আলোচ্য গ্রন্থে বাংলাদেশে স্থানীয় ইতিহাস চর্চার ইতিহাস উপস্থাপিত হয়েছে। জেলা, উপজেলা বা গ্রামভিত্তিক যেকোন বিষয় নিয়ে আলোচনাই হচ্ছে 'স্থানীয় ইতিহাস'। এদেশে উনিশ শতকের শুরুতে ব্রিটিশ সিভিলিয়ানগণ জেলাভিত্তিক গেজেটিয়ার ধরণের ইতিহাস গ্রন্থ লেখা শুরু করেন। উল্লেখযোগ্য লেখক ছিলেন বুকানন হ্যামিল্টন, জেমস টেলর, শেরউইন, গ্যাসট্রেল, ওয়েস্টল্যান্ড, গ্লাজিয়ার, সাদারল্যাণ্ড, লেউইন, জে সি জ্যাক, বেভারিজ, ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার প্রমুখ। বিশ শতকের শুরু থেকে বাংলাভাষায় জেলার ইতিহাস লেখার ধারা শুরু হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, এশিয়াটিক সোসাইটি প্রভৃতিতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে স্থানীয় ইতিহাস চর্চা গুরুত্ব লাভ করে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গ্রাম, থানা/উপজেলা ও জেলাভিত্তিক উচ্চতর গবেষণা (এমফিল, পিএইচডি) শুরু হয়। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে জেলার ইতিহাস স্নাতক শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে অর্ন্তভুক্ত হওয়ায় স্থানীয় ইতিহাস বিষয়ক পাঠ্যবইয়ের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় ইতিহাসের বিষয়বস্তু অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। স্থানীয় ইতিহাস রচনার উপাদান সম্পর্কে জানার আগ্রহ অনেকেই ব্যক্ত করেছেন। বিভিন্ন নথি সংরক্ষণাগারে স্থানীয় ইতিহাসের কী ধরণের তথ্য সংরক্ষিত আছে তাও আলোচনা হওয়া দরকার। এসব বিষয় বিবেচনা করে আলোচ্য গ্রন্থটি প্রণীত হলো।
ড. মাে. মাহবুবর রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার বিষয় মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, আধুনিক বাংলা ও বাংলাদেশ, স্থানীয় ইতিহাস এবং আরকাইভস। তিনি এখন পর্যন্ত ১৩টি গ্রন্থ ও প্রায় ৬০টি গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলি হলাে: একাত্তরে গাইবান্ধা, বাংলাদেশের ইতিহাস ১৯০৫-৪৭, ১৯৪৭-৭১, বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাস ১৭৭৩ থেকে, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (যৌথভাবে), গণহত্যাবধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ: রাজশাহী জেলা, বাংলাদেশ আরকাইভস ইত্যাদি। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উপকরণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে রাজশাহীতে একটি আরকাইভস প্রতিষ্ঠা করেছেন। উক্ত আরকাইভসে সংগ্রহ করা হয়। লিফলেট, পােস্টার, স্মরণিকা- বার্ষিকী, জেলাউপজেলার ইতিহাস, জীবনী- আত্মজীবনী, সাময়িকী-লিটল ম্যাগাজিন, গবেষণা জার্ণাল, বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সমাজ-সংস্কৃতি ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ, এম. ফিল ও পি. এইচ. ডি. থিসিস, ইত্যাদি। আরকাইভসে এপর্যন্ত ৪৭ জন তাঁদের সংগ্রহ দান করেছেন।