কিতাবটি 'হজ্জ-উমরাহর নিয়ম-পদ্ধতি ও জরুরি মাসাইল এবং মক্কা-মদীনার ইসলামী ঐতিহাসিক স্থানসমূহ' বিয়য়ে একটি সংক্ষিপ্ত ও সমৃদ্ধ কিতাব। উপস্থাপনা সহজ, ভাষা গতিশীল ও সাবলীল। কুরআন, হাদীস ও বড়দের কিতাবাদী থেকে সংগ্রহ করে উপকারী এই কাজটি করেছে আমার স্নেহধন্য ছাত্র (মাওলানা) মুহাম্মাদ রেজাউল ইসলাম। কিতাবটি সাধারণ মুসলমানদের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত পথনির্দেশক হিসাবে ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। বিশেষত বাইতুল্লাহর মুসাফির তথা হজ্জ-উমরাহয় গমনকারীগণ এ কিতাব অধ্যয়নে উপকৃত হবেন বলে আমি মনে করি। আল্লাহ পাকের তাওফীকে কিতাবটি আদ্যোপান্ত আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। এর দ্বারা ঈমানদার ভাই- বোনদের হজ্জ-উমরাহর আমলের ক্ষেত্রে সামান্য সহযোগিতা হলেও শ্রম স্বার্থক হবে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার যিনি কুরআন নাযিল করেছেন এবং কুরআনকে মানব জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা সাব্যস্ত করেছেন। যা পরিপূর্ণ আলো, আলোর দিশারী। যা নিকশকালো আঁধারের মাঝে আলোর ফোয়ারা। পথহারা মানুষের জন্য সঠিক পথনির্দেশিকা। দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মানুষের দুশ্চিন্তা দূরকারী। অভাবী ব্যক্তির অভাব মোচনকারী। ধনীদের সম্পদ পবিত্রকারী। দুঃখীদের দুঃখ বিদূরিতকারী। এক কথায় মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইনসাফ ও শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী। সকল সমস্যার সমাধানকারী। যারা তাঁকে সামনে রাখবে, তারা সম্মানিত হবে। যারা তাঁকে পশ্চাদে ফেলবে, তারা লাঞ্ছিত হবে। প্রত্যেকে তার মানা-না মানার অবস্থা অনুপাতে ফল ভোগ করবে। কিন্তু এর জন্য আগে জানতে হবে। জানার পরিধি বাড়াতে হবে। সঠিক বিষয় বিস্তারিতভাবে জানতে হবে যদিও বিষয়বস্তু হাতেগোনা কয়েকটা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই অধমের এই যৎসামান্য প্রচেষ্টা ‘এ পথেই সুখের ছোঁয়া'। দীর্ঘদিন যাবত কুরআন-হাদীসের পথ ধরে উম্মতের কিছু খেদমত করার ইচ্ছা অনুভব করছিলাম। হৃদয়ের এই প্রচণ্ড আগ্রহের কথা আমার মুরুব্বি ইবনে শাইখুল হাদীস আলহাজ হযরত মাওলানা মাহবুবুল হক্ব (দা. বা.)-এর কাছে প্রকাশ করলাম। তিনি অনুমতি দিলেন। আমি পিপাসা নিয়ে কাজ শুরু করলাম । এবং আল্লাহর অশেষ কৃপায় বর্তমানে কিতাবটি পাঠকের হাতে। কিতাবটিকে আমি পাঁচটি অধ্যায়ে সাজিয়েছি। (১) কতিপয় আয়াত। (২) কতিপয় হাদীস। (৩) কুরআন কারীমের ফযীলত ও ফযীলতপূর্ণ সূরাসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ। (৪) কতিপয় কুরআনী দোয়া । (৫) কতিপয় নববী আমল। যাতেকরে জীবন চলার পথে বহু সমস্যার সমাধান একই সাথে এক কিতাবে সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও হাতের মুঠোয় চলে আসে। অবশেষে তাঁরই অপার করুণা ।
হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এর গন্ডি পেরিয়ে যিনি হাজারো মানুষকে দিয়েছেন আত্মশুদ্ধি ও তাসাওউফ এর শিক্ষা। যার কারণে তাঁর উপাধি ছিলো ‘হাকীমুল উম্মাত’ বা উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক। উপমহাদেশে মুসলমানদের মাঝে সুন্নতের জ্ঞান প্রচারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘দাওয়াতুল হক’ এর অবদানের জন্যও প্রসিদ্ধ মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর নাম। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ১৯ আগস্ট, ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে (রবিউস সানী ৫, ১২৮০ হিজরী) ভারতের উত্তর প্রদেশের থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই হাফেয হোসাইন আলী রাহ.-এর কাছে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন। নিজগ্রামেই ছোটবেলায় হযরত মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ থানভী রাহ.-এর কাছ থেকে আরবি ও ফার্সি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১২৯৫ হিজরীতে তিনি দারূল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চতর শাখাগুলোয় বিচরণ করার আগ্রহে। সেখানে তিনি পাঁচ বছর হাদীস, তাফসীর, আরবি সাহিত্য, ইসলামী দর্শন, যুক্তিবিজ্ঞান, ইসলামি আইন এবং ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। দেওবন্দে শিক্ষার অধ্যায় সমাপ্ত করে মক্কা মুকাররমায় মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কীর কাছে কেরাত ও তাজবীদ শেখেন। তিনি কানপুরের একটি মাদ্রাসায় মাত্র ২৫ টাকা বেতনে শিক্ষকের পদ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে কানপুরের টপকাপুরে জামিউল উলূম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালকের আসন অলংকৃত করেন এবং দীর্ঘ ১৪ বছর সেখানে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তাঁর শিক্ষক হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর রহ. পরামর্শে তিনি থানা ভবনের খানকাহে ইমদাদিয়ায় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। সারা জীবনে আশরাফ আলী থানভী এর সকল বই এর হিসেব করতে গেলে ছোট-বড় মিলিয়ে তা সাড়ে বারো হাজার ছাড়িয়ে যায়। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমূহ এর মধ্যে ফিকাহ বিষয়ক বই ‘বেহেশতী জেওর’ উপমহাদেশের মুসলমানদের মাঝে বহুল পঠিত। এছাড়া তাঁর রচিত কুরআন শরীফের উর্দু তরজমার গ্রন্থ বয়ানুল কুরআনও (কুরআনের ব্যাখ্যা) এর ভাষা ও ব্যখ্যাশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমগ্র এর স্বত্ত্ব তিনি জাতির কল্যাণে উন্মুক্ত করে রেখে গেছেন। জুলাই ১৯, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে (১৬ রজব, ১৩৬২ হিজরী) আল্লামা থানভী রহ. তাঁর জন্মস্থান থানা ভবনেই মৃত্যুবরণ করেন।