"এনাম, নিনেভ, বেবিলন-এইসব নাম যেমন ধূসর তেমনি উজ্জল; এই সভ্যতাগুলোর প্রাক্তন অস্তিত্ব এবং আমূল অবলুপ্তি আমাদের জীবনের প্রেক্ষিতে সমান, অর্থহীন। কিন্তু ফ্রান্স, ইংল্যাণ্ড, রাশ্যা...এই নামগুলো অপরূপ। এমনকি লুসিতানিয়া নামটিও মনোরম। এবং আজ আমরা দেখছি যে, ইতিহাসের খাদ এতই গভীর যে, তা গোটা বিশ্বকে গ্রাস করতে পারে। আমরা উপলব্ধি করতে পারছি যে, মানুষের মতন সভ্যতাগুলোও স্বল্পায়ু, মরণশীল। যে পরিস্থিতিতে কীটস এবং বোদল্যেয়রের রচনা মেনান্দারের রচনাবলির মতোই একই নিয়তি মেনে নেবে, সে পরিস্থিতি আর আমাদের কল্পনার আওতাতীত নয়।" এই বিষণ্ণ শব্দগুলো উচ্চারণ করেছিলেন পল ভ্যালেরী, প্রথম মহাযুদ্ধের পর। কিন্তু ভিয়েতনাম, চেকোশ্লোভাকিয়া, যে অফ পিগস, চিলি, আলজেরিয়া ও তিব্বতের, এমনকি বাংলাদেশের পর পল ভ্যালেরীর মতো মহৎ কবি কোন বিশ্ববিক্ষাকে আঁকড়ে ধরতেন? তাঁর সংবেদনক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নিশ্চয়ই তিনি নৈঃশব্দ্যকে বেছে নিতেন না। তাহলে তাঁর লেখায় কোন সুরটি ধরা দিতো? নৈর্ব্যাক্তিক, ধ্রুপদী শিল্পাদর্শ কি তিনি বর্জন করতেন না? দ্বিতীয় যুদ্ধান্তিক বিশ্ব তাঁর কাছে ঢের বেশি অসহনীয় মনে হতো, বিশুদ্ধ মুক্তির চর্চা অধিকতর অর্থহীন।
শহীদ কাদরী জন্ম ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট কলকাতায়। কবিতা লেখার শুরু পঞ্চাশের দশক থেকেই। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে। পঁচিশ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘উত্তরাধিকার প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘তােমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। এর চার বছর পর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ কোথাও কোনাে ক্ৰন্ধন নেই’ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৮ সালে দেশ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। যান জার্মানিতে। সেখানে মাস তিনেক থাকার পর যান লন্ডনে। প্রায় চার বছর ইংল্যান্ডের শহরে-বন্দরে ঘুরে, ফিরে আসেন বাংলাদেশে। যােগ দেন দৈনিক সংবাদে। কিন্তু বেশি দিন কাজ করতে পারেন নি। ১৯৮২ সালের শেষে এক শীতার্ত রাতে আবার পাড়ি জমান। লন্ডনে। সেখান থেকে মার্কিন মুলুকে। ২০ বছর বস্টনে থাকার পর কবি শহীদ কাদরী ২০০৪ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিউইয়র্কে বসবাস করেন। মৃত্যু : ২৮ আগস্ট ২০১৬, নিউইয়র্ক সিটি। নাজমুন নেসা পিয়ারি, কবি, অনুবাদক ও গবেষক, সম্পাদক দীর্ঘদিন ধরে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করছেন দেশে ও বিদেশে। বর্তমানে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। পুরস্কার : বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ অর্জন করেছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার ২০১৬।