বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতা দেননি, রাষ্ট্রের যাবতীয় প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। দেশ স্বাধীন করার পর আপামর মানুষের আকাঙ্ক্ষার রাষ্ট্র গড়ে তোলার কাজে হাত দেন বঙ্গবন্ধু। সর্বপ্রথম যে উদ্যোগগুলো নিয়েছিলেন তার অন্যতম ছিল সংবিধান প্রণয়ন। এ লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ২০ মার্চ ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ‘ জারি করা হয়, যে পরিষদে স্থান পান ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব পাতকস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিবৃন্দ ।br স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বশীল জনপ্রতিনিধিদের সুসমন্বিত কমিটি এদেশের মানুষের দীর্ঘলালিত স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রচনা করেন খসড়া সংবিধান। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর কার্যকর হয় আমাদের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত অধিকারসমূহের শাশ্বত রক্ষাকবচ- স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পবিত্র গঠনতন্ত্র। গণপরিষদে সংবিধানের ওপর দেওয়া বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু বলেন, এই সংবিধান শহীদের রক্তে লিখিত, এ সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে।br কিন্তু সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শচ্যুত রাষ্ট্রে সংবিধান লঙ্ঘন শুধু নয়, এর প্রণেতাদেরও আক্রান্ত হতে হয়েছে। গণতন্ত্রহীন দুই দশকে এই ব্যক্তিত্বদের ভূমিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ। ফলে তাঁদেরকে ঘিরে বিস্মৃতি তৈরি হয়েছে। এই গ্রন্থে সাংবাদিক আমীন আল রশীদের দীর্ঘ শ্রমসাধ্য অনুসন্ধানে ও একাগ্র গবেষণায় সংবিধান-প্রণেতাদের ভূমিকা ও জীবন উঠে এসেছে। একই সাথে এতে অনেক দুর্লভ ছবি সন্নিবেশিত হয়েছে যেগুলো আগে কখনও প্রকাশিত হয়নি। বইটি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রারম্ভিক পর্বের ইতিহাস ও সময় সম্যকভাবে বুঝতে সহায়ক হবে।