যে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ঝগড়াটা এখনো চলছে সাহিত্যে কোন যুগের কিংবা সমাজের সমস্যা প্রবেশ লাভ করতে পারে কিনা। অর্থাৎ সাহিত্য কি শুধুমাত্র মানুষের আদিম ও চিরন্তন প্রবৃত্তি প্রেম ও কামনার সুন্দর প্রকাশই মাত্র কিংবা সাহিত্যে প্রত্যেক যুগের ও সমাজের বিশিষ্ট সমস্যার আলোচনা এবং চিত্রণও থাকতে পারে। এ দ্বন্দ্ব আজ আর এর পূর্বের স্তরে নেই, পূর্বের রূপ নিয়েও নেই। তবু এর চিরন্তন নিরসনও হয়নি। আজ পর্যন্ত প্রশ্নটা চিরকালই কোন না কোন ধরনে চলে আসছে। কিন্তু একটা আশ্চর্য ব্যাপার এই যে প্রশ্নটা থাকা সত্ত্বেও সমাজ সাহিত্য হ'তে নির্বাসিত হয়নি কোন দিন। কেন না এ পর্যন্ত দেখা গেছে যে, কোন বিশিষ্ট যুগের আত্মপরিচয় ইতিহাস যত সম্যক ভাবে দিতে না পেরেছে তার চেয়ে বেশী পেরেছে সে যুগের সাহিত্য। অবশ্য যুগের আত্মপরিচয় বলতে আমি মাত্র রাজারাজড়ার কাহিনী বলছিনে। যুগের পরিচয় দ্বারা আমি বলতে চাচ্ছি কোন বিশিষ্ট যুগের সমাজের রীতি নীতি, অবস্থা ব্যবস্থা, তার বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে সর্ম্পক ইত্যাদি। অবশ্য এ সম্পর্কেও নিশ্চয়ই মতবিরোধের অবকাশ রয়েছে। সাহিত্য ক্ষেত্রে সমাজ-বিমুখ চিরন্তনীদের মত এখানেও অনেকে সমাজের পরিচয় নিতে তার ভিতরের ছোট খাট ঘটনা, তার উৎপাদন-রীতি কিংবা এই উৎপাদন ব্যাপদেশে শ্রেণীতে শ্রেণীতে সম্পর্ককে বেশী আমল দিতে চান না। তাঁরা দেখেন কোন্ রাজা কত সালে কোন দেশ আক্রমণ ক'রল, কোন রাজা কোন সেনাপতিকে পরাজিত ক'রল। এই জয়-পরাজয়ের পিছনে যে অসংখ্য সেনাবাহিনী রয়েছে, মানুষ রয়েছে, তাকে সংখ্যার হিসাব ব্যতীত অন্য কোন গণনায় ঐতিহাসিক আনেন না।
মে ১, ১৯২৫- সালের পহেলা মে বরিশালের আটিপাড়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন৷ বাবা খবিরউদ্দিন সরদার কৃষিকাজ করতেন৷ মা সফুরা বেগম ছিলেন গৃহিণী৷ তাঁরা দুই ভাই তিন বোন৷ সরদার ফজলুল করিমের শৈশবকাল কেটেছে গ্রামে৷ ম্যাট্রিকুলেশন শেষে তিনি প্রথম ঢাকা আসেন ১৯৪০ সালে। ঢাকায় ১৯৪২ সনে তিনি তার আই.এ. পাঠ সমাপ্ত করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৪৫ সনে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স ও ১৯৪৬ সনে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার সাম্যবাদী বামপন্থী সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিগৃহীত হন। রাজবন্দি হিসেবে দীর্ঘ ১১ বৎসর বিভিন্ন পর্যায়ে কারাজীবন যাপন করেন। জেলে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৪ সনে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৯৬৩ থেকে '৭১ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পাকিস্তান হানাদারবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন। পরবর্তিতে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষক হিসেবে শিক্ষাদান শুরু করেন। তিনি ১৫ জুন, ২০১৪ তারিখে ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়মারা যান৷