রাত গভীর হলে অদ্ভুত এক শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আরমানের। শব্দটা অচেনা হলেও এটা হিংস্র কোনো জীবজন্তুর গর্জন অনুমান করা যায়। শব্দের উৎসটা খুব কাছাকাছি নয়। বেশ দূর থেকে আসছে শব্দটা। এই জনমানবহীন নির্জন রহস্যময় দ্বীপে তাহলে হিংস্র জীবজন্তুর আনাগোনা রয়েছেÑ এ ব্যাপারে কিছুটা নিশ্চিত হতেই তার সারা শরীর আতঙ্কে কাঁটা দিয়ে ওঠে। এখানে যেকোনো সময় ভয়ংকর কিছু ঘটে যেতে পারে। তেমন পরিবেশে নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে সময় পার করার সুযোগ নেই। হিংস্র জীবজন্তু কিংবা সন্ত্রাসী কোনো মানুষ যদি তাদের চারজনকে মারতে আক্রমণ করে তাহলে প্রতিরোধ করার মতো কিছুই নেই। বেঘোরে প্রাণ হারানোর বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই তাদের প্রত্যেকের সামনে। একসঙ্গে অনেক দুশ্চিন্তা এসে ভিড় করে তার মনে। আরমান ঘুমিয়ে থাকার কথা ভাবতে পারে না। আশেপাশে তাকাতেই একটু দূরে জেনিফারকে দেখতে পায়। সেও তার মতো কেমন ছটফট করছে। শুয়ে থাকলেও স্থির থাকতে পারছে না। কেবলই এপাশ-ওপাশ করছে। তারা চারজনই কোনোভাবেই অসহায় কিংবা দুর্বল ছিল না কিছুদিন আগেও। প্রচণ্ড ক্ষমতা এবং দাপট নিয়ে ছিল যে যার অবস্থানে। কিন্তু আজ এক অজানা আতঙ্ক আর ভয় তাদের প্রত্যেককে তাড়া করে ফিরছে। অজানাকে মানুষের ভীষণ ভয়। এই ভয়ের পেছনে রয়েছে অনিশ্চয়তা। এই রহস্যময় দ্বীপে চার আগন্তুকের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী রয়েছে, তারা কেউই জানে না। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার গ্রাস করে আছে। এখানে বিপদ ওত পেতে আছে প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি মুহূর্তে। আরমান জেনিফারের ছটফটানি ভাব দেখে বুঝে নিয়েছে তার মনের অবস্থা। আতঙ্ক ও ভয়ের চরম অবস্থায় পৌঁছে গেছে সে। তাকে কিছুটা সাহস জোগানো প্রয়োজন। তা নাহলে হয়তো আতঙ্কে নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়ে যেতে পারে। ‘জেনিফার কী ভাবছো? ভয় লাগছে খুব!’ হালকা সুরে জানতে চায় আরমান। তার কথার জবাবে কিছু বলে না জেনিফার। সত্যি অনেক বেশি ভয় পেয়েছে সে। তার মুখে কোনো কথা জোগায় না এ মুহূর্তে। আরমানের কথা শুনে ওপাশে বিক্রমও নড়েচড়ে ওঠে। সে কিছুটা গম্ভীর গলায় বলে, যে পরিস্থিতির মধ্যে সময় পার করছি এখানে ভয় না পেয়ে উপায় আছে, এখানে আমাদের বীরত্ব দেখানোর কিছুই নেই। কারো বীরত্বে কিছুই হবে না। ভয়ংকর পরিণতির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিইবা করার আছে আমাদের। সকাল হতেই চারজনই পাহাড়ের চূড়ায় থাকা বাড়িটির দিকে যাত্রা শুরু করে। খাঁড়া পাহাড় বেয়ে উপরের দিকে ওঠাটা অনেক কঠিন। যাদের পর্বত আরোহণের মানে ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের জন্য কাজটা তত কঠিন না হলেও আরমান, বিক্রম, স্টিভ লি কিংবা জেনিফার- কেউই জীবনে ট্রেকিং করেনি। ফলে তাদের প্রত্যেকের জন্য পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছাতে সারা দিন লেগে যায়। সন্ধ্যের পর অন্ধকার ঘনিয়ে আসতেই বাড়িটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তারা। বাড়ির দরজা জানালা সবই খোলা রয়েছে। ভেতরে লোকজন রয়েছে কিনা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। তবে চাঁদের আলোতে কিছু কিছু জিনিস দেখা যায়। দুর্গম, রহস্যময় এই দ্বীপে কেউ হয়তো বাড়িতে একসময় বসবাস করত। বিলাসবহুল রাজপ্রাসাদের মতো দেখতে এ বাড়ির লোকজন কোথায় গেল? এখন কেউ কী নেই এ বাড়িতে? তেমন প্রশ্ন তাদের প্রত্যেকের মনে ঘুরপাক খেলেও কোনো জবাব পায় না তারা কেউ। তাহলে এত কষ্ট করে উঁচু পাহাড় বেয়ে এখানে উঠে কী লাভ হলো? এখানে মানুষজন পাওয়া যাবে। যাদের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে এই দ্বীপ থেকে নিরাপদে উদ্ধার পাবার উপায় বের করা যাবে, ভাবলেও তার কোনো সম্ভাবনা নেই দেখে ভীষণভাবে হতাশ হলো তারা। তখন হঠাৎ করে অদ্ভুত এক বেগুনি আলোর বিচ্ছুরণ দেখা গেল বাড়ির মধ্যে। সেখান থেকে কারো ভারি ধাতব কণ্ঠ শোনা গেল, হ্যালো গাইজ, তোমরা হয়তো অবাক হয়েছো প্রত্যেকেই। দাগি আসামি হিসেবে জেলখানায় মৃত্যুর অপেক্ষা করছিল তোমরা সবাই। ফাঁসিতে নয়তো ফায়ারিং স্কোয়াডে কিংবা আজীবন জেলখানায় ধুঁকে ধুঁেক পচে মরার কথা তোমাদের। তোমাদের অপরাধের সাজা হওয়া উচিত আরো ভয়ংকর। তোমরা সমাজের অনেক ক্ষতি করেছ। তোমাদের দেশের আইন-আদালত সেই অপরাধের সাজা দিলেও সেটা যথেষ্ট ছিল না। তোমাদের আরো ভয়ংকর সাজা দিতেই এখানে আনা হয়েছে। এটা হলো, ডেথ আইল্যান্ড। এখানে জীবিত কোনো মানুষ বসবাস করে না। এই রহস্যময় দ্বীপে ভয়ংকর সব পিশাচদের আনাগোনা। কাল রাতে তোমরা হয়তো তার কিছু আলামত লক্ষ্য করেছ। হিংস্র জানোয়ারের গর্জন শুনেছো তোমরা! আজ রাতে তেমনি কিছু পিশাচ তোমাদের সাজা দিতে আসবে এখানে, এই বাড়িতে। তাদের কাছ থেকে পালাতে চেষ্টা করেও কোনো লাভ হবে না। পুরো ডেথ আইল্যান্ড জুড়ে তাদের রাজত্ব। দিনের বেলায় দেখা না গেলেও রাত গভীর হলেই তাদের তৎপরতা বেড়ে যায়। ওয়েলকাম টু ডেথ আইল্যান্ড! তোমাদের প্রত্যেককে স্বাগতম! বিভীষিকাময় সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকো তোমরা। পিশাচদের হিংস্রতা সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। কিছুক্ষণের মধ্যে তোমরা তা টের পাবে। আশা করি, তোমরা বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারবে না এই দ্বীপে। তোমাদের কৃতকর্মের শাস্তির জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। গুড নাইট। এরপর সেই যান্ত্রিক ধাতব কণ্ঠস্বর আর শোনা যায় না। চারপাশ নীরব, সুনসান হয়ে যায়। শুধু আশেপাশের জঙ্গল থেকে আসা ঝিঁ ঝিঁ পোকা এবং নিশাচর পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ ভেসে আসে। রহস্যময় বাড়িটি জুড়ে অদ্ভুত ভৌতিক পরিবেশ ছড়িয়ে আছে। ডেথ আইল্যান্ড সম্পর্কে এর আগে কোথায় কার কাছে শুনেছিল, হঠাৎ করে স্টিভ লি মনে করতে পারে না । তখন রহস্যময় একটি দ্বীপের নাম ডেথ আইল্যান্ডÑ জেনেছিল। এই ডেথ আইল্যান্ডের অবস্থান কোথায়, নির্দিষ্ট করে জানা না গেলেও ভারত মহাসাগরের মধ্যে এর অবস্থান হতে পারে জেনেছিল। আন্দামান, নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি কোথাও হতে পারে। একসময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আন্দামান দ্বীপে পাঠানো হতো। সে অনেক বছর আগের কথা। এখন সেখানে সেই ভয়ংকর কারাগার নেই। আন্দামান দ্বীপের আশেপাশে আরো বেশ কিছু দ্বীপ রয়েছে। সেখানে স্থানীয় আদিবাসীদের বসবাস বর্তমানে। এখনও পৃথিবীতে রহস্যময় অনেক জায়গা রয়েছে। যেখানে জনবসতি নেই। অথচ ঘর-বাড়ি রয়েছে। সেখানে কেউ থাকে না এখন। তবে একসময় কেউ এখানে থাকতÑ সেটা নিশ্চিত। বিশাল রাজপ্রাসাদের মতো এই বাড়িটি পাহাড়ের চূড়ায় যারা বানিয়েছিল, তারা নিশ্চয়ই দ্বীপটি শাসন করত। বাড়িটির কাঠামো দেখে রহস্যময় কিছু ব্যাপার চোখে পড়েছে। সে যাই হোক। যারা দ্বীপে বসবাস করত, তারা এখন কোথায়? এক প্রজন্মের বিদায়ের পর পরবর্তী প্রজন্মের তো এখানে বসবাস করার কথা। কিন্তু পুরো দ্বীপজুড়ে এখন জনমানবের চিহ্ন নেই। জনবসতির অস্তিত্ব নেই। এখানে জীবিত কেউ থাকে না। পুরো দ্বীপজুড়ে রয়েছে পিশাচ আর প্রেতাত্মার আনাগোনা। যারা একসময় দ্বীপে বসবাস করত তাদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর সেই আত্মাগুলোই হয়তোবা পিশাচে পরিণত হয়েছে। অনুমান করে স্টিভ লি। যদিও এটা তার নিজস্ব ধারণা। বাস্তব অবস্থা তেমন নাও হতে পারে। রাত বাড়তেই পরিবেশটা বদলে যেতে থাকে। অদ্ভুত ঝনঝন শব্দ শোনা যায় বাড়ির ভেতরে। এখানে জীবিত মানুষের অস্তিত্ব নেই। অথচ বাড়ির ভেতরে অদ্ভুত শব্দ করছে কারা? তখনই তাদের খেয়াল হয়, কিছুক্ষণ আগে বাড়ির মধ্যে রহস্যময় বেগুনি আলোর বিচ্ছুরণের সময় ধাতব ভারি কণ্ঠে কেউ একজন বলছিল, আজ রাতেই পিশাচের দল আসবে ভয়ংকর রূপ নিয়ে তাদের শাস্তি দিতে। তাহলে বাড়ির মধ্যেই পিশাচের আস্তানা। এখানেই তাদের বসবাস। ব্যাপারটি উপলব্ধি হতেই আরমান ও স্টিভ লির শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায় আতঙ্কে। এখনই হয়তো পিশাচের দল কারো রূপ ধারণ করে সামনে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু তাদের হাত থেকে রক্ষা পাবার উপায় কী? বিক্রম মনোবল না হারিয়ে মনটাকে শক্ত করতে চায়। প্রতিপক্ষ যদি তাদের মতো মানুষ হতো, তাহলে না হয় একটা কথা ছিল। বুদ্ধি এবং কৌশল প্রয়োগ করে শরীরের শক্তি দিয়ে সেই প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করার চেষ্টা চালানো যেত। কিন্তু পিশাচগুলো মহাশক্তিশালী। তাদের অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে। তাদের সঙ্গে লড়াই করে জয়ী হওয়া তো দূরের কথা, সামান্য কিছু সময় টিকে থাকাও অসম্ভব ব্যাপার। জেনিফার তার বুকে ঝুলানো ক্রুশটির কথা মনে করে। সব সময় ক্রুশটি লকেটের মতো তার বুকে ঝুলানো থাকত। এখন আর সেটি সঙ্গে নেই। এই রহস্যময় দ্বীপে আসার পর থেকে ক্রুশটি আর সঙ্গে পায়নি সে। ওটি সঙ্গে থাকলে নাকি অশুভ শক্তি, শয়তান প্রেতাত্মা, পিশাচ কেউই কাছে ভিড়তে পারে না। নিজেদের অসহায়ত্বের কথা উপলব্ধি হতেই তার বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। তাহলে ভয়ংকর মৃত্যু খুব কাছেই ঘনিয়ে আসছে। রাত গভীর হতেই সেই রহস্যময় বাড়ির ভেতর থেকে অদ্ভুত আকৃতির চার পেয়ে কয়েকটি প্রাণী বেরিয়ে আসে। দেখতে কিছুটা কুকুরের মতো হলেও ওদের শরীরটা বিড়াল অথবা বাঘের মতো থলথলে। ওদের চোখগুলো টর্চের মতো জ্বলছে। হাঁটার সময় তাদের মুখ থেকে ঘড় ঘড় গর্জনের মতো শব্দ বেরোচ্ছে। আরমান, বিক্রম, জেনিফার এবং স্টিভ লিÑ তারা কেউই এ ধরনের জন্তুর দেখা পায়নি পৃথিবীর কোথাও। অদ্ভুত জন্তুগুলো দেখে তারা বুঝে নিয়েছে সবকিছু। এগুলো পিশাচের দল। অদ্ভুত হিংস্র এক জন্তুর রূপ ধরে হাজির হয়েছে তাদের সামনে। ওদের কবল থেকে বাঁচাতে ছুটে পালিয়েও শেষ রক্ষা হবে না। মহাশক্তিশালী এই পিশাচগুলো মুহূর্তেই তাদের রূপ বদলে অন্য আরেক রূপ ধারণ করতে পারে। অতএব, এখান থেকে ছুটে পালানোর চেষ্টা বৃথা। এখন এমন কিছু একটা করতে হবে যাতে পিশাচগুলো তাদের কাছে ঘেঁষতে না পারে। তারা চারজন আলাদাভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে না থেকে পরস্পরের সঙ্গে জড়াজড়ি করে বসে রইল। আলাদাভাবে থাকলে পিশাচগুলো দ্রুত আক্রমণ করে একজন একজন করে তাদের ঘাড় মটকে রক্ত পান করবে। এরপর তাদের কলজে, হৃদপিণ্ড, কিডনি, মাংস খাওয়া শুরু করবে। কিছুক্ষণের মধ্যে শুধুমাত্র হাড়গোড় পড়ে থাকবে এখানে ওখানে ছড়িয়ে। আশ্চর্য ব্যাপার, এভাবে বাকি রাতটা কেটে গেল। ওপাশে কঠিন মুখ নিয়ে অদ্ভুত এক জন্তুর আকার ধারণ করা পিশাচগুলো ঠায় বসে থাকলেও তারা কোনোভাবেই আক্রমণ করে না চারজন মানুষকে। দ্বীপে আসা মানুষগুলোকে তারা পর্যবেক্ষণ করেই কাটিয়ে দেয় সারা রাত। চাইলে তারা এদেরকে চোখের পলকেই আক্রমণ করে ধরাশায়ী করতে পারে। কেউ কোনোভাবেই তাদের প্রতিরোধ করতে পারবে না। তবুও অদ্ভুত এক খেয়ালে তারা রাতটা পার করে দেয় অনেকটা নীরবেই। তবে তাদের ভাবভঙ্গি দেখে আরমান, বিক্রম, জেনিফার, স্টিভ লিÑ কারোই ভালো লাগেনি। স্বস্তি কিংবা নিশ্চিতবোধ করার মতো কিছু ঘটেনি। প্রথমেই শিকারকে বাগে পেলেও অনেক সময় হিংস্র জানোয়ার আক্রমণ করে না। ধীরে ধীরে নানা কৌশলে খেলতে খেলতে শিকারকে চূড়ান্ত ভয়, আতঙ্ক, মানসিক চাপে রেখে আরো দুর্বল করে। তারপর একসময় নির্বিঘ্নে কাজ সারে। রহস্যময় বাড়িটিতে থাকা পিশাচগুলো তাই করছে। তবে এই ডেথ আইল্যান্ডে মাত্র কয়েকটি পিশাচ বসবাস করে, এটা বিশ্বাস করা যায় না কোনোভাবে। এখানে আরো অনেক ভয়ংকর পিশাচ রয়েছে। খুব শিগগির তাদেরও দেখা মিলবে আশেপাশে কোথাও না কোথাও। সকালের আলো ছড়িয়ে পড়তেই পিশাচগুলো অদৃশ্য হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। দিনের বেলা সমুদ্র সৈকতে প্রচণ্ড রোদে বালির ওপর পড়েছিল তারা। সারা শরীর রোদের তাপে পুড়ে যাচ্ছিল। তখন অনেক গরম অনুভব করেছিল সবাই। তখন বেশ গরম অনুভব করলেও এখন রাতে বেশ ঠান্ডা লাগছে। মনে হয় জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। এখন প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ছে জনমানবহীন দুর্গম রহস্যময় এই দ্বীপে। প্রচণ্ড ঠান্ডায় কাঁপন ধরে গেছে শরীরে। বিক্রম ভাবে, বড় অদ্ভুত এই রহস্যময় দ্বীপের আবহাওয়া। দিনে গ্রীষ্মকালের মতো বেশ গরম লাগলেও রাতে ভীষণ ঠান্ডা পড়েছে এখানে। ঠিক যেন শীতকাল। জনমানবহীন রহস্যময় দ্বীপটির সবকিছুই বড় অদ্ভুত, রহস্যের চাদরে মোড়ানো। এখানকার আবহাওয়া ভীষণ রকমের রহস্যময়। দিনে একরকম হলে রাতের বেলা সম্পূর্ণ অন্যরকম। এখন কনকনে হাওয়া বইছে। এই রাতে ঠান্ডার পরিমাণটা একটু বেশি বলা যায়। তুষারপাত না হলেও আবহাওয়া সেরকম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে অনেকটা। তেমন প্রচণ্ড শীতের রাতে অনেক প্রতিকূল সময়ের মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তখন বেশ গরম অনুভব করলেও এখন রাতে বেশ ঠান্ডা লাগছে। মনে হয় জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। আজকের রাতে ঠান্ডার পরিমাণটা একটু বেশি বলা যায়। তুষারপাত না হলেও আবহাওয়া সেরকম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে কিছুক্ষণ পরপর। দমকা হাওয়া বইছে সেই সঙ্গে। ঘরবাড়ির তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই এই দ্বীপে। খোলা আকাশের নিচেই কাটাতে হচ্ছে তাদের বেশিরভাগ সময়। শরীরে ঠান্ডা হাওয়া লাগছে সূচের মতো। পারতপক্ষে এমন শীতের রাতে কেউ বাইরে খোলা জায়গায় থাকার কথা ভাবতে পারবে না। অথচ বিক্রম একাকী হাঁটছে রাতের অন্ধকারে অচেনা পথ ধরে। তবে আকাশে চাঁদ রয়েছে। গাছপালা বনজঙ্গলে ঢাকা পড়ায় চাঁদের আলো ঠিকঠাকমতো ছড়াচ্ছে না এই বুনো পথটায়। ফলে অন্ধকারের রাজত্ব চলছে আশেপাশে অনেকটা জায়গা জুড়ে। কিছুটা পথ হাঁটার পর একটা খোলা জায়গায় এসে পড়ে বিক্রম। আজ আকাশে মেঘ নেই, তাই হালকা রুপালি চাঁদের আলো ছড়িয়ে আছে। এই তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে গা ছম ছম করা ভয়ংকর পরিবেশে তিন সঙ্গীকে বাদ দিয়ে একাকী বেরোতে হয়েছে তাকে। একাকী বেরোতে কোনোভাবেই ইচ্ছে করছিল না তার। তবুও ইচ্ছের বিরুদ্ধে অনেকটা বাধ্য হয়ে জোর করেই গভীর রাতে বের হতে হয়েছে বিক্রমকে। তীব্র শীতের রাত। এই রহস্যময় দ্বীপে এমনিতেই মানুষজনের আনাগোনা নেই। এখানে তাদের চারজনের একসঙ্গে আসার নেপথ্যে রয়েছে কোনো এক শক্তিশালী মানুষ নয়তো বড় কোনো নেটওয়ার্ক। যাদের ক্ষমতা অসীম। তারা চাইলে পৃথিবীতে অনেক কিছুই ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তাদের পরিচয় জানার কোনো সুযোগ নেই। তবে তারা এই রহস্যময় দ্বীপের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। এই দ্বীপে পিশাচদের রাজত্ব। এর পেছনেও যেন সেই শক্তিশালী চক্রের হাত রয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কাউকে চাইলে তুলে এনে এই পিশাচ দ্বীপে ভয়ংকর পরিবেশে রেখে চরম শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে। বিক্রম নিজেকে দিয়ে এটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। বিকেলে পাহাড়ের চূড়ার বিশাল প্রাসাদের একটি ঘরে চারজনই বসেছিল। তারা নিজেদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছিল। তখনই মাইক্রোফোনে ধাতবকণ্ঠে নির্দেশ জারি হয়, হ্যালো বিক্রমাদিত্য সিং, তুমি তো অনেক সাহসী মানুষ। আজ তোমার দুঃসাহসের নমুনা দেখতে চাই। তোমাকে একটা টাস্ক দিচ্ছি। কাজটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তুমি পারবে কিনা এখনও জানি না। যে কাজটা দিচ্ছি যদি তা করে প্রাণে বাঁচতে পারো, তাহলে বুঝব তুমি সত্যি অনেক সাহসী। এই দ্বীপে আরও একটা পুরনো ভাঙা অভিশপ্ত প্রাসাদ রয়েছে। গভীর রাতে সেখানে তোমাকে যেতে হবে। সঙ্গে কাউকে নেয়া যাবে না। তোমাকে একাকী যেতে হবে। ওই ভাঙা বিধ্বস্ত প্রাসাদে অনেক বিপদ ওত পেতে রয়েছে তোমার জন্য। ইয়্যু আর মোস্ট ওয়েলকাম টু দ্য চ্যালেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড। সেই রহস্যময় ধাতব কণ্ঠের কথাগুলো শোনার পর বিক্রমের মনে হয়েছে, যেন তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে যেন একপ্রকার নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
Rezaul Karim Khokan- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পর ব্যাংকিং পেশায় নিয়োজিত হন। বর্তমানে দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন। স্কুল জীবন থেকেই তাঁর লেখালেখির সূচনা। ব্যাংকিং পেশায় কর্মব্যস্ততার মাঝেও তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করছেন। গল্প-উপন্যাস, বিনোদন, অ্যাডভেঞ্চার, লাইফস্টাইল, অর্থনীতি, ব্যাংকিং প্রভৃতি তাঁর লেখার বিষয়বস্তু। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৮।