ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা রঞ্জনা ছিল সুন্দরীতমা, পৃথিবীর সবচেয়ে রূপবতী নারী। মিঠুর জীবনে সে এসেছিল জ্যোৎস্নাপ্লাবিত এক রাতে। আবার চলেও গিয়েছিল আরেক ঘোরলাগা নিশিতে। অনেক সৌন্দর্য আর ভালোবাসা নিয়ে এসেছিল এই নারীটি। কিন্তু দুজনের যৌথ দিনরাত্রিগুলো কেবল আনন্দে কাটেনি, কেটেছে এক ভয়াবহ সাপের ছোবলে হিসহিসানির মধ্যেও। কিন্তু কেন? কেন ভালোবাসা পারে না নারীপুরুষের মিলিত ছোট্ট ঘরগুলোকে কেবল আলোয় আর আনন্দে ভরপুর রাখতে! কী এমন ঘটেছিল এই দুজনের জীবনে! এই উপন্যাস পাঠশেষে পাঠকের মনে জাগে এ আকুতি-সুন্দরীতমা নারী, হে সুন্দর, হে জীবন, হে সুস্থ সুন্দর মহাজীবন, তুমি ফিরে এসো ঘরে ঘরে। ভূমিকা এই উপন্যাসটি ঈদসংখ্যা প্রথম আলো ২০০৭-এ প্রকাশিত হওয়ার পর একজন পাঠিকা আমাকে চিঠি লেখেন। কয়েকজন পাঠকের সঙ্গে সরাসরি কথাও হয়। তাঁদের বক্তব্য, সুন্দরীতমাটি যদি চলেই গেল, তাকে যদি এত ভালোবাসা দিয়ে ফিরিয়ে আনা যাবে না, তাহলে আমাদের আশার জায়গা, কোথায়? আমি যেন উপন্যাসটির পরিণতিটি পাল্টে দিই। হয়তো তা-ই উচিত। কিন্তু এই কাহিনীর শেষটা পাল্টাতে চাই না। চেষ্টা আর আশা, কোনোটাই ছাড়বেন না। অনেকেই ফিরেছেন। ফেরা যায়। ফেরা সম্ভব। কেবল নিজেকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে কঠিনভাবে, ইস্পাতকাঠিন্য প্রতিজ্ঞা আর উপযুক্ত বিশেষজ্ঞ তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে ফিরে আসা সম্ভব, অবশ্যই সম্ভব। আনিসুল হক
আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্যকার্টুন, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুল হকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ নীলফামারীতে। শিশু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ জন্মেছিলো লেখালেখি আর ছবি আঁকায়। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আনিসুল হক এর বই প্রকাশের কালটি ছিলো উত্তাল স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়। আনিসুল হক এর বই সমূহ প্রেমের প্রতি পক্ষপাত করলেও একইসাথে সেসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আমি আছি আমার অনলে’, ‘আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার’, এবং ‘জলরংপদ্য’। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মা’, আনিসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে পাঠকের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। এছাড়াও ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’, ‘নিধুয়া পাথার’, ‘আয়েশামঙ্গল, খেয়া’, ‘ফাঁদ’, ‘বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’, ‘ফাল্গুন রাতের আঁধারে’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন, এখনও লিখে যাচ্ছেন পত্রিকার কলাম। লিখেছেন বেশ কিছু টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার চিত্রনাট্যও। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক এই লেখক।