মারি স্ক্লোদভস্কা কুরি পোল্যান্ডের ওয়ারশ শহরের বাসিন্দা। স্কুলের শেষ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর উচ্চশিক্ষার পথ বন্ধ। ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের প্রবেশাধিকার নেই। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বা ফ্রান্সের প্যারিস শহরে গিয়ে পড়াশোনা করার আর্থিক সংগতি নেই। শুরু করলেন গৃহশিক্ষিকা ও গৃহপরিচারিকার কাজ। প্রায় সাত বছর এই কাজ করে কিছু সঞ্চয় নিয়ে গেলেন প্যারিসে। ভর্তি হলেন বিখ্যাত সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিষয় নিলেন প্রকৃতিবিজ্ঞান ও গণিত। অতি সাধারণ একঘর ভাড়া নিয়ে প্রায়ই অর্ধাহারে থেকেছেন। প্যারিসের তীব্র শীতের রাতেও ঘর গরম করার কয়লা কিনতে পারছেন না। শীতবস্ত্রও প্রায় কিছুই নেই। ঘরের বিদ্যুতের খরচ কমাবার জন্য রাতে শহরের লাইব্রেরিতে বসে পড়াশোনা করেন। এইভাবে দুই বছর কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষায় প্রকৃতিবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। বিশ্বের প্রথম মহিলা হিসেবে বিজ্ঞানে ডক্টরেট হয়েছেন। দুবার বিজ্ঞানের দুটি বিষয়ে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন। এই ব্যাপারেও বিশ্বের একমাত্র বিজ্ঞানী তিনি। মাত্র এগারো বছরের বিবাহিত জীবন শেষে নোবেলজয়ী স্বামী পিয়ের কুরিকে হারিয়েছেন। দুই মেয়ে আইরিন ও ইভকে নিজের মতো করে গড়ে তুলেছেন। আইরিন তাঁর বিজ্ঞানী স্বামী ফ্রেডেরিক জুলিও-র সঙ্গে নোবেল পুরস্কার জয় করেছে। তখনকার ‘লিগ অব ন্যাশনস' (আজকের জাতিসংঘ)-র সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সের আহত সৈনিকদের সেবায় অনবদ্য অবদান রেখে মাতৃসমা হয়ে উঠেছেন। তাই তো তিনি মাদাম কুরি। সাবলীল ভাষায় লেখা বইটি পড়লে অনন্য বিজ্ঞানী মাদাম কুরি সম্পর্কে বিস্তৃত জানা যাবে।
পূর্ণেন্দুকান্তি দাশের জন্ম ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ জানুয়ারি। বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলায়। সিলেট শহরের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে রসায়ন বিষয়ে অনার্স নিয়ে তিনি বিএসসি এবং একই বিষয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে আগরতলার মহারাজা বীরবিক্রম মহাবিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রায় তেত্রিশ বছর শিক্ষকতা করে ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের ৩১ জানুয়ারি অবসরগ্রহণ করেন। কিছুকাল তিনি ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবেও পড়িয়েছেন। শিক্ষক-জীবনের সাফল্যের জন্য ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরারাজ্য সরকার তাঁকে 'আদর্শ শিক্ষক' হিসেবে সম্মানিত করেছে। শিক্ষক-জীবন থেকেই তিনি বিজ্ঞান-আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। দীর্ঘকাল 'ত্রিপুরা কেমিক্যাল সোসাইটি'র সাধারণ-সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বিজ্ঞানের নানা বিষয়ের ওপর চল্লিশটিরও বেশি আলোচনাসভায় বক্তৃতা দিয়েছেন। প্লুটো আর গ্রহ নয়-বামনগ্রহ মাত্র, পৃথিবীর আকাশে ধূমকেত' জগদীশচন্দ্র-ফিরে দেখা, বিষয় বিজ্ঞান, আমার কাল আমার ভুবন ও সিলেটের ওপর একটি বইসহ বারোটি গ্রন্থ তাঁর আগেই প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর যুগে যুগে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া নামের প্রবন্ধটি ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে বিহার রাজ্যের শিক্ষা বোর্ডের নবম শ্রেণির পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।