আমাদের অনুসন্ধানী মনে প্রতিনিয়ত অসংখ্য প্রশ্ন জাগে। মন তখনই নিবৃত হয়, যখন মনের সেই প্রশ্নগুলোর একটি যুক্তিসংগত জবাব মেলে। এই প্রশ্ন জাগার বিষয়টি মস্তিষ্কপ্রসূত। যে মস্তিষ্ক বিকাশ হয়েছে হাজার হাজার বছর ধরে, অনেক জ্ঞান-অভিজ্ঞতার মিশেলে। এর সবটাই বিজ্ঞানের এক অভূতপূর্ব খেলা। বিজ্ঞানের আঙিনায় প্রবেশ করলেই তা বুঝতে পারা যায়। তার জন্য অবশ্য বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার দরকার পড়ে না। শুধু দরকার জানার অদম্য বাসনা। বিশাল এই জগতে এখন পর্যন্ত মানুষই সব থেকে বুদ্ধিমান প্রাণী। তার আছে সীমাহীন ঔৎসুক্য কিন্তু হাতে তথ্য নেই। সেই তথ্য হাতে পেলে তার অসাধ্য সাধন করার ক্ষমতা আছে। নিজের পরিবর্তনের জন্যও তথ্য গুরুত্বপূর্ণ। এই তথ্য জানার জন্যই আমাদের মনে প্রশ্নের জন্ম হয়। একজন সাধারণ মানুষ প্রতিদিন দেখে বরফ পানিতে ভাসে বা সূর্য পশ্চিম দিকে অস্ত যায়; কিন্তু কেন বরফ পানিতে ভাসে অথবা কেনই-বা সূর্য পশ্চিম দিকে অস্ত যায় তার সঠিক কারণ হয়তো তার জানা নেই। বরফ বা সূর্যের এই কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে দেখতে দেখতে সে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। মনে করেছে, এটাই স্বাভাবিক। অলৌকিক। কিন্তু সেই ব্যক্তি যখন এই ঘটনা ঘটার কারণগুলি জানার জন্য প্রশ্ন করবে আর তার উত্তর পাবে, তখন কিন্তু তার মধ্যে একটা পরিবর্তন আসবে। সে তখন আর একে স্বাভাবিক বা অলৌকিক ভাববে না। বিজ্ঞানের এ রকম অতি সাধারণ দুই-একটি প্রশ্নের উত্তরেই কিন্তু আমাদের মন বিস্ফোরিত হয়। কৌতূহল তখন বেড়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, ‘বিজ্ঞান থেকে যাঁরা চিত্তের খাদ্য সংগ্রহ করতে পারেন, তাঁরা তপস্বী।’ বিজ্ঞানীদের মূলধন হলো কল্পনা। যাকে ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে একজন বিজ্ঞানীর গবেষণা বা তত্ত্বভাবনা। কিন্ত সব মানুষ তো আর বিজ্ঞানী হয় না। না হলেও তাদের কল্পনাশক্তি কিন্তু কম নয়। সেই কল্পনা শক্তি দিয়েই কিন্তু বিজ্ঞানের নানান বিষয়ে সে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারে। এর জন্য শুধু প্রয়োজন বিজ্ঞানকে দেখার জন্য দুটি চোখ। আধুনিক বিজ্ঞানমনষ্ক প্রজন্ম গঠনে বিজ্ঞানবিষয়ক বইয়ের বিকল্প নেই। বিজ্ঞান হলো এই পৃথিবীর সব থেকে বড় ‘আলোঘর’। এই ঘর প্রতিনিয়ত মানুষকে আলোকিত করে যাচ্ছে। সেই আলো ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে। মানুষের অন্তরে অন্তরে।