রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখা ও সুরারোপিত গান সম্পর্কে একদা মন্তব্য করেছিলেন যে কালপ্রবাহে তাঁর অন্যান্য রচনা জনপ্রিয়তা হারালেও ছোটগল্পসহ তাঁর গানগুলো টিকে থাকবে। সে কথার বাস্তবতা যে কতখানি তা অনুমান করা যায় রবীন্দ্র সংগীতের কালক্রমিক ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা দেখে। তবে এই জনপ্রিয়তা অনেকখানি নির্ভর করে সুরের উপর, অনেক শ্রোতা গানের মর্মকথার ভিতরে ঢুকতে পারে না। তাদের মনোযোগ আরও একটুখানি বাড়ানোর জন্য বিশেষ কিছু জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীতের মর্মকথা লিখে এই সংকলনটি প্রকাশ করা হলো। গানের ইংরেজি অনুবাদ করার প্রয়োজন কেন হলো তা বলতে গেলে কিছুটা রবীন্দ্র সংগীতের বিষয় বৈচিত্র্য অনেক। তন্মধ্যে প্রেম, দেশাত্মবোধ ও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা বহুসংখ্যক গানের সাধারণ বিষয়বস্তু হয়ে রয়েছে। বর্তমান সংকলনটিতে অনুরূপ শ্রেণিবিন্যাস করা সম্ভব হয়নি। তবে মর্মকথায় তা পরিষ্কার করা হয়েছে। সহজ কথায় মূল ভাবটি বিশ্লেষণ করে বুঝতে সাহায্য করা হয়েছে মাত্র, নতুন কোনো প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়নি। তবে কোনে কোনো গানের পটভূমি উল্লেখ করা হয়েছে যাতে গানের প্রাসঙ্গিক অর্থ স্পষ্ট হয়। সঙ্কোচ বোধ না হয়ে পারে না। খুব সহজ করে বলতে হলে বিশ্বকবির আন্তর্জাতিক খ্যাতির আশ্রয় নিতে হয়। সে কথা কি এক্ষেত্রেও অনেকখানি প্রাসঙ্গিক নয়? আমার এই ভাঙা ভাঙা ইংরেজি কি ভিন্ন ভাষাভাষী কাউকে না কাউকে সামান্যতম কৌতূহলী করে তুলতে পারবে না বাংলা সাহিত্যের এই অমূল্য ঐশ্বর্য সম্পর্কে? এছাড়াও অনেক বাঙালির কাছেও এর প্রয়োজন হতে পারে যারা রবীন্দ্রনাথের কাব্যিক ভাষা ও প্রকাশভঙ্গির সাথে ততটা পরিচিত নন। একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে যে অনুবাদের ভাষা অনেকটা সহজ। রবীন্দ্রনাথ যেকথা উচ্চাঙ্গের কাব্যিক বিন্যাসে প্রকাশ করেছেন তা আমি সহজ ইংরেজি গদ্যে বলেছি। ইতোমধ্যে সেকথা একাধিক পাঠক আমাকে বলেছেন এবং তাদের এই মন্তব্য আমাকে উৎসাহিত করেছে আর তাই অনুরূপ আরও কিছু কাজ করার আগ্রহবোধ করছি। আশা করি আমার বর্তমান সংকলনটি পাঠক সমাজকে কিছুটা হলেও আগ্রহান্বিত করতে পারবে।
নিরলস সাহিত্য-সেবক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক আব্দুল হামিদ (কলমী নাম: হামিদ মোল্লা) ১৯৫২ সালে সাতক্ষীরা সদরের অদূরে অবস্থিত নিভৃত পল্লী দামারপোতা গ্রামের এক শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । বিদ্বানুরাগী পিতা জেহের আলী মোল্যা ও মাতা রামিসা খাতুন শিশুকালে পোলিও রোগে আক্রান্ত ও শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে অত্যন্ত চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েন । দূরদৃষ্টি সম্পন্ন একান্নবর্তী দাদা (পিতামহের সহোদর ভাই) আলহাজ্ব ওয়াহেদ আলী মোল্যা সাহেবের স্নেহানুকূল্যে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বালক আব্দুল হামিদ গৃহ শিক্ষকের কাছেই তৃতীয় শ্রেণীর পাঠ শেষে এতদঞ্চলের অন্যতম প্রাচীনতম বিদ্যায়তন জি.এন. সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তৎপরবর্তীতে সাতক্ষীরা প্রাণনাথ (পি.এন) হাই স্কুল থেকে ১৯৭০ সালে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে এস.এস.সি. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন । তিনি সাতক্ষীরা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচ.এস.সি. পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স সহ মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন । তিনি ১৯৮২ সালে বি.সি.এস. (শিক্ষা) ক্যাডারে সরকারী কলেজের অধ্যাপনার কাজে নিয়োজিত হন । হামিদ মোল্লা ঐতিহ্যবাহী সরকারী আজম খান কমার্স কলেজ (খুলনা), সাতক্ষীরা সরকারী কলেজ, সাতক্ষীরা সরকারী মহিলা কলেজ সহ দীর্ঘ সময় বেশ কয়েকটা সরকারী কলেজে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপনা করে সর্বশেষে প্রিন্সিপাল হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন । অদ্যাবধি তিনি জ্ঞান তৃঞ্চা নিবারণে সচেষ্ট । সাহিত্য-সংস্কৃতির উন্নয়নে তিনি সদা-সর্বদা নিবেদিত প্রাণ । ‘বই-পোকা’ অধ্যাপক আব্দুল হামিদ উদারতা ও অহিংস চিন্তার অধিকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুশীল সমাজে সমাধিক সমাদৃত । ইংরেজী সাহিত্য চর্চা ছাড়াও তিনি তাঁর সহোদর (অগ্রজ) অধ্যাপক আব্দুল মান্নান (অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান, সরকারী বি.এল. কলেজ)-এর মত বাংলা সাহিত্যেরও অন্যতম গবেষক । তিনি রবীন্দ্র ও ক্লাসিক সাহিত্যের বিশেষ অনুরাগী । ইতোমধ্যে বাংলা ভাষায় রচিত তাঁর ‘দ্য গোল্ডেন বুক অব টেগর ও রবীন্দ্রনাথ’, ‘রবীন্দ্র অভিজ্ঞা’, ‘রবীন্দ্র সঙ্গীতের মর্মকথা’’, ‘শেকসপীয়রের নাট্যজগৎ’ ইত্যাদি গ্রন্থ সাহিত্যাঙ্গনের বিজ্ঞ মহলে বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে । প্রকাশের অপেক্ষায় আছে হামিদ মোল্লা রচিত বিশ্বের অন্যতম খ্যাতিমান ছোট গল্পকার “কাউন্ট লিও টলস্টয় গল্পগ্রন্থ”, “ইংরেজী কাব্যের ত্রি-জামানা” শীর্ষক অন্যান্য গ্রন্থাবলী ।