"বাগধারা-বাগবিধি "বইটির ভূমিকা: বাগধারা ভাষার নিজস্ব সম্পদ। বাংলাভাষায় বাগধারা বা বাগবিধি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ব্যাপক অর্থে বলা যায়, ভাষা সৃষ্টির প্রারম্ভিক পর্যায় থেকেই এই বিশিষ্টার্থক শব্দের ব্যবহার ও প্রচলন ছিল; যদিও বর্তমানের মতাে তা এত সুসংহত ও সুবিন্যস্ত ছিল না। স্বাভাবিক বা আভিধানিক অর্থের বাইরে প্রসঙ্গাধীন বা বিশিষ্ট অর্থ প্রকাশে এসব বাগধারা বা বাগবিধির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ অনুশীলন-পুনর্নশীলন, চর্চা-পুনৰ্চর্চার অভাবে বাংলাভাষার অনেক বাগধারা আজ অবলুপ্তির দোরগােড়ায়। এসব বিবেচনাপ্রসূত বাগধারা গ্রন্থটি পাঠক মহলে সমাদৃত হলে আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সার্থক হবে। অযথা কলেবর বৃদ্ধি না করে বাগধারার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বইটিতে যথাযথ আলােচনা করা হয়েছে। বাগধারার সংজ্ঞার্থ নিরূপণ, বাগধারার ঐতিহাসিক পটভূমি, বাগধারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ, বাগধারার স্বরূপ ও প্রয়ােগ, বাগধারা ও বিশিষ্টার্থক শব্দের গঠন, বাগধারার প্রয়ােজনীয়তা প্রভৃতি বিষয় এখানে সুচারুরূপে আলােকপাত করা হয়েছে। সব শ্রেণীর শিক্ষার্থী যাতে সহজেই বাগধারা প্রয়ােগে সমর্থ হয় এ কারণে বাগধারা-বাগবিধির প্রয়ােগ দেখানাে হয়েছে আলাদা অংশে। বিরল কিছু বাগধারার প্রয়ােগ দেখানাে হয়েছে পৃথক অধ্যায়ে। অল্প সময়ে বাগধারা-বাগবিধির মতাে একটি বিষয় গ্রন্থনা করতে গিয়ে বইটিতে দু-একটি ভুলভ্রান্তি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এসব ছােট ছােট ভ্রান্তি পাঠক সহজভাবে নেবেন এবং তাদের সুপরামর্শ আগামীতে বইটির উৎকর্ষ দানে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস। পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয়, যার পরামর্শ, উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় বাংলা ব্যাকরণের বিশাল কলেবর থেকে শুধু বাগধারা-বাগবিধি নিয়ে এমন একটি বই রচনা ও প্রকাশ সম্ভব হয়েছে তিনি হচ্ছেন প্রফেসর'স প্রকাশন-এর স্বত্বাধিকারী মােহাম্মদ জসিম উদ্দিন। গতানুগতিক ধারার বাইরে সম্পূর্ণ নতুন ধারায় এরূপ পূর্ণাঙ্গ বই রচনার ধারণা ও সুচিন্তিত পরামর্শ প্রদানের জন্য আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
Mohammed Asaduzzaman মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। জন্ম ১লা জানুয়ারি ১৯৫৭ শেরপুর জেলাস্থ শ্রীবরদী উপজেলাধীন কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের গড়খোলা গ্রামে নানাবাড়িতে। পিতার নাম মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান সরকার (ছোট মিয়া) এবং মাতার নাম রমিছা খাতুন। নিজ বাড়িতে দাদার গড়া মক্তবে লেখা-পড়ায় হাতেখড়ি। গরবীকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গরবীকুড়া এ.কে. উচ্চ বিদ্যালয়, টেঙ্গুরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজে তিনি অধ্যয়ন করেন। ১৯৭৯ শিক্ষাবর্ষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং পরবর্তীকালে এল.এল.বি. ডিগ্রি লাভ করেন। বিশিষ্ট কবি, সংগীত পরিচালক মোঃ হাবিবুর রহমানের কাছে ১৯৭২ সালে সংগীতে তালিম নেয়া শুরু করেন। ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তন থেকে রবীন্দ্রসংগীত ও লোকসংগীত বিষয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি দুটো সার্টিফিকেট কোর্স উত্তীর্ণ তিনি। বিশ্ব নাট্যজন রামেন্দু মজুমদারের হাত ধরে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর হয়ে মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন ১৯৮১ থেকে। দেশ-বিদেশের মঞ্চে অভিনয় করে বিশেষভাবে প্রশংসিত হন। মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার, কণ্ঠশিল্পী এবং নাট্যশিল্পী। বর্তমানে তিনি ডিজিটাল ফিল্ম পরিচালনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। সাহিত্যের সকল শাখায় মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের স্বচ্ছন্দ বিচরণ। সত্তর দশকের প্রথম দিকে কবিতা দিয়ে তাঁর সাহিত্যচর্চা শুরু। কবিতা দিয়ে শুরু হলেও গীতিকবিতা ও গল্পে আসাদুজ্জামান বিশেষ কৃতিত্বের দাবিদার।