পুকুর পাড়ে ছোট্ট ছাউনির পূজার ঘর, চালা বলা চলে। সারা বছর কোনো ঠাকুর থাকেনা এখানে। শীতলা পূজার সময় মাটির মুর্তি এনে পূজা হচ্ছে এখন। ফুল বেলপাতা আর প্রসাদের ফুটি তরমুজ আর অন্যান্য ফলের ঘ্রাণের সাথে মিশে ছিল ধূপের গন্ধ। পাড়ার সব ছেলেপুলেরা ঢাক আর কাসরের বাদ্যের আওয়াজে জড়ো হয়েছে। দত্ত বাড়িতে এই পূজা ওদের নিজস্ব আয়োজন। মা শীতলাকে সন্তুষ্টির জন্য প্রতি বছর এই পূজা করে শৈলেন দত্ত। পুকুরের ওপারে বিল, তার ওপারে বিশ্বাস বাড়ি। ঐ বাড়ির লোকজনও আসে পূজায় অংশগ্রহণ করে। একজন ঢাকী ঢাক বাজাচ্ছে, সাথে তার বালক বয়সী সহকারী হাতে কাসরে ঠং ঠং একটা আওয়াজ তুলছে। বালকটির মলিন শার্টের সাথে মুখটাও খুব মলিন। রাতে পাঠা বলি হবে। বলির জন্য জোড়া বাঁশ খাটো করে কেটে হাড়িকাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে। ছোটো একটা কালো পাঠা পাশের আমলকি গাছটার সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। সিঁদুর আর দূর্বা ঘাস মাথায় পাঠাটি একটানা ব্যা ব্যা করে চলেছে। ঢাকের আওয়াজে সে শব্দ তেমন শোনা যাচ্ছে না। পালির সাথে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পূজা দেখছে প্রতিবেশী শায়লা। পালির মা বড়ো মেয়ে শিমুলের সাথে বসে পূজার নানা কাজ করছে। শিমুলের আশীর্বাদ হয়ে গেছে কয়েকদিন আগে, সে পূজা আর্চার কাজ করছে খুব মনোযোগ দিয়ে। -কিরে পালি তুই মেহমানের মতো দাড়াইয়া আছিস কেন, আয় হাত - লাগা। কত কাজ পইড়া আছে। পালির মা পালিকে ডাকছে। পালি খালি পায়ে একটা গোলাপি প্রিন্টের ফ্রক পরা, বছর দশেক বয়স। - না, আমার কাজ আছে কি কাজ তোর? আয় মাকে সাহায্য কর। শিমুলও ডাকছে ওকে। - তুমি করো। তোমার বিয়ে সামনে, কাজ শেখো। - কি পাকামি হচ্ছে? শিমুল বিয়ের কথায় একটু লজ্জা পেল। শিমুল এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে এবার । লেখাপড়ায় তেমন ভালো নয়। আবার একদিন শটী ভিটার হিজল গাছের নিচে ওকে পাশের বাড়ির ইমরানের সাথে কথা বলতে দেখেছে ওর মা।