ভূমিকা এত বড় বই কেন? উচ্চাকাক্সক্ষার ম্যাজিক সম্বন্ধে এত আলোচনাই বা কেন? এবছর বারো হাজার বই ছাপানো হবে। আরো একটা, কেন? এ বিষয়ে আপনাদের দু-একটা কথা বলতে চাই। কয়েক বছর আগে খুবই প্রভাবশালী এক সেলস্ মিটিং-এ গিয়েছিলাম। ঐ কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত ভাইস প্রেসিডিন্ট খুবই উৎসাহিত হয়ে একটা কথা বোঝাতে চাইছিলেন। মঞ্চে ওর সঙ্গে উপস্থিত ছিল ঐ সংস্থার প্রধান প্রতিনিধিদের একজন, অতি সাধারণ দেখতে এই ভদ্রলোক সে বছর উপার্জন করেছিলেন $ ৬০,০০০-এর সামান্য কম। অন্যান্য প্রতিনিধিদের গড় আয় ছিল $ ১২,০০০। ঐ এক্সিকিউটিভ মহাশয় সোৎসাহে বলে উঠলেন, “হ্যারির দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখুন। ওর মধ্যে এমন কি রয়েছে যা আপনাদের কারুর কাছে নেই? হ্যারি বাকিদের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি আয় করেছে, তাহলে কি ও সবার চেয়ে বেশি স্মার্ট? আমাদের কর্মচারীদের অভীক্ষণ কিন্তু তা বলে না, আমি দেখেছি। তাতে জানা যায় যে সে ঐ বিভাগে বাকিদের মতোই বুদ্ধি রাখে।” “তাহলে কি হ্যারি আপনাদের সবার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি পরিশ্রম করেছে? না রিপোর্ট তা বলে না। সত্যি কথা বলতে কি ও আপনাদের অনেকের চেয়ে বেশি ছুটি নিয়েছে।” “তাহলে? ওর এলাকাটা কি বেশি লাভজনক ছিল? আবার উত্তর হলো, না, কারণ সকলেই মোটামুটি একই রকম এলাকা পেয়েছে। তবে কি হ্যারি বেশি শিক্ষিত? স্বাস্থ্য বেশি ভালো? আবার বলছি, তাও নয়। হ্যারি অন্যান্য পাঁচজনের মতোই অতি সাধারণ স্বাভাবিক ছেলে, তফাত শুধু একটাই।” “তফাতটা হলো, ভাইস প্রেসিডেন্ট বললেন, হ্যারি বাকিদের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি উচ্চাভিলাষী।” এরপর ঐ ভদ্রলোক বোঝাতে লাগলেন আমাদের মস্তিষ্কের আয়তন আমাদের সাফল্য নির্ণয় করে না, সাফল্য নির্ভর করে আমাদের চিন্তা-ভাবনা, উচ্চাকাক্সক্ষার পরিমাণের উপর। ব্যাপারটা কৌতূহলোদ্দীপক। আমায় ভাবিয়ে তোলে। যত বেশি লোকের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করলাম, যত আলাপ আলোচনা করলাম, সাফল্যের আসল কারণটা কি এ নিয়ে যত ভাবনা-চিন্তা করলাম, উত্তরটা ততই স্পষ্ট হয়ে উঠল। একের পর এক কেসের ইতিহাসে দেখলাম ঐ একই কাহিনীর পুনরাবৃত্তি, ব্যাঙ্কে জমা অর্থের পরিমাণ, সুখের পরিমাণ, আত্ম সন্তুষ্টির পরিমাণ সবই নির্ভর করে নিজের চিন্তা-ভাবনা, আকাক্সক্ষার পরিমাণ কতখানি তার উপর। এটাই উচ্চাকাক্সক্ষার আসল ম্যাজিক। প্রতিটি মানুষ চায় সাফল্য। সকলেই জীবনে সবচেয়ে সেরা জিনিস কামনা করেন। কেউ-ই সাদামাটা জীবনধারা চান না, হামাগুড়ি দিয়ে চলেতে চান না কেউ-ই। কেউ-ই দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ হতে চান না, জোর করে তাকে ঐ শ্রেণিতে পাঠিয়ে দেওয়া হলে সে মোটেই খুশি হন না। পবিত্র কোরআনে উক্তিতে বলা হযেছে “লাইসা লিল ইনসানে ইল মা-সা‘আ”, অর্থাৎ মানুষের জীবনে পরিশ্রম ছাড়া সাফল্য লাভ হয় না। আর পবিত্র বাইবেলের বর্ণনা মতে সফল হওয়ার কয়েকটি ব্যবহারিক উপায় নিহিত রয়েছে, তাতে জানানো হয়েছে যে, বিশ্বাসে পাহাড়কেও টলানো যায়। বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম মননশীল ব্যক্তিদের চিন্তাধারায় উচ্চাকাক্সক্ষার ম্যাজিকের মূল উপাদান ও বিষয়বস্তু খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন প্রফেট ডেভিড বলে গিয়েছেন, “মানুষ যেমনটি চিন্তা করবে ঠিক তেমনিট হয়ে উঠবে।” এমারসন বলেছিলেন “মহাপুরুষরা জানেন চিন্তাশক্তি বিশ্ব সংসার পরিচালনা করছে।” মিল্টন ‘প্যারাডাইস লস্ট' এ লিখেছিলেন, “মনই আসল, মনই স্বর্গকে নরকে বা নরককে স্বর্গে পরিণত করতে পারে।” অদ্ভুত মননশীল ব্যক্তিত্ব শেক্সপীয়ার যেমন বলেছেন, “ভালো বা মন্দ বলে কিছু নেই, চিন্তা-ভাবনা জিনিসকে ভালো বা মন্দ করে তোলে।” তবে প্রমাণ কোথায়? কি করে বোঝা যাবে এসব মহান বিদগ্ধ ব্যক্তিত্বরা যা বলেছেন তা নির্ভুল? ভালো প্রশ্ন। তবে প্রমাণ কিন্তু পাওয়া যায়, আমাদের চারিদিকে বাছাই করা কয়েকজন মানুষের জীবনই তার প্রমাণ, সফল হয়ে এরা নিজেদের জীবন সার্থক ও সুখময় করে তুলেছেন। উচ্চাকাক্সক্ষার ম্যাজিকের যথার্থতা প্রমাণ করেছেন। উচ্চাকাক্সক্ষা পোষণ করুন, নিজের জীবনটাকে বিশাল করে তুলুন। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বিশাল, সাফল্য ও কৃতিত্বে বিশাল! উপার্জন বিপুল! বন্ধু পরিজন বিপুল! প্রচুর সম্মান, ইত্যাদি গুণে গুণানি¦ত হয়ে উঠুন। এবার শুরু করা যাক, এক্ষুণি ভাবতে শুরু করুন আপনার চিন্তাভাবনা কীভাবে ম্যাজিক করতে পারে। মহান দার্শনিক ডিসরেলির এই বক্তব্য দিয়ে শুরু করা যাকÑ “জীবনের মেয়াদ এত কম যে জীবনটা তুচ্ছ নগণ্য হতেই পারে না।” সাফল্য মানে আত্মসম্মান, জীবনে অবিরাম ও সত্যিকার সুখ সন্তুষ্টি পাওয়া, যারা নির্ভরশীল তাদের জন্য আরো কিছু করার ক্ষমতা অর্জন করা। উচ্চাকক্সক্ষার ম্যাজিক আপনাকে অবশ্যই সাফল্য লাভে একান্তভাবে সহযোগিতা করবে। আপনার সাফল্য কামনায়- ডেভিড জোসেপ শ্বার্টজ পি.এইচ.ডি. ইউ.এস.এ