ্ঠার সাথে এবং প্রতিটি শাখাতেই যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। আটটি নাটক, একটি গল্প, একটি উপন্যাস ও তিনটি গবেষণা গ্ৰন্থঃ নাটক কবিতা-গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি নিজেকে গবেষণাকর্মেও নিয়োজিত করেছেন; লোকসংস্কৃতির পীঠস্থান 'বৃহত্তর ময়মনসিংহের লোকসংস্কৃতি শনাক্তকরণ, মূল্যমান নির্ধারণ ও মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ” শিরোনামের কাজে নিজেকে যুক্ত করেছেন বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি শনাক্তকরণ, মূল্যমান নির্ধারণ ও মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ' প্রকল্পে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিতে প্রফেসর সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রবাদ-প্রবোচন’ ও কবি মুহম্মদ নূরুল হ্রদার নেতৃত্বে বাংলাদেশের লোকসংগীত’ বিষয়ক গবেষণা ও গ্রন্থের কাজ করেন। সফল সংগঠক, ছােট-কাগজ সম্পদক, সংস্কৃতজন ফরিদ আহমদ দুলাল-এর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার কাছে।