“এই বইটি আপনাদের জন্য কী করতে পারে।” এ বইটিতে জীবনে চলার পথে প্রয়োজনীয় কৌশলাদির সংকেত সম্বন্ধে লিখা হয়েছে এবং এর সাথে আরো অনেক উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে, যে সব প্রমাণ করে যে, আপনাদের কারো কোনভাবেই কোন কিছু দ্বারা পরাজিত হওয়া ঠিক নয় যাতে আপনি আরো অধিকতরভাবে মনের শান্তি পেতে পারেন, স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারেন, ধরে রাখতে পারেন বিরামহীন শক্তিধারাকে অনির্বার, এ বইটিতে সেই পথনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমার বই এটাই বলতে চেয়েছে আপনার জীবন কীভাবে আনন্দে এবং আত্মতৃপ্তিতে পরিপূর্ণ হতে পারে। আর এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই কারণ আমি অসংখ্য পাঠক এবং অনুশীলনকারীকে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, যারা এ সহজ সরল বিষয়গুলোকে প্রয়োগ করে তাদের জীবনে পূর্বে উল্লেখিত যে অর্জনগুলোর কথা আমি বলেছি সেগুলো তারা তাদের জীবনে অর্জন করেছেন। এটাই নিশ্চয় বলা হতে পারে যে একে অযৌক্তিক মনে হচ্ছে কিন্তু মানুষের সত্যিকার লব্ধ অভিজ্ঞতায় বইটি যে খাঁটি কিছুর উপর নির্ভরশীল তা যথাযথভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সব মিলিয়ে এটিতো সত্যি যে জীবনের নিত্যদিনের হরেক সমস্যায় অজস্র মানুষ পরাজিত হচ্ছে। তারা অবিরাম সংগ্রাম করছে। সংগ্রাম নিষ্ফল হবার জন্য অবিরত ঘ্যান ঘ্যান করছে, রাগে বিরক্তি প্রকাশ্য ছি যে, এত করেও জীবন শুধু তাদের দিয়েছে এক বাজে ভাঙ্গাচোরা নিয়তি বাধাগ্রস্ত করেছে তাদের সৌভাগ্যের পথ। একদিক থেকে বলতে গেলে জীবন এমন বিষয় থাকতেই পারে যেমনটি এসেছে অবাঞ্ছিত বাধা কিন্তু এমন এক আত্মশক্তি এবং উপায়ও আছে যা দিয়ে আমরা ঐ বাধাকে নিয়ন্ত্রিত এবং এমন কি মনের জোর ও প্রতিজ্ঞা শক্তিতে তাকে সীমাবদ্ধ করে দিতে পারি। এটা খুবই দুঃখজনক যে, মানুষ তাদের নানাবিধ সমস্যা উদ্বিগ্নতা এবং কষ্টকাঠিন্য দ্বারা পরাজিত হয়ে নিজেদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলে, আসলে এমনটি হওয়া একেবারেই ঠিক নয়। বইটি লিখা হয়েছিল এ দুনিয়ার সাধারণ মানুষদের জন্য, নিশ্চিত যে আমিও তাদের একজন। আমি জন্মেছিলাম এবং লালিতপালিত হয়েছিলাম মধ্য পাশ্চাত্যের নিবেদিতপ্রাণ এক খ্রিস্টান পরিবারের বিনয়ী পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে। এখানকার সবাই ছিল আমার মনের মত যাদেরকে আমি জানতাম এবং ভালোবাসতাম পরম বিশ্বাসে। যখন পরম বিশ্বাসে তাদের কেউ বিধাতার হাতে নিজেকে সঁপে দিত, বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে দেখল, কীভাবে ঐশীশক্তি ও গরিমা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে তাদের জীবন রনের উত্তরণে। গভীর উদ্বেগের সাথে বইটি লিখেছিলাম মানুষের দুঃখ বেদনা, কষ্ট ও অস্তিত্বের সংগ্রামের উপর। বইটি আমাদের শেখায়, কীভাবে মনের শান্তির আবাদ করতে হয়, এবং তা বৈরী জীবন থেকে পালিয়ে সুরক্ষিত, নিশ্চল বন্দিত্ব স্বীকার করে নয়, বরঞ্চ তা কাজ করে একটি শক্তি কেন্দ্র রূপে, যা থেকে উদ্ভূত হয় গঠনমূলক ব্যক্তিবর্গের ও সমাজজীবনের চালিকাশক্তির। এটি শিক্ষা দেয় সঠিক চিন্তার যথার্থতা, খ্যাতি সুখ্যাতির উপায় বের করার জন্য নয়, ধনসম্পত্তি ও শক্তিধর হবার জন্য নয়। কিন্তু শিক্ষা দেয় কীভাবে বিশ্বাসের বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে জীবনের পরাজয়কে পরাভূত করে জীবনের গঠনমূলক ও মূল্যবান মূল্যবোধকে সুসম্পন্ন করতে হয়। এক কঠিন ও সুশৃঙ্খল জীবন পথের দিশারী এ বই, আবার এও সত্যি যে বা যারাই তার বা তাদের জীবনে জয়লাভ করেছে, জয়লাভ করেছে এ বৈরী দুনিয়ার নানা বিরূপ ও প্রতিকূল অবস্থার উপর, এ বই নিঃসন্দেহে তাদের জন্যে নিয়ে আসে জয়ের অনাবিল মহানন্দ।
ড. নরম্যান ভিনসেন্ট পিল একজন আমেরিকান চিন্তাবিদ, লেখক এবং ধর্মযাজক, যিনি তাঁর লেখনী দ্বারা সারা জীবন দিশেহারা মানুষকে পথ দেখিয়ে এসেছেন। অনুপ্রেরণা ও প্রেষণার শিক্ষা পাওয়া যায় তাঁর লেখা আত্মকল্যাণমূলক বইগুলো পড়লে। নরম্যান ভিনসেন্ট পিল যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও এর বোয়ার্সভিলে জন্মগ্রহণ করেন ৩১ মে ১৮৯৮ সালে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন স্থানীয় ধর্মযাজক। তিনি বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন এবং মেথডিস্ট হিসেবে নিউ ইয়র্কের সাইয়াকুজ ইউনিভার্সিটি মেথডিস্ট চার্চে যোগ দেন। ১৯৩৩ সালে তিনি একই শহরের ৩০০ বছরের পুরনো মার্বেল কলেজিয়েট চার্চে চলে আসলে মেথডিস্ট থেকে ডাচ রিফর্মডে পরিবর্তিত হন। পিল এবং তাঁর সাথে স্মাইলি ব্লান্টন মিলে এক ধর্মীয়-আত্মোন্নয়নমূলক বই লেখা শুরু করেন। এভাবে এই জুটির দিকনির্দেশনায় আমেরিকায় ‘আমেরিকান ফাউন্ডেশন অব রিলিজিয়ন অ্যান্ড সাইকিয়াট্রি’ গড়ে ওঠে। ড. নরম্যান পিল পথভ্রষ্ট দিশেহারা মানুষকে নিজেদের সার্বিক গঠন, আত্মোন্নয়ন এবং অনুপ্রাণিত করতে রেডিও, টেলিভিশন প্রোগ্রাম এবং বইয়ের সাহায্য নেন। ১৯৩৫ সালে পিল ‘দ্য আর্ট অব লিভিং’ নামের রেডিও প্রোগ্রাম চালু করেন। এছাড়াও তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘গাইডপোস্ট’ ম্যাগাজিনটি ছিল আত্মোন্নয়ন ও উদ্দীপনা জোগাতে ইতিবাচক চিন্তার গুরুত্ব সম্পর্কে। খুবই সাধারণ জীবনযাত্রার ধারক ড. নরম্যান ভিনসেন্ট পিল এর বই সমূহ মানব হিতকর এবং ইতিবাচক চিন্তার বিষয়বস্তু নিয়ে তাঁর সুগভীর গবেষণা ও মননেরই প্রতিফলন। ৯৫ বছরের সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি আত্মোন্নয়নে নিজস্ব চিন্তার তাৎপর্য পথভ্রান্ত মানুষদের আলো দেখিয়ে গিয়েছেন। ড. নরম্যান ভিনসেন্ট পিল এর বই সমগ্র হলো ‘দ্য পাওয়ার অব পজিটিভ থিংকিং’, ‘এনথুজিয়াজম মেকস দ্য ডিফারেন্স’, ‘পজিটিভ ইমেজিং’, ‘ইউ ক্যান ইফ ইউ থিংক ইউ ক্যান’, ‘দ্য অ্যামেজিং রেজাল্টস অব পজিটিভ থিংকিং’ ইত্যাদি। ‘দ্য পাওয়ার অব পজিটিভ’ এর ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ পাঠক কর্তৃক এর সমাদরেরই জানান দেয়। বরেণ্য এই চিন্তাবিদ ও লেখক ১৯৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর পরলোকগমন করেন।