আশির দশকের অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেনের লেখক জীবন শুরু হয়েছিল ছোটকাগজে গল্প লেখার মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ চার দশক ধরে লেখা ছয়টি গল্পগ্রন্থে তিনি যে অনুসন্ধিৎসা ও সংহত সংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তা তাঁকে বাংলাভাষার গুরুত্বপূর্ণ গল্পকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাংলা সাহিত্যের চিরায়ত গল্পের ধারায় যাত্রা শুরু করলেও পারভেজ হোসেন নতুন পথের সন্ধানে ব্রত রয়েছেন সবসময়। তাঁর নির্মিতি আঁটোসাটো, ঋজু, স্নিগ্ধ আর অনায়াসলব্ধ। তাঁর গল্পের চরিত্রগুলোর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যায় ঘটনাপ্রবাহ; ফলে গল্প হয়ে ওঠে নৈর্ব্যক্তিক ও সুপাঠ্য। একদিকে জৈবিক-ক্রুরতা, অপরদিকে সবল মানবতা—এই অনিবার্য দ্বন্দ্বে, ক্ষরণে, জর্জর আখ্যানে লেখক কোনো সমাধান দেন না, কিংবা কোনো প্রশ্ন তোলেন না—কেবল ক্ষেত্রপটটা দেখিয়ে দেন। তাই আবহমান বাংলা ছোটগল্প সৃষ্টিশীল উৎকর্ষ নিয়ে যে যে বিষয়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে পারভেজ হোসেনের গল্প নান্দনিক পূর্ণতায় সেখানে গিয়েই পৌঁছায়। গ্রন্থভুক্ত প্রতিটি গল্পের পরতে পরতে আছে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির টানাপোড়েনের কথা। আছে অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিদ্রুপ ও সহানুভূতির মাধ্যমে মনোবিশ্লেষণ এবং গল্পের চরিত্র ও পরিবেশ নির্মাণের বিশেষ কারিগরি দক্ষতা। আছে অস্তিত্ব সংকটের রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের ছবি। তাঁর গদ্যে কথার সঙ্গে ঘটে কবিতার আত্মীয়তা। কেবল গল্পই লেখেননি এই গল্পকার, বরং জীবনের এমন সব অনুভূতি ও জিজ্ঞাসার সামনে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন—কখনো কখনো তাঁর গল্পগুলো হয়ে উঠেছে আত্মদর্শন-উপলব্ধ অন্তর্গত বয়ান।
পারভেজ হােসেন ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর-এ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬০ সনে। বাংলা অনার্সসহ এমএ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে। আশির দশকের ছােটোকাগজ সংবেদ-এর সম্পাদক পারভেজ হােসেন বর্তমানে মুদ্রণ ও প্রকাশনা ব্যবসায় জড়িত। ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার ২০১০' পেয়েছেন যে জীবন ফড়িংয়ের দোয়েলের গল্পগ্রন্থের জন্য। ‘প্রথম আলাে বর্ষসেরা বই ১৪১৯ পেয়েডেন ডুবােচর গল্পগ্রন্থের জন্য।