চীনা সমাজের গভীরে কবিতা ছড়িয়ে রেখেছে বিস্ময়কর শেকড়। চীনে কবিতাকে উচ্চতর শ্রেণির বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। অতি প্রাচীনকাল থেকে চীনা কবিগণ সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়ে এসেছেন। কনফুসিয়াসের দর্শন ও মূল্যবোধ চীনা সমাজকে যেমন প্রভাবিত করেছে তেমনি সাহিত্যের আশ্চর্য রূপায়ণের ক্ষেত্রও করেছে প্রস্তুত। কনফুসিয়াস স্কুলের অ্যানালেক্টস কাব্যের গুণাভরণ উন্মোচন করেছে; কবিতা আত্ম-উন্নয়নের উপকরণ, রাষ্ট্রের অবস্থা অবলোকনের উপায় এবং অন্তর্গত দিগন্ত সম্প্রসারণের শিল্পকৌশল হিসেবে মূল্যায়িত হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব দ্বাদশ শতকে ‘শি জিং’ বা কবিতার বই রচিত হলেও ট্যাং যুগে অর্থাৎ ৬১৮-৯০৭ খ্রিস্টাব্দ কালপরিসরে সংসিদ্ধ হয় চীনা কাব্যাদর্শের রেনেসাঁস। ট্যাং যুগে ২২০০ জন কবি উপহার দেন প্রায় ৫০ হাজার কবিতা যেগুলো ভাব, বিষয় ও ছন্দে বিচিত্র; চিত্রকল্পস্ফুটতা ও প্রতীকতায় অপ্রতিরূপ। সে যুগে সম্রাট, প্রশাসক, সওদাগর, গবেষক, যোদ্ধা, নারী, শিশু, সন্ন্যাসী, টাওয়িস্ট, যাজক, পরিব্রাজক, ভৃত্য, গণিকা সকলেই কাব্যচর্চা উপভোগ করতেন। সংস্কৃতির প্রশান্ত ধারায় সমাজ স্নাত হতো বলে অভাবনীয় মানস সম্পদে ট্যাং যুগ পূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রথম প্রকাশকালে গ্রন্থটিতে ৬৩টি ট্যাং কবিতার অনুবাদকর্ম সন্নিবেশিত ছিলো। এ সংস্করণে মোট অনূদিত কবিতার সংখ্যা ৮০। অন্তর্গত আনন্দের উৎস হিসেবে পাঠক ট্যাং কবিতার দিকে ফিরে তাকাতে পারেন।
কবি, গবেষক ও অনুবাদক ড. গৌরাঙ্গ মোহান্ত ১৯৬২ সালের ৭ জানুয়ারি লালমনিরহাট জেলার অন্তর্গত লালমনিরহাট সদর উপজেলার দেউতি নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গৌরাঙ্গ মোহান্ত শৈশব ও কৈশোর কাটিয়েছেন লালমনিরহাট জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ১৯৮৩ সালে অনার্সসহ বি এ ও ১৯৮৪ সালে এম এ পাশ করেন। তিনি ভারতের দার্জিলিং এর নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০১ সালে ইংরেজি সাহিত্যে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভের বিষয় ‘Robert Frost: A Critical Study in Major Images and Symbols’। গৌরাঙ্গ মোহান্ত প্রধানত কবিতা, প্রবন্ধ ও অনুবাদকর্মের মধ্যে শৈল্পিক অনুভব সঞ্চারের পথ খোঁজেন। ‘আধিপ্রান্তরজুড়ে ছায়াশরীর’ (২০০৯) তাঁর প্রথম কাব্য, দ্বিতীয় কাব্য ‘শূন্যতা ও পালক প্রবাহ’ (২০১২)। তাঁর কাব্য ‘ট্রোগনের গান’, নির্বাচিত কবিতাগ্রন্থ ‘জলময়ূরের শতপালক’, চীনা ট্যাং যুগের কবিতার অনুবাদ গ্রন্থ ‘ঝলকে ওঠা স্বপ্নডাঙা’ (২০১৬), প্রমগè কবিতাবলি (২০১৭) ও নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ গ্রন্থ “ÒA Green Dove in Silence” (২০১৮) নয়াদিল্লি থেকে সালে প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রণিধান যোগ্য গবেষণা গ্রন্থ 'Robert Frost: A Critical Study in Major Images and Symbols' ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য সম্পাদিত গ্রন্থসমূহ- ‘বেগম রোকেয়া স্মারকগ্রন্থ’ (যৌথ, ২০০৫) ও ‘পুথি রহিব নিশানী: হেয়াত মামুদ’ (যৌথ, ২০০৬)। কর্মসূত্রে তিনি সরকারি চাকুরে; বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন উচ্চ শিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কর্মরত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত, দুসন্তানের জনক। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গৌরাঙ্গ মোহান্ত দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। কবি গৌরাঙ্গ মোহান্ত তাঁর সৃষ্টি কর্মে অকপট উচ্চারণের ব্যঞ্জনায় নিয়ত ঘটাতে চান সত্তার বিশুদ্ধায়ন। গভীরতর শিল্প সৃষ্টির ভেতর দিয়ে তিনি প্রকাশ করতে চান জীবন সত্য।