বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন উপাদান ‘কবিতা’। কবিতাই বাঙালির প্রাণের স্পন্দন। কবিতার নান্দনিক ঝংকারেই জেগে ওঠে বাঙালির মর্মকথা। প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগের এই সুবিস্তীর্ণ কালপরিসরে সর্বাধিক যে-সাহিত্যশস্য উৎপন্ন হয়েছে নিঃসন্দেহে তার নাম ‘কবিতা’। কবিতা কখনো পুরোনো হয় না। যখনই মানুষ সুকবিতার মুখোমুখি হয় তখনই কবিতা নতুন রূপে, নতুন আবেগে মানুষের কাছে তার মনের কথা ব্যক্ত করে। ঠিক এ কারণেই কবিতা অমর ও অবিনাশী। অনেক বছর আগেই বাংলা কবিতা হাজার বছর অতিক্রম করেছে। তবু এই গ্রন্থের নাম ‘হাজার বছরের বাংলা কবিতা’ এ কারণে নামকরণ করেছি যে, ‘হাজার বছর’ বলতে কোনো সুনির্দিষ্ট সময় বোঝাতে চাইনি, হাজার বছর শব্দটি দ্বারা মূলত প্রাচীনকাল থেকে আধুনিককালকেই ইঙ্গিত করার চেষ্টা করেছি। প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগ এই তিন যুগ পরিব্যাপ্ত বাংলা কবিতার ইতিহাস। প্রায় ছয় শ বছর প্রাচীন যুগের কালপরিসর (মতান্তরে আড়াই শ বছর), মধ্যযুগের ব্যাপ্তিও ছয় শ বছর। সেই তুলনায় আধুনিক যুগ একেবারে নবীন। এর বয়স মাত্র দুই শ বছর। কিন্তু এ কথা আমাদের মেনে নিতেই হবে, আধুনিক যুগ নবীন হলেও এই সময়ের মধ্যে যত কবি ও কবিতার জন্ম হয়েছে অন্য দুই কালে তা হয়নি। আধুনিক যুগ সত্যিকার অর্থেই এক আশ্চর্য যুগ। এ যুগ সব অর্থেই বিস্ময় উদ্রেককারী। কবিতার নতুন নতুন আঙ্গিকই শুধু এই যুগে প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি, বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে মেধাবী কবিগণ আধুনিক যুগেই জন্মগ্রহণ করেন। কবিতার পাঠকমাত্রই জানেন, কালে কালে সব ভাষার কবিতারই সংকলন করার তাগিদ অনুভব করেছেন সংশ্লিষ্ট ভাষার কবি-সমালোচক ও গবেষকগণ। বাংলা কবিতাও এ ধারা থেকে ব্যতিক্রম নয়। ইতঃপূর্বে বাংলা কবিতার বেশ কিছু সংকলনগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মোহিতলাল মজুমদার, বুদ্ধদেব বসু, হুমায়ুন আজাদ প্রমুখ কবি বাংলা কবিতার যেসব সংকলন প্রকাশ করেছেন বাঙালি কবিতাপাঠক সেসব গ্রন্থ অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। বলতে কুণ্ঠা নেই, উপরিউক্ত সংকলকদের গ্রন্থসমূহ যথেষ্ট মানসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও তা সর্বজন প্রশংসিত হয়নি। কোনো সংকলনগ্রন্থ সার্বিক বিচারে পরিপূর্ণ গ্রন্থ নয়। একজন সংকলকের বিচার-বিশ্লেষণ অন্যজনের সঙ্গে না-ই মিলতে পারে। এটা কোনো দোষের বিষয় নয়, এটা রুচির বিষয়। রুচির ভিন্নতা দূষণীয় নয়, বরং গ্রহণীয়ই বটে। হাজার বছরের বাংলা কবিতা সংকলনগ্রন্থেও সংকলকের নিজস্ব রুচির পরিচয় আছে, এটা সবার রুচির সঙ্গে মানানসই না হলেও অনেকেই একে সাদরে গ্রহণ করবেন এতে আমরা সংশয় পোষণ করি না। এই গ্রন্থ প্রণয়নকালে আমরা বেশ কিছু সংকলনগ্রন্থের সাহায্য নিয়েছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত ‘বাংলা কাব্যপরিচয়’, মোহিতলাল মজুমদার সম্পাদিত ‘কাব্য-মঞ্জুষা’, হুমায়ুন আজাদ সম্পাদিত ‘আধুনিক বাংলা কবিতা’, আহমদ শরীফ ও মোহাম্মদ আবদুল হাই সম্পাদিত ‘মধ্যযুগের বাঙলা গীতিকবিতা’র কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়।
মােনায়েম সারকার ১৯৪৫ সালের ৩০ শে মার্চ কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার ফতেহাবাদ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর রাজনীতিতে হাতে খড়ি স্কুল জীবন থেকে । স্কুল ক্যাপটেন হিসাবে তিনি তখন কার ছাত্র আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত পদার্থবিদ্যায় ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বের সাথে এম.এস.সি, ডিগ্রি লাভ করার পরও বাম রাজনীতির টানেই তিনি সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মরি জীবন বেছে নেন। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও বাকশালের রাজনীতিতে উল্লেখযােগ্য অবদান রাখেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যােগদান করেন । বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিতান ও প্রযুক্ত বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও সংস্কৃতি ও সাহিত্যক্ষেত্রেও তার পদচারণা অবারিত। তিনি উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তার লেখায় সমসাময়িক চলমান রাজনীতির বিষয়াদি প্রাধান্য পায় । তাঁর রচিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলি হলাে : বাংলাদেশে বিপ্লবী গণতন্ত্রীদের উত্থান অনিবার্য (১৯৮৭), বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র বিকাশে ঐক্য অপরিহার্য (১৯৯১), ইতিহাসের আলােকে বাঙালি জাতীয়তার বিকাশ ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯২), জাতীয় বিকাশের মূলস্রোত বনাম তৃতীয় ধারা (১৯৯২), গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠান বামপন্থীদের করণীয় (১৯৯২), বামপন্থীদের সঙ্কট ও বাংলাদেশের রাজনীতি (১৯৯৩), বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (১৯৯৬), বহতা নদীর মত আওয়ামী লীগ (২০০০), ও এক রাজনৈতিক কর্মীর প্রতিচ্ছবি (২০০৩), যুক্তফ্রন্ট থেকে মহাজোট (২০০৭), জাগাে বাঙালি কানঠে সবায় (২০০৭), রাজনীতির চালচিত্র (২০০৮) তার সম্পাদিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলাে হলাে : রক্তমাখা বুক জুড়ে স্বদেশের ছবি (১৯৮২), ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯৪), মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব (১৯৯৫), জাতীয় চার নেতা স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৬), বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস (যৌথভাবে) (১৯৯৭), স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৭), শেখ মুজিব একটি লাল গােলাপ (১৯৯৮), বাঙালি বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু (২০০০), বাঙালির কণ্ঠ (২০০১), স্বাধীনতা বিরােধী চক্রের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট ।। চুয়ান্নর অভিজ্ঞতা (৫৪-র নির্বাচনের অপ্রকাশিত দলিল), জেগে ওঠার সময়। এখনই (২০০৭), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি (২০০৮),। মােনায়েম সরকারের নির্বাচিত রাজনৈতিক রচনা (২০০৯) ইত্যাদি। বর্তমানে তিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক।