ভূমিকা: একক বাংলা লতিফা কাব্য গ্রন্থ :“ঊর্ণনাভ” কবি মাহ্ফুজা আহমেদ (লিটু) ---------------------------- কবি মাহ্ফুজা আহমেদ (লিটু) ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। এ পর্যন্ত তিনি এক শতাধিক অনলাইন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এবং ইতিমধ্যেই তিনি অনলাইন সাহিত্য জগতে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি আমায় জানান তাঁর প্রথম বাংলা লতিফা গ্রন্থ ‘ঊর্ণনাভ’ প্রকাশ করতে চলেছেন পাণ্ডুলিপি পাঠালেন লেখা পড়তে আমার ভীষণ ভালো লাগে আর সে যদি বাংলা লতিফা হয় তবে তো সোনায় সোহাগার মতো কবি মাহ্ফুজার একক বাংলা লতিফা গ্রন্থ ঊর্ণনাভ নিয়ে কিছু বলার আগে সংক্ষেপে বাংলা লতিফা সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করব প্রথমেই একটু বলে নেই ‘লতিফা’ আসলে কী? লতিফা শব্দটি আরবি এটা সহজীকরণ করে বলা যায় লতিফা হলো ছোট্ট, মনোরম, আকর্ষণীয়, নান্দনিক, সুখকর, ফুল্ল, প্রভা-স্মিত, আনন্দদায়ক কোনো কিছু তাহলে বাংলা লতিফা কী? বাংলা লতিফা আসলে একধরনের অণুকবিতা। অন্যান্য ভাষার মতো বাংলা ভাষাতেও বিভিন্ন ধরনের অণুকবিতার চল রয়েছে। পথিকৃৎ কবিদেরও অনেকেই দ্বিপদী, ত্রিপদী, চৌপদী, পঞ্চপদী, ছয়পদী, অষ্টপদী কবিতা লিখে খ্যাতি অর্জন করেছেন।... বাংলা ভাষায় প্রচলিত ধারার ছয়পদী বা ষটপদী কবিতা ধারার সাথে কিঞ্চিৎ ব্যতিক্রমী ব্যঞ্জনার কবিতা বাংলা লতিফা সবচেয়ে বড় কথা যেহেতু লতিফা শব্দটি আরবি আর এখানে এগুলো বাংলা ভাষায় লেখা হয় তাই নামকরণে বাংলা লতিফা বলা হয় এটা পরিষ্কার হওয়া দরকার বাংলা লতিফা আরবি ভাষা বা লিখিত কবিতা বা হাস্যরস লেখার সঙ্গে কোনো সংগ্রব নেই বাংলা লতিফা প্রথম প্রচলন করেন ডক্টর অনুপ দত্ত। পশ্চিমবঙ্গ ভারতে সেই থেকে তার হাত ধরে ফেসবুক গ্রুপ বাংলা লতিফার মাধ্যমেই ২০১৩ সালের শেষের দিকে এই কাব্যধারা সূচিত হয়। সঙ্গে ছিলেন চারজন- তার মধ্যে ডক্টর সাঈফ ফাতেউর রহমান অন্যতম বাংলা লতিফা এখন উভয় বাংলায়, এমনকি ভারত এবং বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরেও বাংলাভাষী কবিদের মধ্যে এটি সাড়া জাগিয়েছে। শত শত কাব্যপ্রেমী নিয়মিত এখন বাংলা লতিফা লিখছেন। কলকাতা এবং বাংলাদেশের স্বনামধন্য কবিরা নিয়মিত লিখছেন ও তাঁদের উপদেশ দিচ্ছেন আরও উন্নত চিন্তাধারা প্রকাশের। কবি মাহ্ফুজা বহুদিন কবিতা লিখছেন, নরম নিজস্ব কণ্ঠ আছে একটি কবি- মনের পরিচিতি ছড়িয়ে আছে পাতায় পাতায়/সবার অলক্ষ্যে কবি মাহ্ফুজার একটা নিজস্ব জগৎ গড়ে উঠেছে, যেখানে সে কবি। পাতার পর পাতা ভরিয়ে গেছে সে নিজের সুখ দুঃখ উচ্ছ্বাস প্রতিবাদের কাহিনিতে। বটগাছের শিকড় যেমন মাটিকে শুষে পত্রপল্লবে নিজেকে সুশোভিত করে, কবি মাহ্ফুজা তেমনি করে বাংলা শব্দভান্ডারকে শুষে নিংড়ে নিয়ে কবিতাকে সজ্জিত করেছেন। কবি মাহ্ফুজার ঊর্ণনাভ পড়তে পড়তে আমাকে মুগ্ধ করল তার লিখনশৈলী, শব্দচয়নে মুনশিয়ানা, লতিফার গল্প পরিবেশনে ছন্দ বোধ এবং শব্দবিন্যাসের অসম্ভব দক্ষতা লক্ষ করলাম তার ভাবনা শিরোনামে বাংলা লতিফাটি একটা গানের সুর সমাদৃত হয়ে বাংলা লতিফা গান হয়ে দাঁড়াল রূপের পসর - আঁখি ঘোর প্রথম দেখার ক্ষণ, হৃদয় ছুঁয়ে - নেশার ভুঁইয়ে দিয়েছিলাম তোমায় মন (বাংলা লতিফা --আঁখি) অনুভবের বৈচিত্র্য এবং প্রকাশভঙ্গীর সারল্য কখনো কখনো কবিতার সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। কবি মাহ্ফুজার অনেক কবিতাই তার উদাহরণ। তাঁর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য স্বতঃস্ফূর্ততা ও স্বচ্ছতা। সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাঠককে স্পর্শ করেছে। কবিতাগুচ্ছের মধ্যে যে ঘন আবেগের স্ফুরণ আছে তা প্রচলিত কবি স্তুতির চেয়ে অনেকটাই স্বতন্ত্র। তিনি যখন বলেন, কালের কলি - দিয়েছে বলি, নৈতিকতার বয়ান চাষ, বিষাক্ত ঝড় - ক্লেদাক্ত নর, দানবীয় উন্মুক্ত বিলাস। চেতনার চর - করো উর্বর, অহেতুক সময় কেন ক্ষেপণ; বোধিক জীবন - করিয়া কর্ষণ, সত্যের বীজ করো রোপণ।.(বাংলা লতিফা -- কালের কলি) সাধারণত : কবিতায় আমরা বিভিন্ন উপায় ও অনুষঙ্গের ওপর ভর দিয়ে চিন্তাকে হাজির হতে দেখি, চিত্রকল্প-উপমা বা নানাবিধ অন্যান্য অলংকারাদির আয়োজনে সেই চিন্তা সামনে এসে দাঁড়ায় পাঠকের কিংবা পাঠক নিজেই হয়তো কবিতা পড়তে পড়তে একটা নিজস্ব হয়তো কবির ভাবনা থেকে সবটাই আলাদা চিন্তা বা ভাবনা দাঁড় করিয়ে দেয়। কিন্তু কবি মাহ্ফুজার কবিতায় যেন ধারণাটা উল্টো.. বলতে চাই, তিনি চিন্তার ওপর ভর দিয়েই চিত্রকল্প প্রভৃতি যেসব আবশ্যক কবিতার জন্য সেটাই দাঁড় করান। অন্য একটা ব্যাপারও মনে হয় আমার, কবি মাহ্ফুজার প্রকল্পিত কাঠামোতে নিবিড় নয়নে দেখতে দেখতে, একটা কবিতায় আমরা বস্তুর বা ভাবের বা ভবের বা অনুভবের শব্দ-স্বাদ এবং ধ্বনিচিত্র সচরাচর উপহার পাই, কবি মাহ্ফুজার কবিতায় আমাদের মনে হতে পারে, কবি স্বনির্ভর কবিতা লেখেন- কিন্তু না, ব্যাপার মোটেও সেটা নয়। এ সমস্ত বাইরে রেখে একটা কবিতায় কেমন করে চিন্তার রৌদ্র-কুচি ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, সেই শল্য চিকিৎসা কবি মাহ্ফুজার ভেতরে বিশেষভাবে জ্ঞান লভ্য এবং উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন। কবি মাহ্ফুজার শব্দ নিয়ে খেলা সাবলীল ও সহজাত মনে হয় ঈশ্বরের দয়ায় তার লেখায় এমন বহু উদাহরণ পাওয়া যায় কখনও সেই অদেখা প্রেমিককে ছুঁয়ে দিতে পারেন অনায়াসে শব্দমধুরতা তার কলমে যেন ঝরনা হয়ে বলে-----
কবি মাহ্ফুজা আহমেদ (লিটু)। পিতা- মৃত মহিউদ্দিন আহমেদ (বিশিষ্ট ব্যবসায়ী)। মাতা- জেব-উন নিসা আহমেদ (নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যলয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা), স্বামী- মোঃ মোজাহার আলী শোভা (জেলা মুন্সীগঞ্জ, গ্রাম মদনখালী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক)। কবির ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বড় হয়ে ওঠা। তিনি ১৩ই এপ্রিল ১৯৬১ইং সালে খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা জেলার দোহার থানা, গ্রাম লটাখোলা বড়বাড়ি (আদি নিবাস) ও নবাবগঞ্জ থানা, গ্রাম কাশিমপুর কবির পৈত্রিক নিবাস। ১৯৭৭ইং সালে নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি প্রথম বিভাগে পাশ করেন। ১৯৭৮-৭৯ইং শিক্ষাবর্ষ দোহার নবাবগঞ্জ কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং স্বামীর ও নিজের একাগ্র আগ্রহে ১৯৯৭ইং সালে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। তিনি এক পুত্র ও তিন সন্তানের সার্থক জননী। সন্তানেরা নিজ নিজ পরিমন্ডলে প্রতিষ্ঠিত। কবি ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “আমি সুদূরের পিয়াসী”, “শ্রাবণ অভিসার” ও “যে প্রেম নীরবে কাঁদে”। তন্মধ্যে “শ্রাবণের অভিসার” ভিন্নমাত্রা এবং “যে প্রেম নীরবে কাঁদে” কবি ও কবিতার ভুবন সংগঠন থেকে সেরা কাব্যগ্রন্থ হিসাবে পুরস্কৃত হয়। “যে প্রেম নীরবে কাঁদে” কাব্যগ্রন্থটি কলকাতা ১৭টি রাজ্য থেকে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে। তিনি সম্পাদনা করেন ১) জ্যোৎস্না বৃষ্টি, ২) হৃদয় পারাপারের সাঁকো ৩) অদীপ সাঁঝে প্রদীপ শিখা ৪) নিঃসঙ্গতার কান্না। এবং ১৩টি যৌথ কাব্যগ্রন্থ: ১) জ্যোৎস্না বৃষ্টি ২) হৃদয়ের অশ্রু কথা, ৩) কবি কঙ্কণ, ৪) সিনথিয়ায় এক ঝাঁক তারা, ৫) হিরন্ময় কাব্যের বেলা ভূমি, ৬) বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, ৭) কাব্যের ভেলা, ৮) কাব্যের নোঙর, ৯) মানচিত্রের বিনিদ্র রজনী, ১০) কবিতাগুচ্ছ, ১১) শত কবির কাব্য কথা, ১২) শিশিরে ভেজা কার্ণিশ, ১৩) করোনাক্রান্তি, ১৪) মনুষ্যত্বের প্রতিবিম্ব, ১৫) হৃদয়ের স্বপ্নকাব্য, ১৬)স্বপ্নের ডানায় কাব্য, ১৭) সীমান্ত বন্ধন, ১৮) কাব্য প্রজন্ম। লেখালেখি ও সাংস্কৃতি চর্চার কারণে তিনি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং বাংলা কবিতাঙ্গন সংগঠন থেকে “জাতীয় মননের কবি আল মাহমুদ আজীবন সন্মাননা” ও “কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ” সন্মাননা স্মারক, গাঙচিল সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ থেকে “মহিউদ্দিন স্মৃতি স্মারক আজীবন সদস্য সন্মাননা” তে ভূষিত হয়েছেন। এই পর্যন্ত তিনি এক শতাধিক অনলাইন সন্মাননায় ভূষিত হন। ইতিমধ্যেই তিনি অনলাইন সাহিত্য জগতে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন।