প্রকৃতির তাণ্ডবের কাছে নতি স্বীকার করে একদল কারিগর সম্প্রদায়ের মানুষ দেশান্তরী হয়। সিরাজগঞ্জের যমুনাতীরবর্তী অঞ্চলের সেইসব মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়ে চলে আসে পাবনার নিকটবর্তী জালালপুর। একটি অবহেলিত বৃহৎ এলাকায় গড়ে তোলে নতুনপাড়া নামের এক গ্রাম। সেইসব অসহায় লোকগুলোর মধ্যে ভাগ্যবঞ্চিত এক এতিম কিশোর মাসুদ রহমান। সংগ্রামী জীবনকে শানিয়ে তুলতে গ্রামের কিশোরী প্রেমিকা মালতিকে ফেলে ছোটো চাচার সাথে চলে যায় ঢাকায়। দেখতে পায় তার চেয়েও হতদরিদ্ররা ঢাকার হাজারখানেক বস্তিতে বাস করে। যেগুলো আবার সব জঞ্জালের আখড়া। মাদক থেকে শুরু করে মানবপাচার আর সব অপকর্মের মধ্যমণি এইসব বস্তি। ঢাকায় চাচার কাজ দেখাশোনা আর লেখাপড়া করতে গিয়ে পরিচয় হয় অদ্ভুত চরিত্রের বজলুর সাথে। জীবনের চাপা গলি থেকে মুক্তশ্বাস নিতে বাবার সম্পত্তি বিক্রি করে একদা বজলু পাড়ি জমায় ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে। সে মরতে মরতে বেঁচে গিয়ে ফিরে এলেও অধিকাংশ সহযাত্রীর সলিল সমাধি ঘটে। ওদিকে চাচা চাচির কাছে সদা নিগৃত মাসুদ জীবনের তাগিদে চাচার অর্থ আত্মসাৎ করে পাড়ি জমায় ব্রাজিলে। সে নতুন করে ব্রাজিলিয়ান কৃষ্ণসুন্দরী মারিয়ামার প্রেমে পড়ে। মারিয়ামাও এক হতদরিদ্র উন্মূল পরিবারের মেয়ে। সাও পাওলোর এক বস্তিতে বাস করে। বিদেশ যাওয়ার নেশায় পড়া বজলু আবার পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে পিতাকে ফতুর করে ব্রাজিল যায়। একদা ব্রাজিল থেকে বজলুসহ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে একসঙ্গে পাঁচ বন্ধু। সাথে যোগ হয় বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা মারিয়ামা। ভয়ংকর হাঁটা পথে মধ্য আমেরিকার দশটি দেশ বিশেষ করে বিপদ সঙ্কুল পানামার জঙ্গল অতিক্রম করতে গিয়ে দুজন এবং এক এক করে বাকি তিনজন হিসেবের খাতা থেকে নেই হয়ে যায়। একমাত্র মাসুদই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। সেখানে দেখা হয় স্বামী ও ছেলেসহ প্রাক্তন প্রেমিকা মালতির সাথে। বাল্যকাল থেকে আত্মপ্রত্যয় নিয়ে বেড়ে ওঠা এবং ব্যবসা করে আঙুল ফুলে কালাগাছ হয়ে যাওয়া মাসুদ প্রেমের নেশায় বুঁদ হয়ে ভাড়াটে কিলার দিয়ে খুন করে মালতির বুড়ো কিম্ভূতকিমাকার স্বামীকে। বহু কায়দা কৌশল করে বিয়ে করে মালতিকে। এক সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। একদিন ধরা পড়ে আর যাবজ্জীবন কারাবাস হয় মাসুদের। কালের বিবর্তনে বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র ভেঙে পড়ে তার নিজের ভারেই। অনিয়ম, দুর্নীতি, ধর্মীয় সহিংসতা আর গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র খণ্ড বিখণ্ড হতে থেকে, পালিয়ে যেতে থাকে দলে দলে লোক। মাসুদ রহমানের দৌহিত্র বইখাতায় ডুবে থাকা, পৃথিবী রাষ্ট্র ও সমাজবিবর্জিত মাসুদ জুনিয়র উন্মূল হয়ে ফিরে আসে বাংলাদেশে। দেখতে পায়, বাংলাদেশের জনবিস্ফোরণ, প্রকৃতির বিরূপ আচরণ আর উপকূলীয় অঞ্চল ডুবে যাওয়ার ঘটনা। পরিচয় হয় মালতি নামের এক সুন্দরী গাইডের সাথে। পরে যেটা রূপ নেয় প্রেমের। একদিন ঢাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে মর্মান্তিক ভূমিকম্পের কবলে পড়ে মাসুদ জুনিয়র ও তার প্রেমিকা মালতি। ৮.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকা ম্যাচাকার হয় এবং উদ্ধার তৎপরতা নানাভাবে বিঘ্ন ঘটে। ফলে অগণিত লোক মৃত্যুবরণ করে। আর সেখানেই তাদের অকাল মৃত্যু হয়। এই ভূমিকম্প এবং উপকূলীয় অঞ্চল ডুবে যাওয়া করোনা মহামারির ঠিক এক শ বছর পরের অর্থাৎ একুশ শ বাইশ সালের ঘটনা। করোনা মহামারির এক শ বছর পূর্বে স্প্যানিশ ফ্লু এবং তার এক শ বছর পূর্বে প্লেগ; পৃথিবীকে ভুগিয়েছিলো খুব। মৃত্যুর পর তাদের অতৃপ্ত আত্মার প্রশ্ন জাগে, প্রতি এক শ বছর পরপর পৃথিবীতে নানা ডিজাস্টার নেমে আসে এবং এভাবে চলতে থাকলে আরও এক শ বছর পর অর্থাৎ বাইশ শ বাইশ সালে পৃথিবীর কী হবে। নতুন কোনো ডিজাস্টার নাকি পুরো পৃথিবী নাকি মাহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে? তাদের বিদেহী আত্মা এক এক করে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে আর নানা প্রকার ব্যাখ্যা দাঁড়া করায়...
মোখলেস মুকুলের জন্মস্থান পাবনা। পিতা: আব্দুল হামিদ, মাতা: ফজিলাতুন্নেছা। জন্মসাল ১৯৬৬। চিকিৎস্যা বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা থেকে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় লেখালেখি শুরু। বইমেলা ‘১৫-তে প্রথম ছোটোগল্পের বই ‘চাকা’, বইমেলা ‘১৬-তে কাব্যগ্রন্থ ‘শূন্য’, বইমেলা ‘১৮-তে উপন্যাস ‘মৃন্ময়বৃক্ষ’, বইমেলা ‘১৯-এ ছোটোগল্পের বই ‘কাঁকড়াকাল’ এবং বইমেলা ‘২১-এ উপন্যাস ‘বঙ্গালী ভইলী’ প্রকাশিত হয়। করোনা নিয়ে তৃতীয় উপন্যাস এবং ষষ্ঠ বই ‘অতঃপর করোনা’ প্রকাশের পথে।