সোনামণিরা তোমরা জানো কি আমাদের দেশে বীরশ্রেষ্ঠ কতজন এবং কারা? কেনই বা তাঁদেরকে বীরশ্রেষ্ঠ বলা হয়? তাহলে শোনো তোমরা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসীম বীরত্ব, অতুলনীয় সাহস এবং নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার নিদর্শন যারা স্থাপন করেছেন তাঁদের ৭ জনকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব দেয়া হয়েছে। এটিই আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে বড়ো পুরস্কার। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যারা আমাদের জন্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন এবং নিজেদের জীবনও বিলিয়ে দিয়েছেন তাদের মধ্যে এই ৭ জনের আত্মদান ছিল সবার ওপরে। আর তাঁরা হচ্ছেন, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ, বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ। বন্ধুরা, তোমরা জানো, পাকিস্তান বাঙালি জাতির ওপর নির্যাতন চালাত। কথায় কথায় গুলি করে বাঙালি হত্যা করত। আমাদের সমস্ত সম্পদ লুটে নিয়ে যেত পাকিস্তানে। এই অন্যায়—অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান। গোটা জাতিকে তিনি একতাবদ্ধ করে ভোটের দাবি আদায় করেন। ভোটে বিজয়ীও হলেন। কিন্তু তাঁর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না—করে নির্যাতনের পথ গ্রহণ করে। সবশেষে গণহত্যা করে বাঙালি জাতিকে নিঃশেষ করে দিতে চায়। এর প্রেক্ষিতেই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারপরই তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানি মিলিটারিরা তখন থেকেই শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার যুদ্ধ। ইতিহাসে যা ‘মুক্তিযুদ্ধ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বলেই আমরা ওই দিনকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করি। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্য বাহিনী পরাজয় মেনে আত্মসমর্পণ করলে আমাদের স্বাধীনতার বিজয় হয়। তাই ওই দিনকে ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করছি আমরা। বন্ধুরা, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের দেশের ৩০ লাখ মানুষ খুন করেছে, নির্যাতন করেছে ৪ লাখ নারীকে। আর যুদ্ধ করে করে শহিদ হয়েছেন আরও অনেকেই। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ৭ জনকে বীরশ্রেষ্ঠ, ৬৮ জনকে বীর উত্তরম, ১শ’ ৭৫ জনকে বীর বিক্রম এবং ৪শ’ ২৬ জনকে বীরপ্রতীক খেতাব দান করেন। এই বইয়ে আমি তোমাদেরকে জানাবÑশুধু ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের যু্দ্ধকথা। বইটি পাঠ করে যদি তোমরা এই ৭ বীরশ্রেষ্ঠ সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান লাভ করো, তবেই আমি আনন্দ লাভ করব। তোমরা সবাই ভালো থেকো বন্ধুরা। মুক্তিযুদ্ধের বই পড়ো। মুক্তিযুদ্ধকে জানো। দেশকে ভালোবাস। তাহলে কাকে দিয়ে শুরু করব বন্ধুরা? মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল ১৯৭১ সালেÑসে কথা জেনে গেছো তোমরা। নয় মাসের এই যুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ ৭ জনের মধ্যে সবার আগে যিনি শহিদ হয়েছেন তাঁকে দিয়েই গল্প শুরু করি। তোমরা কি বলো? এইক্রমে প্রথম নাম মুন্সি আব্দুর রউফ। তারপর ক্রমান্বয়ে মোস্তফা কামাল, মতিউর রহমান, নূর মোহাম্মদ শেখ, হামিদুর রহমান, রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। আমরা গল্পে চলে যাই। একে একে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠকে নিয়ে তোমাদের জন্য প্রস্তুত হলো সপ্তর্ষির সাত উজ্জ্বল বীরশ্রেষ্ঠ’ নামীয় পাণ্ডুলিপি। এটিকে বই হিসেবে প্রকাশ করার দায়িত্ব নিজে থেকে গ্রহণ করেন ‘বুনন’ প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী খালেদ উদ্দিন। তোমাদের জন্য এই বইটি প্রকাশ করায় আমার এবং তোমাদের পক্ষ থেকে তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।
তাজুল মােহাম্মদ সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ১৯৭২ সালে। আর মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার কাজে হাত দেন ১৯৭০ সালে। তখন থেকেই লেখালেখি করছেন এ বিষয় নিয়ে। ১৯৮৯ সালে। প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয় “সিলেটে গণহত্যা'। এ গ্রন্থের সুবাদে ব্যাপক পরিচিতি। সিলেটের যুদ্ধ কথা’-সহ আরও চার-পাঁচটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৪ সাল অবধি। সিলেটের গণহত্যা নিয়ে ব্যাপক আলােচনার কারণেই হয়তাে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। ব্রিটেনের টুয়েন্টি টুয়েন্টি টেলিভিশনের। যােগাযােগ করে সে টিভি কর্তৃপক্ষ। নিয়ােগ করে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে গবেষণার কাজে। ৯ মাসের গবেষণার ফল হিসেবে নির্মিত হয় ‘দা ওয়ার ক্রাইম ফাইল’ নামক প্রামাণ্য চিত্র। যা সাড়া জাগিয়েছিল বিশ্বের দেশে-দেশে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল বাংলাদেশে, ব্রিটেনে, যুক্তরাষ্ট্রে। এর আগেই তাজুল মােহাম্মদের ওপর হুমকি আসে মৌলবাদী, যুদ্ধাপরাধী এবং জামায়েত শিবিরের পক্ষ থেকে। এক সময় দেশ ছেড়ে পালাতে হয় তাকে। দেশের বাইরে থেকেও আন্দোলন করেছেন তিনি। বসতি গড়েছেন কানাডায়। বছরে কয়েক মাস দেশে অবস্থান করে চালান গবেষণাকর্ম। বাকি সময় কানাডায় বসে লেখালেখি করেন। গ্রন্থ। প্রকাশিত হয়েছে ষাটের অধিক। মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার জন্য লাভ করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। পেয়েছেন ইংল্যান্ডের টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়র অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু সম্মাননা। গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন যুবকের ন্যায়। তাজুল মােহাম্মদের জন্মস্থান মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়। পরে থিতু হয়েছিলেন সিলেট শহরে।