২০২৩ সালের ২৬-২৮ মার্চ দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সার্ক সাহিত্য উৎসবে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখকসত্তার শিল্পরূপ মূল্যায়ন করে তাঁকে মরণোত্তর বিশেষ সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। সহজ-সরল ভাষায় জীবনঘনিষ্ঠ সত্যবয়ানে প্রণীত তাঁর গ্রন্থত্রয়ী (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও আমার দেখা নয়াচীন)-এর জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়। জাতির জন্য অবশ্যই বিষয়টি গৌরবের। এখানে স্মর্তব্য এর আগেই, প্রায় দশ বছর ধরে লেখক শেখ মুজিবুর রহমানের সাহিত্যসত্তা বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে সাহিত্য-সংস্কৃতির মাসিক পত্রিকা শব্দঘর-এ। দেশের খ্যাতিমান প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক ও কবিরা দীর্ঘদিন ধরে এই সাহিত্যপত্রে প্রবন্ধ-নিবন্ধ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গল্প-কবিতা লিখে আসছেন। সেসব রচনা স্থান পেয়েছে এই বইয়ে। কয়েকটি নতুন রচনাও প্রাসঙ্গিক কারণে নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির আড়ালে হয়তো এর মধ্যে কোনো কোনো প্রবন্ধ-কবিতা-গল্প অন্য কোনো গ্রন্থে সংকলিত হয়ে থাকতে পারে। তবু বলা যায়, বাঁক ঘোরানো ব্যাপক নতুনত্ব অবলোকনের সুযোগ পাবেন অনুসন্ধিৎসু পাঠক। বিশেষ করে লেখক শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রন্থত্রয়ীর সার্ক সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ প্রাপ্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর রচনার মনস্তাত্ত্বিক অনুষদ ও সাহিত্যমানস বিচারের চেষ্টা নেওয়া হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ রূপ উদঘাটন করতে হলে আরও বিচার- বিবেচনা গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। সার্ক সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত গ্রন্থত্রয়ীর লেখক শেখ মুজিবুর রহমান ও সম্পাদকের পক্ষে দিল্লিতে এই ঐতিহাসিক সম্মাননা গ্রহণ করেন প্রাবন্ধিক-নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ও গবেষক মফিদুল হক। গ্রন্থত্রয়ীর সম্পাদক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ঢাকায় ফিরে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন এই দুই সুধী। লেখক শেখ মুজিবুর রহমান, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান কালস্রোতে অতীত হলেও অধিষ্ঠিত রয়েছেন জাতির চিত্তে, বহমান রয়েছেন অক্ষরস্রোতে। বিশ্বজুড়ে নানা দেশে নানা ভাষায় তাঁর বই অনূদিত হয়েছে। আত্মস্মৃতি ছাড়াও তাঁকে নিয়ে দেশে-বিদেশে অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়েছে। সব মিলিয়ে তিনি অক্ষরভেলায় চড়ে কালের স্রোতে অমর হয়ে থাকবেন, প্রাণেমনে আমরা ধারণ করি সেই বিশ্বাস।
তিনি একদিকে কথাসাহিত্যিক, অন্যদিকে মনোশিক্ষাবিদ। ২০১৮ সালে কথাসাহিত্যে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। জাপানের ১২তম ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব সাইকিয়াট্রির ফেলোশিপ প্রোগ্রামে নির্বাচিত হন বিশ্বের প্রথম সেরা ফেলো। জন্ম ১৯৬০ সালের ২ জানুয়ারি সাগরকন্যা সন্দ্বীপে। এমবিবিএস করেছেন সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে। তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতির মাসিক ’শব্দঘর’র সম্পাদক এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএমএইচ)-এর একাডেমিক পরিচালক। ২০১২ সালে তাঁর মনস্তত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থ ‘মানব মনের উদ্বেগ ও বিষন্নতা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য করা হয়।