এ এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি! বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের যুগেও বিশ্ববাসী এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুজীবের কাছে অসহায় হয়ে গৃহবন্দি। নভেল করোনা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট অসুখটির নাম কোভিড-১৯ বা সংক্ষেপে করোনা। তবে করোনা কেবল একটি অসুখ বা অতিমারি নয়, একটি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক অভিঘাতও যাতে থমকে গেছে মানুষের জীবন ও জীবিকা। থমকে গেছে চাকা—গাড়ির আর অর্থনীতির। শত পদক্ষেপ সত্তে¡ও একদিকে যেমন বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা তেমনই বেড়েছে মৃত্যু। এই থমকে যাওয়া, চমকে যাওয়া সময়কে ধারণ করেছেন ব্রত রায়। তাঁর ‘আমার ফেমিলি যেন থাকে দুধেভাতে’ ছড়াগ্রন্থ আতঙ্কিত, বিপন্ন মানুষের মনের ভেতরের ছবি—যে ছবি কোনো এক্সরেতে ধরা পড়ে না। সেখানে আছে স্বার্থপরতা, সুযোগসন্ধান, মমত্ব, আছে প্রাত্যহিক জীবনের অকিঞ্চিৎকর খুঁটিনাটি। আছে শঙ্কা, ভীতি, অনিশ্চয়তা, বিচ্ছেদ ও বিচ্ছিন্নতা, থ্রিল, এবং আরও নানান অনুভূতির মিশেল। করোনামলে লেখা এই ছড়ার অনেকগুলোই জননন্দিত হয়েছে। একটি ছড়া ভাইরাল হয়ে অত্যন্ত আলোচিত হয়েছিল, অগণিত মানুষ নামে-বেনামে শেয়ার করেছেন সেটিকে। ‘আমার ফেমিলি যেন থাকে দুধেভাতে’ নিছক একটি ছড়ার বই নয়। একটি দলিল। ছন্দহীন সময়ের এক ছন্দবদ্ধ দলিল। আমার ফেমিলি যেন থাকে দুধেভাতে শাস্ত্রে যতই থাকতে বলুক মানুষের পাশাপাশি দিনের শেষে তো আমরা কেবল নিজেকেই ভালোবাসি। আমরা ছাপোষা সংসারী লোক—ছেলেমেয়ে-বউ-স্বামী— বাকি দুনিয়াটা গোল্লায় যাক—এইটুকু শুধু দামি। সে কোন আমলে এক পাটুনি যা বলে গেছে জোড়হাতে— আপামর এই বাঙালি সমাজ ভরসা রেখেছে তাতে!