গিদাইন্সক পোল্যান্ডের প্রধান সমুদ্র বন্দর এবং চতুর্থ বৃহৎ শহর । এই শহর দুবার ইতিহাসের মোড় ঘুরায় । প্রথমটি মানব ইতিহাসে ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে আসে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় গিদাইন্সকে । আর দ্বিতীয়বার, সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রিত কমিউনিস্ট বিশ্বব্যবস্থার পতনের শুরুও হয় গিদাইন্সকে, সলিডারিটি আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে । এই দুই-ই আজকের ইউরোপের মানচিত্র নির্মাণে বড় ভূমিকা রেখেছে । এই দুই ঘটনা ছাড়াও, দশম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত গিদাইন্সক এগারোশ বছরে বহু উত্থান-পতনের নাটকীয়তায় সমৃদ্ধ হয়ে এখন একটি আধুনিক শহরে রূপান্তরিত হয়েছে । ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে গিদাইন্সক বহু দেশ ও রাজত্বের অধীন ছিল । দীর্ঘ সময় স্বাধীনও ছিল । এখানে বহু জাতি, মত ও পথের মিলন ঘটেছে । ফলে গিদাইন্সক বৈচিত্রময় । আজ বৈচিত্রই তার প্রাণ । একজন পর্যটকের মতো লেখক কেবল দেখেননি, বরং বৈচিত্রের ভিত্তি অনুসন্ধান করেছেন । এই লেখা সেজন্য কেবল ভ্রমণকাহিনি না, গিদাইন্সকের ইতিহাস বা পর্যটন-কেন্দ্রিক আলোচনা না, বরং একটা জনপদকে ভেতর থেকে দেখার ইতিবৃত্ত । লেখক তার নাম দিয়েছেন, “গিদাইন্সক – ইউরোপের শুরু যেখানে ।'
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মাহফুজুর রহমান ছিলেন একজন পেশাদার কূটনীতিক। তিনি পোল্যান্ড, ইউক্রেন ও মলডোভায় পাঁচ বছরেরও বেশি সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্থাপত্যে স্নাতক এবং অস্ট্রেলিয়ার মনাশ বিশ্ববিদ্যালয় হতে কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, হাওয়াইয়ের এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, নিরাপত্তা ও শান্তি বিষয়ে একাধিক কর্মশালা ও অনুশীলন সমাপ্ত করেছেন। তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুল ও মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের ছাত্র। ১৯৬১তে জন্ম নেওয়া মাহফুজুর রহমান দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন পত্রিকায় এবং অনলাইন সাময়িকী ও গবেষণা সাইটে নিয়মিত লিখেন, যার মধ্যে দি নিউ এজ, বাংলাদেশ পোস্ট, প্রথম আলো অনলাইন ভার্শন, সংবাদ প্রতিদিন, জিওপলিটিকস ডট কম অন্যতম। তিনি আন্তর্জাতিক রাজনীতি, নিরাপত্তা ও কূটনীতি নিয়ে যেমন লিখেন, তেমন লিখছেন নন্দনতত্ত্ব ও চিত্রশিল্প নিয়ে নিবন্ধ কিংবা ভ্রমণকাহিনি, ছোটো গল্প ও কবিতা। কোনো কোনো লেখা এর মধ্যে সাপ্তাহিক ২০০০, হাল-ফ্যাশন, তর্কবাংলা, ঘুঙুর, দেশ-প্রসঙ্গ সাময়িকীতে প্রকাশিত। তাঁর ভ্রমণকাহিনিতে এমন বিচিত্র সব উপাদান নিয়ে আসেন যে লেখাটি বহুমাত্রায় উপভোগ্য হয়ে উঠে। তাঁর গদ্যশৈলী সহজ এবং সাবলীল। লেখার পাশাপাশি মাহফুজুর রহমান ছবি আঁকেন, আবৃতি করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা করেন। তিনি নিতোমধ্যে ওয়ারশ, এথেন্স, মেক্সিকো সিটি এবং টোকিয়োতে চিত্রপ্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। তাঁর অধিকাংশ বইয়ের পাতায় পাতায় তিনি নিজের আঁকা ছবিও জুড়ে দেন। তিনি গান, বিশেষ করে পুঁথি ও জারি গানও রচনা করেছেন। আশ্চর্য না যে তাঁর বহুমাত্রিক প্রতিভা তাঁকে মিজ এশিয়া-প্যাসিফিক আর্থ প্রতিযোগিতা বা গুড ফুড ফেস্টিভালে বিচারকের আসনে আসীন করেছে। ছাত্রাবস্থায় তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি লেখালেখির পাশাপাশি সংসদীয় পদ্ধতি, শাসন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র নিয়ে গবেষণা কর্মের সঙ্গে জড়িত।