মুখবন্ধ কবিতার এই বইটির মধ্য দিয়েই একজন কবির কাজের সাথে আমার পরিচয় যিনি বৃহত্তর পরিসরে পঠিত হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। পড়তে গিয়ে গোড়া থেকেই একজন পাঠকের নজরে আসে রেজার ভাষার জোর, বিদ্রুপের তীক্ষè খোঁচা আর আত্মতৃপ্ত দুর্বোধ্যতা থেকে কবিতাকে দূরে রাখার আন্তরিক চেষ্টা। রেজা কবিতা লেখেন একজন নাগরিক হিসেবে যিনি আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির নানা অসংগতি নিয়ে ভাবেন এবং তার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পাঠকের মনে একটি সুস্পষ্ট অভিঘাত তৈরি করতে চান। সাহিত্যিক ঐতিহ্যের প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে রেজার কবিতা আমেরিকার বিট জেনারেশন, কোলকাতার হাংরি জেনারেশন এবং ঢাকার স্যাড জেনারেশনের কথা মনে করিয়ে দেয়। বাংলাদেশি ব্যঙ্গাত্মক কবিতাও একটি সমৃদ্ধ ধারা আব্দুল গনি হাজারী প্রমুখ কবিরা যে ধারার অন্যতম প্রতিনিধি। রেজাকে এই ধারার প্রেক্ষাপটেও পড়া যেতে পারে। এ বইয়ের কবিতাগুলোর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হচ্ছে এদের ভাষার সহজবোধ্যতা। শব্দচয়ন কথ্য তো বটেই, ক্ষেত্রবিশেষে একেবারে মেঠো, যা কিনা মধ্যবিত্তকে চমকে দেওয়ার সুস্থ ইচ্ছেরই পরিচায়ক। জীবনের সমালোচনাকে কার্যকরী করতে একজন কবির হাতে এটি একটি মোক্ষম হাতিয়ার। একই সঙ্গে রেজা একজন পুরোদস্তুর সাহিত্য-সচেতন কবি যিনি ডঁঃযবৎরহম ঐবরমযঃং-এর ক্যাথরিন, রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর আর্জেন্টিনিয়ান অনুরাগী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে তার কবিতায় কথক হিসেবে হাজির করেন। প্রথমবারের মতো যারাই রেজার কবিতা পড়বেন, যেমনটি আমি পড়ছি, তাদের প্রত্যেকেরই মনে হবে এই কবি যেন লেখালেখি চালিয়ে যান কেননা রেজার কণ্ঠস্বর এমনই একটি কণ্ঠস্বর যেটিকে খুব সহজে এড়িয়ে যাওয়া যায় না।