ভোজনের সাথে রসনা তৃপ্তির একটা গভীর বন্ধন। বাঁচার জন্য মানুষ খাবার গ্রহণ করে। কিন্তু এটিকে সুস্বাদু করার লক্ষ্যে কতো প্রচেষ্টা - কতো কৌশল - কতো মশলার ব্যবহার। আর এই দূর্বলতাকে ঘিরে বিজ্ঞাপন আর বিজ্ঞাপন এবং হোটেল ও রেষ্টুরেন্ট ব্যবসাও রমরমা। আগুন আবিস্কারের আগে কাঁচা নিরামিষ এবং পরবর্তীতে পুঁড়ে মাংস বা মাছ।সভ্যতার ক্রমবিকাশে একেক যুগে একেক দেশে খাদ্যাভ্যাসের নানা ধরন,নানা বৈচিত্র্য। প্রাচীন ইতিহাসে ইউরোপে রোমান ও গ্রীকদের আহার বিলাসী হিসেবে খ্যাতি আছে।যদিও সুস্বাদু খাবার রসুইঘরে ঢুকে মোগলদের হাত ধরে।কাবাব বোরহানি থেকে শুরু করে ফিরনি যতোগুলো রসনার তৃপ্তির জন্য তার অধিকাংশ মোঘলাই খাবার।দেশ ঘাটের জল খেয়ে বাঙালি খাবারে নানা সংস্কৃতির মিলন - পারস্য, পতুর্গীজ, চীনা সহ বিভিন্ন দেশের রান্নার মিশ্রণ বাঙালির পাতে। যদিও বাঙালি মাছ খেতো অনেক আগে থেকে।কারণ বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আর ভাতের কথা পাই প্রাচীন চর্যাপদে। একটা সময় বিশেষত বাঙালির রান্নার কাজ ছিল শুধুমাত্র নারীর।কিন্তু সে যুগ হয়েছে বাসী।এখন সমানতালে পুরুষেরাও।বিশেষত হোটেল রেস্তোরাঁ তাদের দখলে।রন্ধনশিল্প কিন্তু যেমন তেমন নয়।এটি এক শিল্প। একজন শিল্পী যেমন তুলির আঁচড়ে মনের মাধুরি মিশিয়ে ছবি আঁকেন তেমনি একজন পাকা রাঁধুনি সেভাবে রান্না করেন।এখন তো রান্না নিয়ে চলছে নানা প্রতিযোগিতা, পুরস্কার ইত্যাদি ইত্যাদি। সামিমুনের এ গ্রন্থটিও বিভিন্ন পদের রান্না বিষয়ক একটি নতুন গ্রন্থ। এরআগেও অনেক রান্না বিষয়ক গ্রন্থ আমরা পেয়েছি। তবে সিদ্দিকা কবিরের রান্না বিষয়ক শুধু গ্রন্থ নয় তিনিই মিডিয়ায় এটিকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যান।তাঁর পথ ধরে অনেকর সাথে সামিমুনও শরীক হলেন। সামিমুন নাহার রচিত " হুসনু রেসিপি "- এটি রান্না বিষয়ক গ্রন্থের এক অনন্যসাধারণ সংযোজন। ১৬০ পৃষ্ঠার গ্রন্থে ১৪২ টি পদের রেসিপি। গোশত, মাছ,ও সবজির সাথে মিষ্টি জাতীয় খাবার, এর সাথে উপাদেয় সব আচারের। তার যে বৈশিষ্ট্য লক্ষ্যণীয় তা হলো এতো চমৎকার ভাবে তিনি বানানোর উপকরণ ও প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়েছেন তা যে কেউ একজন ভালো রাঁধুনি হতে পারবেন।সহজ সরল ভাষার প্রয়োগ এই গ্রন্থকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তাঁর বিশ্লেষণ প্রক্রিয়াও বিজ্ঞানসম্মত। তাঁর এ রান্না বিষয়ক গ্রন্থটি যারা নতুন রান্না শিখছেন তাদের জন্য খুব উপযোগী। কারণ তিনি একেবারে সহজ সরল ভাষায় রেসিপির সাথে রান্নার কাজটাও যেন গুছিয়ে দিয়েছেন। সবগুলো রেসিপি স্বাস্থ্যসম্মত তাই আশা করছি যাঁরা সংগ্রহ করবেন তাঁরা উপকৃত হবেন। এটির বহুল প্রচার ও প্রসার আশা করছি।
জন্ম: কবি সামিমুন নাহার হুসনু, বাবা মরহুম মো: মাসুদ এবং মা মরহুম আলিমা খাতুন চৌধুরী। কবি সামিমুন নাহার হুসনু কুমিল্লার উত্তর চর্থা, এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ২৮ আগস্ট তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব কেটেছে কুমিল্লায়। পড়ালেখা: কবি পড়ালেখা করেছেন চট্রগ্রামে। তিনি চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্সসহ মাষ্টার্স করেছেন। ব্যক্তিগত জীবন: বর্তমানে ঢাকায় স্বামী-ইন্জিনিয়ার মঈনুল আহসানের সাথে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তাঁর মেয়ে সৈয়দা রুবাইয়া মঈন তৃণা অষ্ট্রেলিয়াতে পিএইচডি করে সেখানেই বসবাস করছে। সাহিত্যচর্চা: ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির সাথে জড়িত। তিনি ছোটগল্প, উপন্যাস এবং কবিতা লিখতে ভালোবাসেন। অমর একুশে বই মেলা-২০২৩ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সরোবরে ফুটে পদ্ম’ প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া তিনি একজন রন্ধনশিল্পীও বটে। রান্নার প্রতি রয়েছে তার আজন্ম সখ। এই সখকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে তিনি এবারে’ ‘হুসনু রেসিপি’ নামে একটি রান্নার বই রচনা করেছেন। বইটি অত্যন্ত সহজ, সরল ও প্রাজ্ঞল ভাষায় লিখেছেন। রন্ধন প্রিয় মানুষের জন্য বইটি উপযোগী হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। বইটি পাঠক মহলে ব্যাপকভাবে আলোড়িত হোক। কবির জন্য শুভ কামনা।